thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউস সানি 1446

রমজান প্রতিদিন

 দান-সদকা ও রমজান

২০১৮ জুন ০৪ ০৩:৩৩:১২
 দান-সদকা ও রমজান

এ.কে.এম মহিউদ্দীন, দ্য রিপোর্ট: সোমবার ১৮ রমজান। দেখতে দেখতে শেষ হয়ে আসছে মাসটি। এটা প্রত্যেকেই জানেন রমজানুল মোবারক মুমিনের আমলের বসন্তকাল। এ মাসে বান্দা যত আমল করবে তার পরকালীন ভান্ডার ততই সমৃদ্ধ হবে। রমজানের অন্যতম আমল দান-সদকা। গরিব-দুঃখী মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া। কারণ রোজা ফরজ করা হযয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য। আর এ কল্যাণ তখনই অর্জিত হতে যখন রোজাদার দানের হাত প্রসারিত করবে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) মানুষের মধ্যে সবচে উদার ও দানশীল ছিলেন। রমজানে যখন হযরত জিবরাইল (আ.) তার কাছে নিয়মিত আসতেন এবং কোরআন পড়ে শোনাতেন তখন তার দানশীলতা আরো বেড়ে যেতো। আনাস (রা.) বলেন, “নবী করিম (সা.)-এর চেয়ে বেশি দানশীল আমি আর কাউকে দেখিনি।” (মুসলিম)

দানশীলতা একটি মহৎ গুণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “উপরের হাত নিচের হাতের চেয়ে উত্তম।” আর মাহে রমজানে দানের ফজিলত অনেক বেশি। এ জন্য অন্য এগারো মাসের তুলনায় এ মাসে অধিক দান-সদকা করা উচিত

রাসুল (সা.) তার উম্মতদের শিক্ষা দিয়েছেন, রমজান মাসে দান ও বদান্যতার হাত সম্প্রসারিত করতে। হাদিসে রমজান মাসকে হামদর্দি বা ‘সহানুভূতির মাস’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

রমজানের রোজা ফরজ করার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, গরিব-দুঃখী মানুষের কষ্ট অনুভব করা। যারা প্রাচুর্যের জীবন-যাপন করেন তারা সারা বছর ক্ষুধা ও পিপাসার যন্ত্রণা না বুঝলেও রমজানে কিছুটা বোঝেন। এই বোঝা তখনই সার্থক হবে যখন তারা গরিব-অসহায়দের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন।

রমজান মাসে মহান খোদা তায়ালা প্রতিটি নফল কাজের সওয়াব ৭০ গুণ বাড়িয়ে দেন। সে হিসেবে রমজানে এক টাকা দান করে ৭০ টাকা দানের সওযাব লাভ করা সম্ভব।

এজন্য প্রত্যেক রোজাদারের উচিত নিজের সাধ্য অনুযাযী অনাথ, আর্ত, সহায়-সম্বলহীন ও দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য দানের হাত বাড়িয়ে দেয়া।

আল্লাহ বলেন, “আল্লাহর পথে ব্যয় করো, নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর তোমরা মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করো। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালোবাসেন।” (আল কুরআন)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা মানব সন্তানকে লক্ষ্য করে বলেন, “তুমি দান করো, তাহলে তোমার জন্যে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) দান করা হবে।”

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “দানকারী আল্লাহর নিকটতম, বেহেশতের নিকটতম এবং মানুষের নিকটতম হয়ে থাকে। আর দূরে থাকে জাহান্নাম থেকে। অপরদিকে কৃপণ ব্যক্তি দূরে অবস্থান করে আল্লাহ থেকে, বেহেশত থেকে এবং মানুষের কাছ থেকে। আর কাছাকাছি থাকে জাহান্নামের। অবশ্যই একজন জ্ঞানহীন দাতা একজন কৃপণ ইবাদতকারীর তুলনায় আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়।”

আমাদের সমাজে এমন অনেক অসহায়-নিঃস্ব লোক আছে যারা সেহেরি ও ইফতারে সামান্য খাবার জোগার করতেও হিমশিম খায়। বছরের অন্য সময় কোনো রকম চলে গেলেও রমজানে তাদের দুর্ভোগ ও দুর্দশা বেড়ে যায়। এ ধরনের মানুষদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া সামর্থ্যবান প্রতিটি মুসলমানের নৈতিক ও ধর্মীয় কর্তব্য।

রমজানে গরিবের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর অনেক সুযোগ ও উপলক্ষ ইসলাম করে দিয়েছে। জাকাত, সদকা ও সাধারণ দানের বাইরেও তাদেরকে ইফতার করানো একটি বড় ফজিলতের কাজ। গরিব হোক ধনী হোক যেকোনো রোজাদারকে ইফতার করালে সওয়াব রয়েছে।

রমজান উপলক্ষে ব্যয়বহুল অনেক ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়। এখানে গরিব-দুঃখীদের প্রবেশাধিকার থাকে না। এসব আয়োজনে সাধারণত অনেক অপচয় হয়ে থাকে। যদি যথার্থই সওযাবের উদ্দেশ্যে হয়, তাহলে এর চেয়েও গরিব-দুঃখীদের মধ্যে ইফতার বিলিয়ে দেয়ার সওয়াব অনেক বেশি। তাই পবিত্র রমজানে প্রত্যেকের উচিত সাধ্যমতো গরিব-দুঃখীদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/ জুন ০৪, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

ধর্ম এর সর্বশেষ খবর

ধর্ম - এর সব খবর