thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৩ জমাদিউল আউয়াল 1446

সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা লোপাট ব্যাংক খাত থেকে

২০১৮ ডিসেম্বর ০৯ ২২:৪১:০০
সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা লোপাট ব্যাংক খাত থেকে

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) দাবি করেছে, প্রতারণার মাধ্যমে গত ৯ বছরে ব্যাংক খাত থেকে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ লোপাট করা হয়েছে। এই লুটপাট বর্তমান সরকারের গত দুই মেয়াদে হয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি খাতের ব্যাংক থেকে এই অর্থ লোপাট করা হয়েছে ঋণের নামে। কিন্তু অনেকেরই এখনও বিচার হয়নি ।

শনিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে আমরা কী করছি ও করণীয় কী’ শীর্ষক এক সেমিনারে এ তথ্য তুলে ধরে সংস্থাটি। এ সময় ব্যাংক খাত রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার পাশাপাশি অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধে জরুরি ভিত্তিতে এ খাত রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে সিপিডি। এতে দেশি-বিদেশি সংস্থায় কর্মরত অর্থনীতিবিদ, সাবেক আমলা, ব্যাংকাররা অংশগ্রহণ করেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে গেল এক দশকে ব্যাংক থেকে সাড়ে ২২ হাজার ৫০২ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। ২০০৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক থেকে এসব অর্থ প্রতারণার মাধ্যমে লোপাট করা হয়েছে। এই অর্থ ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যেসব সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক থেকে লোপাট করা হয়েছে, তা হলো রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, বেসিক ও বেরসকারি খাতের ফারমার্স, প্রাইম ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, এবি ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংক।
সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়, লোপাট করে নেওয়া বিশাল অঙ্কের এই অর্থের পরিমাণ হচ্ছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব আদায়ের ৩৯ শতাংশ। পদ্মা সেতু নির্মাণ ব্যয়ের ৭৮ দশমিক দুই শতাংশ, পদ্মা সেতুতে রেলপথ নির্মাণ খরচের ৬৪ দশমিক তিন শতাংশ, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণের ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ৪০ দশমিক ৯০ শতাংশ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ১৯ দশমিক ৯০ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এ বিষয়ে ওয়াকিবহল আছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থাগুলো ব্যাংক খাতের মূল্যায়ন করছে। তারা নাজুক বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। এতে এক পর্যায়ে ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য খরচ বৃদ্ধি পাবে। বিষয়টিতে এখনই নজর দেওয়া উচিত।
মূলপ্রবন্ধে বলা হয়, ২০১৩ সাল থেকেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়ে আসছে। বর্তমানে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৯ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকেরই খেলাপির পরিমাণ ৪৮ হাজার ৮০ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে পুরো ব্যাংক খাতে বিতরণকৃত ঋণের তুলনায় খেলাপি ঋণ ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ হলেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ২৩ শতাংশ, যা গত জুন শেষে ছিল ২৮ দশমিক দুই শতাংশ। এসব খেলাপি ঋণের ৪৭ শতাংশই পাঁচ ব্যাংকের। এতে ভবিষ্যতে খেলাপি ঋণের রাইট অফ বৃদ্ধি পাবে।
এসবের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় সুশাসনের অভাব ও অর্থ মন্ত্রণালয় এবং সরকারের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপকে। সেমিনারে বলা হয়, বর্তমানে খেলাপি ঋণ বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সময় সেমিনারটিতে জানানো হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির সঙ্গে তৎকালীন চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর অনিয়ম সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরবর্তী সময়ে মেয়াদ শেষ হওয়ার একদিন আগে তিনি পদত্যাগ করেন। এখন পর্যন্ত ঋণ কেলেঙ্কারির দায়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়নি।
বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ব্যয় ও আয়ের অনুপাত শূন্য দশমিক পাঁচের বেশি, যা দুর্বল ব্যবস্থাপনার নিদর্শন। ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই মতামত দিয়েছে সিপিডি। শ্রেণিকৃত ঋণের হার ১০ শতাংশের উপরে রয়েছে এখনও ৯ ব্যাংকের। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি খাতের ব্যাংকও রয়েছে বলে সেমিনারে জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ও ফারমার্স ব্যাংক গত তিন বছর ধরেই লোকসান দিয়ে আসছে। রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক, রূপালী ও অগ্রণী ব্যাংক ২০১৬ সালে বিপুল পরিমাণে লোকসান দিয়েছে। সব ব্যাংকের লোকসান একত্র করলে তা বেসিক ব্যাংকের লোকসানের চেয়ে কম হবে। নতুন ব্যাংক অনুমোদনের সমালোচনা করে বক্তারা বলেন, বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে ব্যাংক ও শাখার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তারপরও নতুন ব্যাংক দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

চতুর্থ প্রজন্মের ৯ ব্যাংকের মধ্যে ফারমার্স, এনআরবি গ্লোবাল, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ২০১৬-১৭ সালে তারল্য সংকটে ভুগেছে। গত ১০ বছর ধরে ঋণ-আমানত হার বেশি ওঠানামা করেছে, যা ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনার অদক্ষতাকে বুঝায়। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা এবং বেসরকারি খাতের মার্কেন্টাইল, এনসিসি ও ঢাকা ব্যাংকে বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারি হয় গত ২০০৮-১১ সালের মধ্যে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
সেমিনারটিতে প্রধান অতিথি ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। সিপিডির সম্মানিত ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারটিতে কূটনীতিক, বিদেশি দাতা ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।


(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/ডিসেম্বর ০৯,২০১৮)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

অর্থ ও বাণিজ্য এর সর্বশেষ খবর

অর্থ ও বাণিজ্য - এর সব খবর