thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১,  ২১ জমাদিউস সানি 1446

তাওবা : গুনাহ মাফের পূর্বশর্ত

২০১৮ সেপ্টেম্বর ১০ ১৯:৫৫:৪২
তাওবা : গুনাহ মাফের পূর্বশর্ত

এ.কে.এম মহিউদ্দীন

ভুল করা মানুষের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি। রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের দ্বারা যদি কোনো গুনাহ না হতো তবে তোমাদের পরিবর্তে আল্লাহ এমন এক জাতি সৃষ্টি করতেন, যারা গুনাহ করত এবং তাওবাও করত।’ (মুসনাদে আহমদ : ২৯০৩)।

গুনাহ থেকে বাঁচার চেষ্টা করা যেমন মুমিনদের পরিচায়ক, তেমনি তাওবা করাও মুমিনদের অনন্য বৈশিষ্ট্য। চাই তা সগিরা (ছোট) গুনাহ বা কবিরা (বড়) গুনাহ। রাসূল (সা.) বলেন, ‘কোনো বান্দা যদি সগিরা গুনাহ করে অনুতপ্ত না হয় এবং তাওবা না করে তবে তা আল্লাহর কাছে কবিরা গুনাহ বলে বিবেচিত হয়। পান্তরে কেউ কবিরা গুনাহ করেও যদি অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করে তবে তা আল্লাহর কাছে সগিরা গুনাহ বলে গণ্য হয় এবং তিনি তা মা করে দেন।’ (তিরমিজি : ১৮৭১)।

গুনাহ করা যেমন বান্দার স্বাভাব, তেমনি গুনাহ মাফ করাও আল্লাহর স্বভাব এবং বিশেষ গুণ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করে, তার গুনাহগুলো মিটিয়ে দেয়া হবে এবং তার প্রতিদানকে বহু গুণে বৃদ্ধি করা হবে।’ (সূরা তালাক : ৫)।

এখন আমাদের জানা দরকার তওবা শব্দের আভিধানিক অর্থ। তাওবা অর্থ- ফিরে আসা।

পরিভাষায় তওবা হল : যে সকল কথা ও কাজ মানুষকে আল্লাহর নৈকট্য থেকে দূরে সরিয়ে দেয় তা থেকে ফিরে এসে ঐ সকল কথা ও কাজে লেগে যাওয়া,যা দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় ও তাঁর অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে থাকা যায়।

এক কথায় পাপ-কর্ম থেকে ফিরে এসে সৎকাজে প্রবৃত্ত হওয়া।

পাপ বা অপরাধ দু ধরনের হয়ে থাকে :

এক. যে সকল পাপ শুধুমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের হক বা অধিকার সম্পর্কিত। যেমন শিরক করা,নামাজ আদায় না করা, মদ্যপান করা,সুদের লেনদেন করা ইত্যাদি।

দুই. যে সকল পাপ বা অপরাধ মানুষের অধিকার সম্পর্কিত। যে পাপ করলে কোন না কোন মানুষ তিগ্রস্তহয়। যেমন, জুলুম-অত্যাচার,চুরি-ডাকাতি,ঘুষ খাওয়া,অন্যায়ভাবে সম্পদ আতœসাৎ ইত্যাদি।

প্রথম প্রকার পাপ থেকে আল্লাহর কাছে তাওবা ও মা প্রার্থনা করার সাথে তিনটি শর্তের উপস্থিতি জরুরী।

শর্ত তিনটি হল :

(১) পাপ কাজটি পরিহার করা।

(২) কৃত পাপটিতে লিপ্ত হওয়ার কারণে আন-রিকভাবে অনুতপ্ত হওয়া।

(৩) ভবিষ্যতে আর এ পাপ করব না বলে দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা।

দ্বিতীয় প্রকার পাপ থেকে তাওবা করার শর্ত হল মোট চারটি:

(১) পাপ কাজটি পরিহার করা।

(২) কৃত পাপটিতে লিপ্ত হওয়ার কারণে আন-রিকভাবে অনুতপ্ত হওয়া।

(৩) ভবিষ্যতে আর এ পাপ করব না বলে দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা।

(৪) পাপের কারণে যে মানুষটির অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছে বা যে লোকটি তিগ্রস্ত হয়েছে,তার পাওনা পরিশোধ করা বা যথাযথ তিপুরণ দিয়ে তার সাথে মিটমাট করে নেয়া অথবা তার কাছে মা চেয়ে দাবী ছাড়িয়ে নেয়া।

মানুষের কর্তব্য হল,সে সকল প্রকার পাপ থেকে তাওবা করবে,যা সে করেছে। যদি সে এক ধরনের পাপ থেকে তাওবা করে,অন্য ধরনের পাপ থেকে তাওবা না করে তাহলেও সে পাপটি থেকে তাওবা হয়ে যাবে। তবে অন্যান্য পাপ থেকে তওবা তার দায়িত্বে থেকে যাবে। একটি বা দুটো পাপ থেকে তাওবা করলে সকল পাপ থেকে তাওবা বলে গণ্য হয় না। যেমন এক ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলে,ব্যভিচার করে,মদ্যপান করে। সে যদি মিথ্যা কথা ও ব্যভিচার থেকে যথাযথভাবে তওবা করে তাহলে এ দুটো পাপ থেকে তওবা হয়ে যাবে ঠিকই। কিন্তু মদ্যপানের পাপ থেকে তওবা হবে না। এর জন্য আলাদা তওবা করতে হবে। আর যদি তাওবার শর্তাবলী পালন করে সকল পাপ থেকে এক সাথে তাওবা করে তাহলেও তা আদায় হয়ে যাবে।

তওবা করে আবার পাপে লিপ্ত হয়ে পড়লে আবারও তাওবা করতে হবে। তওবা রা করা যায় না বা বারবার তওবা ভেঙ্গে যায় এ অজুহাতে তওবা না করা শয়তানের একটি ধোকা বৈ অন্য কিছু নয়। অন্তর দিয়ে তওবা করে তার উপর অটল থাকতে আল্লাহ তাআলার কাছে তাওফীক কামনা করা যেতে পারে। এটা তাওবার উপর অটল থাকতে সহায়তা করে।

কুরআন,হাদীস ও উম্মাতের ঐক্যমতে প্রমাণিত হয়েছে যে, পাপ থেকে তাওবা করা ওয়াজিব।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/সেপ্টেম্বর ১০,২০১৮)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

ধর্ম এর সর্বশেষ খবর

ধর্ম - এর সব খবর