যে দুঃসহ বেদনার কথা জানিয়েছেন রোহিঙ্গা নারীরা
সিরাজুল ইসলাম, তেহরান থেকে : কথা ছিল রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঢাকার কূটনৈতিক তৎপরতা এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে ছোটখাট একটি কলাম লিখব। কিন্তু আল-জাজিরা টেলিভিশনের একটি সরেজমিন প্রতিবেদন সবকিছু পাল্টে দিল। আল-জাজিরার ওয়েবসাইটে নজর বুলাতে গিয়ে রোহিঙ্গা নারীদের ওপর যৌন সহিংসতা ও ধর্ষণের বীভৎস কাহিনীগুলো দেখলাম এবং আমি তাতে আঁতকে উঠলাম। বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে আল-জাজিরার নারী সাংবাদিক আনাতি একিনের তৈরি করা একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে মিয়ানমারের বর্বর সেনাদের অসভ্য ও কুৎসিত আচরণ এবং ধর্ষণের ভয়াবহ কিছু নমুনা। মিয়ানমারের সেনাদের বর্বরতার পর কোনোমতে জীবন নিয়ে পালিয়ে আসা কয়েকজন নারী তাদের জীবনের দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন এই আশায় যে, যদি আজকের কথিত এই সভ্য বিশ্ব কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়! যাহোক, আল-জাজিরার প্রতিবেদনটি দেখার পর লেখার বিষয়ে পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনলাম এবং সিদ্ধান্ত নিলাম এই ভয়াবহ ঘটনাগুলো আজ তুলে ধরি প্রিয় পাঠক বন্ধুদের সামনে। সে অনুযায়ী আল-জাজিরার সরেজমিন প্রতিবেদনটি তুলে ধরার চেষ্টা করছি। এ প্রতিবেদনের মাধ্যমে আরেকবার প্রমাণিত হলো- শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সু চি রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিয়ে সম্প্রতি যে বক্তৃতা দিয়েছেন তা নির্জলা মিথ্যা।…
বালুখালির শরণার্থী শিবিরে বাঁশ ও তারপলিন দিয়ে কোনো রকমে বানানো একটি কুঁড়ে ঘর। ২০ বছরের আয়েশা বেগম সেখানে বসে আছেন প্লাস্টিকের একটি মাদুরের ওপর।
কোলে এক বছরের ছেলে সন্তান গরমে হাসফাঁস করছে। বার বার তার মাথা, মুখে ও কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন গরম থেকে একটু শান্তি দেয়ার জন্য। এই রোহিঙ্গা শরণার্থী আয়েশা বললেন- “আমি ঠিক ১৩ দিন আগে ধর্ষিতা হয়েছি।”
এক সপ্তাহেরও কম সময় হলো আয়েশা বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছেন। তিনি জানালেন সেদিনের বীভৎস ঘটনা। তাদের বসবাস ছিল মিয়ানমারের বুথিডং শহরের কাছে তামি গ্রামে। তিনি জানলেন, সেই রাতে তার চার ননদ এবং তিনি রাতের খাবার খাচ্ছিলেন। এমন সময় গ্রামে হামলা হয় এবং মিয়ানমারের সেনারা তাদের বাড়িতে ঢোকে। ঢুকেই নারীদেরকে একটি রুমে যেতে বাধ্য করে। সেনারা আয়েশার কাছ থেকে তার ছেলে শিশুকে কেড়ে নেয় এবং ফুটবলের মতো করে লাথি মারে। এরপর সেনারা নারীদের বিবস্ত্র করে ফেলে। একজন সেনা তার গলায় ছুরি ধরে এবং ধর্ষণ শুরু করে। এভাবে ১২ জন সেনা পর্যায়ক্রমে আটক নারীদেরকে ধর্ষণ করে। আয়েশা মনে করেন- নরপিশাচদের এ নারকীয় তাণ্ডব কয়েক ঘণ্টা ধরে চলেছে।
মাথায় হাত রেখে আয়েশা বলেন, “আমি মনে করেছিলাম ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।” আয়েশা তার গাঢ় কালো চোখ বন্ধ করেন। আবার বলতে শুরু করেন, “আমি ভয় পাচ্ছিলাম আমার ছেলে বুঝি মারা গেছে।”
শরণার্থী শিবিরে আয়েশা যে কুঁড়ে ঘরটিতে আছেন সেখানে কিছু নেই; শুধু আছে এই প্লাস্টিকের পাটি। বাঁশের বেড়ায় তৈরি ঘরটিকে কালো প্লাস্টিকের দেয়াল তার প্রতিবেশীর ঘর থেকে আলাদা করেছে। আয়েশা বড়ই ক্লেশ কণ্ঠে জানালেন, তার আসতে আটদিন সময় লেগেছে।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার সময় তার দুই ননদ মারা গেছেন। তারাও ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। আয়েশা জানালেন, “তারা এত বেশি দুর্বল ও পীড়িত হয়ে পড়েছিলেন যে, তারা মারা গেছেন।”
এক মাসেরও বেশি সময় হলো মিয়ানমারে সেনাবাহিনী উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর বর্বর সামরিক অভিযান চালাচ্ছে। রোহিঙ্গারা এমন একটি সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী যাদেরকে দেশটির নাগরিক বলেই স্বীকার করে না মিয়ানমারের সরকার। পাশাপাশি তাদের কোনো মৌলিক অধিকারও নেই দেশটিতে। রোহিঙ্গাদের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকির ওপর হামলা চালিয়েছে- এমন অভিযোগ এনে গত ২৫ আগস্ট থেকে নতুন করে সামরিক অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনারা।
১৯৭০ এর দশক থেকে এ পর্যন্ত কয়েকবার এ ধরনের অভিযান চালিয়েছে মিয়ানমারের সেনারা। এসব অভিযানে রোহিঙ্গা নারীরা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চলেছে ভয়াবহ নির্যাতন। তাদের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয় এবং চালানো হয় হত্যাযজ্ঞ। সর্বশেষ চলমান সামরিক অভিযানকে জাতিসংঘ ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত বৌদ্ধ-সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ৫,০১,৮০০’র বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছেন। মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর আশপাশে গড়ে উঠেছে ঘনবসতিপূর্ণ শরণার্থী শিবিরগুলো। শরণার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। তাদের জরুরিভিত্তিতে আশ্রয়, খাদ্য, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং চিকিৎসা সেবাসহ মানবিক সাহায্য দরকার। শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নেয়া বহু নারী ও অবিবাহিতা মেয়ে মিয়ানমারের সেনাদের হাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
মিয়ানমারের বর্বরতা থেকে বেঁচে আসা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বহু নারী ও মেয়েকে ধর্ষণের পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। তারা নারীদের ওপর অত্যাচার, মারধর, অঙ্গহানি, বিবস্ত্র করে রাখাসহ নানা রকম ঘটনার কথা জানিয়েছেন।
আয়েশার মতো তামি গ্রাম থেকে আসা ২০ বছর বয়সী মোহসিনা বেগমও জানিয়েছেন, “সেনারা আমাদের বাড়িতে আসলো এবং তারা আমার বোনকে আলাদা করে নিল। সে ছিল খুব সুন্দরী। সেনারা তাকে যৌন হয়রানি করল এবং গ্রামের চেয়ারম্যান হস্তক্ষেপ করার আগ পর্যন্ত তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে।”
মোহসিনা ও তার পরিবার পালিয়ে আসার সময় ১৯ বছর বয়সী বোনটির মৃতদেহ দেখতে পান। কিন্তু তাকে কবর পর্যন্ত দিয়ে আসতে পারেন নি।
রাজুমার কাহিনী: “ওরা আমার ছেলেকে কেড়ে নেয় এবং গলা কেটে ফেলে”
তুলা তলি গ্রামে ৩০ আগস্ট চলে ভয়াবহ গণহত্যা। সেই হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে আসা ২০ বছর বয়সী রাজুমা জানিয়েছেন আরো কিছু ভয়াবহ ঘটনার কথা। মনে করা হয়- যেসব গ্রামে মিয়ানমারের সেনারা সবচেয়ে জঘন্য বর্বরতা চালিয়েছে তুলা তলি গ্রাম হচ্ছে তার অন্যতম।
কক্সবাজারের কুতুপালং স্কুলে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে একটি শরণার্থী শিবির। সেখানে বসে রাজুমা জানান- “গ্রামবাসীকে সাগরের বিচে নেয়া হয়।সেখানে নারী ও শিশুদের থেকে পুরুষদেরকে আলাদা করা হয়। এরপর পুরুষদেরকে গুলি করে হত্যা করা হয়। কাউকে কাউকে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয় এবং কাউকে কাউকে বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে মারা হয়।”
চার/পাঁচ জন সেনা পাঁচ থেকে সাতজন করে নারীকে আলাদা গ্রুপে ভাগ করছিল। এ সময় রাজুমা তারা ছেলে মোহাম্মাদ সিদ্দিককে ধরে রেখেছিলেন। রাজুমা জানান-“ওরা আমাকে অন্য চার নারীর সঙ্গে আলাদা করে একটি বাড়িতে নেয়। তারপর তারা আমার ছেলেকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নেয় এবং মাটির ওপর ছুঁড়ে দেয় এবং তার গলা কেটে ফেলে। নিজ হাতে তিনি তার সন্তানের মাথা কবর দিয়েছেন। কথাগুলো বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন রাজুমা।
হতভাগী রাজুমা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “একবার আমার ছেলের মা ডাক শোনার জন্য আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে।” রাজুমা জানান, “১০ বছর বয়সী আমার একটা ছোট ভাই ছিল। আমার খুবই দুঃখ হচ্ছে- সেনারা আমার ভাইকে নিয়ে নিল এবং আমি তাকে বাঁচাতে পারলাম না।” আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন রাজুমা।
রাজুমাকে আরো তিন মায়ের সঙ্গে একটি রুমে রাখে মিয়ানমারের সেনারা। সেখানে একটি টিনএজ মেয়ে ছিল এবং একজন ৫০ বছর বয়সী নারী ছিলেন। ওই বয়স্ক নারীকে বাদে মিয়ানমারের সেনারা সবাইকে ধর্ষণ করে। রাজুমাকে ধর্ষণ করে দুই সেনা; তিনি বলেন, এই পাশবিকতা চলেছে সম্ভবত দুই তিন ঘণ্টা ধরে।
এরপর সেনারা কাঠের লাঠি দিয়ে নারীদের প্রচণ্ড মারধরকরে। তারপর তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য সেনারা তাদেরকে ঘরের ভেতরে তালাবদ্ধ করে রাখে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়।
আগুনের তাপে রাজুমার জ্ঞান ফিরে আসে। তিনি বাঁশের বেড়া ভেঙে বের হতে সক্ষম হন এবং পালিয়ে যান। একটি পাহাড়ে একদিন লুকিয়ে ছিলেন। যখন তিনি বেরিয়ে আসেন তখন অন্যদিকে তার গ্রামের তিন নারীকে এবং এক এতিমকে গুলি কের হত্যা করে সেনারা।
বিবস্ত্র অবস্থায় ছিলেন রাজমুা। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা একটি কাপড় দিয়ে নিজেকে ঢাকেন। যখন তিনি সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসলেন তখন এক বাংলাদেশী তাকে কুতুপালং যেতে সাহায্য করেন এবং সেখানকার একটি ক্লিনিকে তিনি চিকিৎসা নেন। বাংলাদেশে তিনি তার স্বামী মোহাম্মাদ রফিককে খুঁজে পেয়েছেন। তুলা তলি গ্রামে গণহত্যা শুরু হলে রফিক কোনোমতে নদী সাঁতরে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
রাজুমা জানান, “আমার পরিবারের সদস্যদেরকে হত্যা করা হয়েছে। এখন শুধু আমি, আমার এক ভাই এবং আমার স্বামী এখানে আছি। আমার জীবনের কষ্ট ও বর্বর অত্যাচারের কথা সারা দুনিয়াকে জানাতে চাই এই কারণে যে, তারা যেন জানতে পারে এবং তারা যেন শান্তি আনতে পারে।
রাজুমার থুতনি ও মাথার ডান পাশে আঘাত লেগেছে। মাথার আঘাতটা এত বেশি যে, মাথার চুল কেটে ফেলতে হয়েছে। কথা বলার সময় রাজুমার মাথা লাল একটি স্কার্ফ দিয়ে ঢাকা ছিল।
তিনি জানান, “সেনারা আমার পরিবারের সাত সদস্যকে হত্যা করেছে। আমার মা সুফিয়া খাতুন (৫০), দুই বোন ১৮ বছরের রোকেয়া বেগম ও ১৫ বছরের রুবিনা বেগমকে হত্যা করেছে। এদের দুইজনকেই সেনারা ধর্ষণ করে। আমি ধারণা করছি ১০ বছরের ভাই মূসা আলীকে হত্যা করা হয়েছে। আমার ২৫ বছর বয়সী ননদ খালিদা এবং তার আড়াই বছরের ছেলে রোজুক আলী এবং আমার দেড় বছরের ছেলে মোহাম্মাদ সিদ্দিককে ওরা হত্যা করেছে।” রাজুমা বলেন, “আমাদের রোহিঙ্গাদের ওপর কী ঘটেছে সেসব কাহিনী জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
ইয়াসমিনের কাহিনী: ‘আমি ভেবেছিলাম আমি মরে যাচ্ছি’
পালংখালির নতুন শরণার্থী শিবির। যেখানে খাদ্য বিতরণ করা হয় তা থেকে খানিকটা দূর। অল্প কিছু চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র। কাদাযুক্ত পিচ্ছিল পথ। চারদিকে উজ্জ্বল সবুজ রঙের ধানক্ষেত। সেখানে বাস করছেন ইয়াসমিন। তিনি প্রকৃত নাম বলতে চান নি; ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রাখতে চান। নতুন এই শরণার্থী শিবিরে এসেও স্বস্তি নেই মনে। জানালেন, তিনি খুবই লজ্জা পাচ্ছেন। কী করে বলবেন- জীবনে ঘটে গেছে যেসব ঘটনা! কাউকেই তিনি লজ্জায় বলতে পারছেন না। কিন্তু স্বামী রাজি হওয়ার পর তিনিও রাজি হলেন দুর্বিষহ সেইসব স্মৃতি তুলে ধরতে।
বুথিডং শহরের কাছে চপ্রাং গ্রাম থেকে এসেছেন ৪৫ বছর বয়সী এই নারী। ১৯ দিন আগে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন তার ১১ ছেলেমেয়ে আর স্বামীকে নিয়ে। ইয়াসমিনের সবচেয়ে ছোট সন্তানের বয়স চার বছর এবং বড়টার ২৬ বছর। লিকলিকে গড়নের এই নারীর মাথার ওপর ময়লাযুক্ত একটি হলুদ ওড়না; চোখ দুটো জলে ভেজা। ছলছল নয়নে জানালেন কীভাবে মিয়ানমারের সেনারা তাদের গ্রামে হামলা চালিয়েছে। তার পরিবার গরু-ছাগল পুষতো এবং ধান চাষাবাদ করত। তার সন্তানেরা শাকসবজি ও পান বিক্রি করত। এছাড়া, নদী থেকে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করত। ইয়াসমিন জানান, “এই সংকট শুরুর আগে বেশ একটা ভালো জীবন ছিল তাদের।”
তার গ্রামে ঠিক কোন তারিখে মিয়ানমারের সেনারা হামলা করে তা মনে করতে পারলেন না। কিন্তু মনে আছে- যেদিন হামলা করল সেদিন সেনারা গ্রামের লোকজনকে ব্যাপক মারধর করে; তাদের গবাদি পশুগুলো নিয়ে যায়।এরপর একদিন তারা দুপুর বেলায় আসলো। সে সময় তিনি তার ছোট তিন ছেলেমেয়েকে খাবার খাওয়াচ্ছিলেন।
ইয়াসমিন জানান, “সেনারা বলল যে, তোমাদের কাছে অস্ত্র আছে, এসব অস্ত্র জমা দাও। যদি গ্রামের কেউ বলল যে, আমাদের কাছে অস্ত্র নেই তাহলে তাকে তখনই হত্যা করল। তাদেরকে মারধর করল এবং ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দিতে শুরু করল।”
আটজন সেনা ঢুকেছিল তার ঘরে। তার চার, ছয় ও আট বছরের ছেলেমেয়েদেরকে লাথি, কিল-ঘুষি মারতে শুরু করল সেনারা। তিনি তার ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে রাখলেন। নিচের দিকে তাকিয়ে অত্যন্ত নিচু স্বরে কথা বললেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। ঘর থেকে ছেলেমেয়েদেরকে বের করে নিয়ে গেল সেনারা। তারপর বিভিন্ন বয়সের পাঁচজন সেনা তাকে পালা করে ধর্ষণ করল। এ সময় তিনজন বাইরে অপেক্ষা করছিল।
ইয়াসমিন জানালেন, “আমি ঠিক পুরোপুরি বলতে পারলাম না সে লজ্জা ও দুঃখের কথা।” কেঁদে ফেলেন ইয়াসমিন।
ইয়াসমিনের ছোট সন্তান- একটি মেয়ে। অন্যমনস্ক হয়ে বসেছিল। মায়ের কান্নায় সে নিজের হাত রাখল মায়ের কোলে।
ইয়াসমিন অস্ফূট স্বরে বললন, “আমি মনে করেছিলাম আমি মরে যাচ্ছি।”
এ ঘটনার কয়েকদিন পর তার পরিবার পালিয়ে আসে। পালিয়ে আসার জন্য একজন নৌকাওয়ালাকে কিছু টাকা দিয়েছে এবং সেই মাঝি নাফ নদী পার করে দেয়।
ইয়াসমিন বললেন, “মিয়ানমারে আগে ঠিকমতো ঘুমাতে পারতাম না। এখানে জীবনের নিরাপত্তা আছে সে কারণে কিছুটা ভালো বোধ করছি।”
‘আমরা বিচার চাই’
আবার ফিরে চলুন বালুখালি শিবিরে। সেখানে আয়েশা বলেছিলেন কীভাবে তিনি নাফ নদী পার হয়েছেন। নদী পার হয়েই তিনি তার স্বামী আসাদুল্লাহকে (২৫)খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। আসাদুল্লাহ ছিলেন একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। ২৫ আগস্ট সেনারা তার গ্রামের পুরুষ মানুষকে ধরে হত্যা ও নির্যাতন শুরু করলে তিনি কোনোরকমে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। তিনিও ধরা পড়েছিলেন এবং তাকেও তারা মারধর করেছে। মারের কারণে তার এক পা অনেকটা বিকলাঙ্গ হয়ে গেছে।
আয়েশা বাংলাদেশে পৌঁছে তার গ্রামের কয়েকজন লোককে দেখেন। তিনি তাদেরকে চিনতেন। তাদের কাছে জিজ্ঞেস করলেন- তারা তার স্বামীকে দেখেছেন কিনা। “এভাবে একজন একজনকে জিজ্ঞেস করতে করতে তিনদিন পর আমি আমার স্বামীকে খুঁজে পাই”- জানান আয়েশা।
আসাদুল্লাহ বললেন, তিনি ক্ষোভে ফুঁসছেন। বললেন, “আমার ভেতরে খুবই খারাপ লাগছে। আমি ওদেরকে কিছুই করতে পারলাম না।” তিনি বিশ্বাসের কথা জানালেন। বললেন, “যা হয়েছে তা হয়ত ভাগ্যে ছিল। সে কারণে আমার স্ত্রীর ওপর যা হয়েছে তার জন্য কাউকে দোষ দেই না। আমি তাকে ভালবাসি।”
আয়েশা বললেন, “আমার অন্তরে ব্যাথা। সে কারণে আমি এসব ঘটনা খুলে বললাম। মনের কষ্ট কমানোর জন্য এসব ঘটনা বললাম।”
সংকীর্ণ জায়গায় বসে আয়েশা তার মনের দুঃখের কথা খোলাখুলি বললেন। তার চোখ জ্বলজ্বল করছিল। তিনি বলে উঠলেন, “আমরা বিচার চাই।আমি যা চাই তা হচ্ছে- দুনিয়ার মানুষ জানুক: আমরা বিচার চাই।”
বাঁশ ও পলিথিন কাগজের দেয়ালের ওপাশ থেকেও এক নারী বলে উঠলেন, “হ্যা, আমরা বিচার চাই।”
ধর্ষণের বিষয়ে রোহিঙ্গা সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও লজ্জার কারণে বহু বেঁচে থাকা নারী তাদের কষ্টকর ও দুঃখজনক অভিজ্ঞতার কথা বলতে পারছেন না। শুধু তারা সাহায্য চাইছেন। এ অবস্থা বিশেষ করে অবিবাহিতা মেয়েদের বেলায় বেশি। তারা ভয় পাচ্ছেন- এসব শ্লীলতাহানির কথা প্রকাশ হয়ে পড়লে বিয়ের ক্ষেত্রে নানা সমস্যা দেখা দেবে।
তুলা তলি গ্রাম থেকে বেঁচে আসা রাজুমা বললেন, তার স্বামী তার ঘটনা জানে এবং বিপদের দিনে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। রাজুমা বললেন, “আমার স্বামী আমাকে ভালবাসেন এবং সবসময় তিনি এভাবেই ভালবাসেন।”
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক, রেডিও তেহরান।
পাঠকের মতামত:
- কাঁচামালের অভাবে বন্ধ দেশবন্ধু গ্রুপের সুগার রিফাইনারি মিল
- বিশ্বখ্যাত ১ নম্বার ইলেকট্রিক স্কুটার প্রস্তুতকারী ব্র্যান্ড Yadea এখন পঞ্চগড়ে
- ২০ কোম্পানির পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা
- যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর গাজায় মিলল শতাধিক লাশ
- বড় জয়ে ‘সরাসরি’ বিশ্বকাপে খেলার আশা টিকিয়ে রাখল বাংলাদেশ
- সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম ফের রিমান্ডে
- চাঁদাবাজি ও ঘুস বন্ধে ‘গুন্ডা প্রতিরোধ স্কোয়াড’ গঠনের সুপারিশ
- টাকা দিয়েও মালয়েশিয়া যেতে না পারায় মন্ত্রণালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল
- প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের বৈঠক
- জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব ছাড়লেন সারজিস আলম
- বোমা হামলার হুমকি পাওয়া সেই বিমানে তল্লাশি চলছে
- হাসিনার গোপন কারাগারে আটক থাকত শিশুরাও, দেওয়া হতো না মায়ের দুধ
- তাপমাত্রা বাড়ার পূর্বাভাস
- নাঈম নৈপুণ্যে রাজশাহীকে হারাল চিটাগং
- আলোচনার মাধ্যমে সীমান্ত সমস্যার সমাধান করা উচিত: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
- হাসপাতালে গিয়ে জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের ভোটার করবে ইসি
- ২৪৬ স্কোর নিয়ে ঢাকার বাতাস আজ ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’
- ডব্লিউএইচও থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিলেন ট্রাম্প
- ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় জড়িত ১৫০০ জনকে ক্ষমা করলেন ট্রাম্প
- মেডিকেলে কোটায় উত্তীর্ণ ১৯৩ জনের ফল স্থগিত
- ছয় সংস্কার কমিশনের মেয়াদ বাড়ল
- সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
- চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত স্বাভাবিক, কৃষি কাজে ব্যস্ত কৃষকেরা
- বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে ‘হিটম্যাপ’ প্রকাশ করল বিডা
- পালমাসকে উড়িয়ে চূড়ায় রিয়াল মাদ্রিদ
- বেস্ট হোল্ডিংসের ক্রেডিট রেটিং নির্ণয়
- বিজয়ের সেঞ্চুরি ম্লান করে হাসানের দারুণ বোলিংয়ে খুলনার জয়
- ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে আজ
- মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা : জাতীয় মেধা তালিকায় শীর্ষে যারা
- ঢাবিতে আবার ‘কোটা না মেধা’ স্লোগান, বিক্ষোভ
- চার শিক্ষা বোর্ডে নতুন চেয়ারম্যান
- শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন, পদ পেলেন যারা
- পুরোনো ভাবাদর্শিক বন্দোবস্ত সক্রিয় হয়ে গেছে: মাহফুজ আলম
- ৯০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল
- পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চীন সফরে সম্পর্কে যুক্ত হতে যাচ্ছে নতুন মাত্রা
- রাতে সুইজারল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা
- কাজী নজরুলের নাতি বাবুল লাইফ সাপোর্টে
- নতুন বাজারে ৬৩৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি
- বিএফআইইউর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস কারাগারে
- মঙ্গলবার থেকে অবৈধ অভিবাসীদের গণগ্রেপ্তার শুরু যুক্তরাষ্ট্রে
- ওষুধের ভ্যাট কমাতে সুপারিশ করা হয়েছে: স্বাস্থ্য উপদেষ্টা
- "যেকোনো উপায়ে সাধারণ মানুষের ভোট প্রদানের অধিকার থাকতে হবে"
- শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচার করা হবে: শফিকুল আলম
- ফ্যাসিস্ট যেন সংসদে ফিরে আসতে না পারে: বদিউল আলম
- ঋণ খেলাপিদের মনোনয়ন দেবে না বিএনপি, ফখরুলের অঙ্গীকার
- চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে সংঘর্ষ: দুঃখ প্রকাশ করলো বিএসএফ
- "ব্যাংক খাত পেলেও পুঁজিবাজার পায়নি সংস্কার সহায়তা"
- যশোর জেলা জিয়া সাংস্কৃতিক সংগঠনের ২৭ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
- এআইবি পিএলসির উদ্যোগে কম্বল বিতরণ
- ইসলামী ব্যাংকের বার্ষিক ব্যবসায় উন্নয়ন সম্মেলনের শুরু
- ওয়ালটন ডিস্ট্রিবিউটর নেটওয়ার্কের ‘পার্টনার্স টুগেদার-২০২৫’ সমাপ্ত
- অবশেষে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদন করল ইসরাইল
- যোগ্যকে বাদ দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পদ বাগিয়ে নেন পুতুল
- "দেশে আসেন, কাশিমপুরে ভালো ব্যবস্থা করা হবে"
- "পয়লা বৈশাখে স্থানীয় নামসহ নদ-নদীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ"
- ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে অভিমত জানাতে পারবেন সাধারণ নাগরিকরা
- শাপলা চত্বরে হেফাজত দমন: হাসিনার নির্দেশে ক্র্যাকডাউন
- আমদানি করায় কমছে চালের দাম
- "রক্তে যখন শরীর ভেসে যাচ্ছিল, তখন সিংহের মতো হাঁটছিলেন সাইফ"
- কমতে পারে দিনের তাপমাত্রা, অপরিবর্তিত থাকবে রাতের
- বেশি খেলা হয়ে যাচ্ছে? বিশ্রাম নিয়ে যা ভাবছেন নাহিদ রানা
- রোহিত-কোহলিদের পাকিস্তানি আতিথেয়তার লোভ দেখালেন ফখর
- দুর্নীতির মামলায় ইমরান খানের ১৪ বছরের কারাদণ্ড
- ফেসবুকে নিজের সম্পদের হিসাব দিলেন প্রেসসচিব শফিকুল আলম
- ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ মান নিয়ে বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান শীর্ষে
- এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
- মিয়ানমার থেকে এলো ২২ হাজার মেট্রিক টন চাল
- আগের দামেই পেঁয়াজ, কমেছে সবজির
- অনতিবিলম্বে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে: জয়নুল আবদিন
- ৩ কোম্পানিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর
- নটিংহ্যামের বিপক্ষে লিভারপুলের ড্র
- আইসিসির ডিসেম্বর মাসের সেরা বুমরাহ
- গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা শেষ পর্যায়ে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হতে পারে চুক্তি
- সাড়ে ৫ কোটি লিটার ভোজ্যতেল কিনছে সরকার
- ছাগলকাণ্ডে আলোচিত মতিউর ও তার স্ত্রী গ্রেপ্তার
- শাপলা চত্বরে হেফাজত দমন: হাসিনার নির্দেশে ক্র্যাকডাউন
- "রক্তে যখন শরীর ভেসে যাচ্ছিল, তখন সিংহের মতো হাঁটছিলেন সাইফ"
- অবশেষে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদন করল ইসরাইল
- ঢাবিতে আবার ‘কোটা না মেধা’ স্লোগান, বিক্ষোভ
- মঙ্গলবার থেকে অবৈধ অভিবাসীদের গণগ্রেপ্তার শুরু যুক্তরাষ্ট্রে
- আগের দামেই পেঁয়াজ, কমেছে সবজির
- নতুন বাজারে ৬৩৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি
- চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে সংঘর্ষ: দুঃখ প্রকাশ করলো বিএসএফ
- মিয়ানমার থেকে এলো ২২ হাজার মেট্রিক টন চাল
- যোগ্যকে বাদ দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পদ বাগিয়ে নেন পুতুল
- ফেসবুকে নিজের সম্পদের হিসাব দিলেন প্রেসসচিব শফিকুল আলম
- কমতে পারে দিনের তাপমাত্রা, অপরিবর্তিত থাকবে রাতের
- পুরোনো ভাবাদর্শিক বন্দোবস্ত সক্রিয় হয়ে গেছে: মাহফুজ আলম
- অনতিবিলম্বে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে: জয়নুল আবদিন
- আমদানি করায় কমছে চালের দাম
- বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে ‘হিটম্যাপ’ প্রকাশ করল বিডা
- ওয়ালটন ডিস্ট্রিবিউটর নেটওয়ার্কের ‘পার্টনার্স টুগেদার-২০২৫’ সমাপ্ত
- দুর্নীতির মামলায় ইমরান খানের ১৪ বছরের কারাদণ্ড
- ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ মান নিয়ে বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান শীর্ষে
- কাজী নজরুলের নাতি বাবুল লাইফ সাপোর্টে
- এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
- ঋণ খেলাপিদের মনোনয়ন দেবে না বিএনপি, ফখরুলের অঙ্গীকার
- রোহিত-কোহলিদের পাকিস্তানি আতিথেয়তার লোভ দেখালেন ফখর
- বেশি খেলা হয়ে যাচ্ছে? বিশ্রাম নিয়ে যা ভাবছেন নাহিদ রানা
- মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা : জাতীয় মেধা তালিকায় শীর্ষে যারা