thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১,  ২১ জমাদিউস সানি 1446

তাঞ্জানিয়ার নও-মুসলিম মুসা রুচুনগুরা'র ধর্মান্তরিত হওয়ার কাহিনী

২০১৮ ডিসেম্বর ২৯ ০০:১৪:০৫
তাঞ্জানিয়ার নও-মুসলিম মুসা রুচুনগুরা'র ধর্মান্তরিত হওয়ার কাহিনী

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ইসলাম ইহকাল ও পরকাল এ দুই জগতেই মানুষের সৌভাগ্যের পথ দেখায়। এ ধর্ম যুক্তি দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করে, গায়ের জোরে নয়। ইসলাম মানুষের স্বভাব ও প্রকৃতির সঙ্গে মানানসহ বলে তার আকর্ষণও অকৃত্রিম। তাই সত্য-সন্ধানীদের কাছে এ ধর্মের আকর্ষণ দুনির্বার। তাঞ্জানিয়ার নও-মুসলিম মুসা রুচুনগুরা এ ধরনের সৌভাগ্যবানদেরই একজন।

মুসলমান হওয়ার পটভূমি তুলে ধরে তাঞ্জানিয়ার নও-মুসলিম রুচুনগুরা বলেছেন, "দশ বছর বয়সে ভর্তি হয়েছিলাম রোমান ক্যাথলিক গির্জার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে ধর্ম ও অন্যান্য বিষয়ের প্রাথমিক শিক্ষা দেয়া হতো। ধর্ম সম্পর্কে সেখানেই প্রথমবারের মত কিছু জানতে পেরেছিলাম। কারণ, আমার পরিবার কোনো ধর্মেই বিশ্বাস করত না এবং মাত্র অল্প কিছুকাল আগে রোমান গির্জার প্রতি আগ্রহী হয়েছিল। ধর্মীয় স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুবাদে নানা ধর্মের ইতিহাস সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়েছিলাম। স্কুলে খ্রিস্ট ধর্মের ইতিহাস পড়তে গিয়ে আমার মনে নানা প্রশ্ন জেগে ওঠে। যেমন, কেন পাদ্রিরা পাপ সম্পর্কে জনগণের স্বীকারোক্তি শোনেন? কারণ, এ বিষয়টি হল আল্লাহ ও মানুষের মধ্যে একটি গোপন বিষয়। এ রকম আরো অনেক প্রশ্ন জাগত মনে। আর এসবের উত্তর জানার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ধরনা দিতাম; কারণ তখনও আমার জ্ঞানের পরিধি ছিল বেশ সীমিত। কিন্তু তাদের জবাবগুলো আমাকে সন্তুষ্ট করেনি। আমি আগের মতই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতাম। কিন্তু আমাকে বলা হতো, এইসব প্রশ্ন ভুলে যাও। কারণ, এগুলো হল গোপন রহস্য। ফলে এইসব প্রশ্নের জবাব পাওয়ার ব্যাপারে আমি হতাশ হয়ে পড়েছিলাম।"

এইসব ঘটনার প্রভাবে ধর্ম ও ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে উদাসীন হয়ে পড়েন তাঞ্জানিয়ার নও-মুসলিম মুসা রুচুনগুরা। কিন্তু এর ফলে বিভ্রান্তির ধূম্রজাল আরো জটিল হয়। সেইসব প্রশ্নগুলোর জবাব না পাওয়ার অতৃপ্তি কেড়ে নিয়েছিল তার মানসিক প্রশান্তি। আর এই অবস্থা অব্যাহত থাকার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল মুসা রুচুনগুরার স্কুল জীবন। এর পরের ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেছেন, "বিভ্রান্তির সেই দিনগুলো চলতেই থাকে যতক্ষণ না ঘটনাক্রমে একজন মুসলমানের সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে। ওই মুসলমান নিজের ধর্ম বিশ্বাসের প্রতি গভীর আস্থা রাখতেন। তার আত্মবিশ্বাসও ছিল বিস্ময়কর। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন,

"আমি এমন এক ধর্মের অনুসারী যা একদিকে যেমন খুবই সহজ এবং মানুষকে সন্তুষ্ট করে, তেমনি এর নীতিমালা পুরোপুরি স্পষ্ট। কিন্তু আমি তাকে বললাম, আমি ধর্মকে চিরতরে এড়িয়ে যেতে চাই যাতে মানসিক অশান্তি থেকে মুক্ত হতে পারি। কারণ, আমি যে ধর্মেরই মুখোমুখি হয়েছি সেই ধর্মেই বিস্ময়কর অনেক কিছু দেখেছি এবং এইসব ধর্ম অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে সক্ষম নয়।"

তাঞ্জানিয়ার নও-মুসলিম মুসা রুচুনগুরার এইসব কথা শুনে ওই মুসলিম বন্ধু তার সঙ্গে ইসলাম সম্পর্কে আরো বেশি কথা বলতে উৎসাহিত হন। এভাবে তার সঙ্গে ইসলাম নিয়ে মুসার আলোচনা ও মত-বিনিময় শুরু হয় এবং প্রতি দিনই ইসলাম সম্পর্কে অনেক বাস্তবতা তার কাছ থেকে শুনতে পেতেন মুসা রুচুনগুরা।

তাওহিদ বা একত্ববাদই ইসলামের সবচেয়ে বড় মূলনীতি এবং এরই ছায়াতলে মানুষ বিশ্ব জগতে নিজের প্রকৃত অবস্থান খুঁজে পায়। বিষয়টি মুসা রুচিনগুরাকে মুগ্ধ করেছে। এভাবে তিনি তার বহু প্রশ্নের জবাব খুঁজে পেয়েছেন ইসলামের মধ্যে। আসলে স্রস্টার ব্যাপারে উদাসীন থেকে মানুষ নিজেকেই ভালভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম নয়। আল্লাহর ওপর নির্ভরতা মানুষকে বিভ্রান্তির গভীর ও নিকষ অন্ধকারে আচ্ছন্ন অতলান্ত এবং কুল-কিনারাহীন সাগর থেকে মুক্তি দেয়। এভাবে মানুষ লাভ করে আত্ম-সচেতনতা। তাওহিদ প্রসঙ্গে তাঞ্জানিয়ার নও-মুসলিম মুসা রুচুনগুরা বলেছেন,

"আমি এটা বুঝলাম, মুসলমানরা আল্লাহর পাঠানো সব নবী-রাসূলকে স্বীকৃতি দেন। ইসলামের একটি বিশেষ বাক্য তথা 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' আমাকে খুব আকৃষ্ট করেছে। অর্থাত আল্লাহ ছাড়া কোনো খোদা নেই। মুসলমানরা প্রত্যেক নামাজের আগে ও নামাজের মধ্যে এই বাস্তবতার সাক্ষ্য দেন। এ বাক্যটি আমাদের শেখায় যে আল্লাহ সবচেয়ে বড় শক্তি। আর এই বিশ্বাস নিয়ে মানুষ মহান আল্লাহর অক্ষয় শক্তির প্রতি আনুগত্য করে। আর যে আল্লাহর দাসত্বকে মেনে নেয় সে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো শক্তি ও রাজা-মহারাজার কাছে নত হয় না। ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি হল একত্ববাদ। আর এর সবচেয়ে সহজ ও ভালো প্রমাণ হল, বিশ্ব জগতের সমন্বিত ও সুবিন্যস্ত ব্যবস্থাপনা। মহান আল্লাহ কুরআনের বেশ কয়েকটি আয়াতে তাঁর ক্ষমতা ও জ্ঞানের নিদর্শন সম্পর্কে কথা বলেছেন এবং মানুষকে একত্ববাদের দিকে আহ্বান জানিয়েছেন। এটা হচ্ছে মানবজাতির জন্য বৃহত্তম ইশতিহার যা পড়ে মানুষ বাস্তবতাগুলোর দিকে পরিচালিত হতে পারে। ইসলামের বিশ্বদৃষ্টি আমাদের এটা বলে দেয় যে, মানুষের প্রকৃতিই আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের উৎস। অর্থাৎ মানুষ অশেষ শক্তির অধিকারী বিশ্বজগতের স্রস্টার প্রতি নির্ভরশীলতা অনুভব করে। এই স্রস্টাই তার নজিরবিহীন দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতা নিয়ে বিশ্বজগতকে সৃষ্টি করেছেন।"

রুচুনগুরা মুসলমান হওয়ার পর নিজের জন্য মুসা নামটি বেছে নিয়েছেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ইসলামের শিক্ষাগুলো নজিরবিহীন। বহু বছর ধরে বিভ্রান্তির মধ্যে থাকার পর আমি সত্য বা প্রকৃত ধর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। আমি আমার নাম হিসেবে বেছে নিয়েছি মুসা নামক নামটি। এখন বিশ্বনবী (সা.)-ই আমার জীবনাদর্শ। কারণ, ইসলাম কোনো বিশেষ জাতি বা ভূখণ্ডের জন্য সীমিত নয়। বিশ্বনবী (সা.)'র কাছেই আল্লাহর সর্বশেষ বাণী নাজেল হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গোটামানব জাতির জন্য সুন্দরতম বক্তব্য।

ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে মুসলমান হওয়ার পর এই মহান ধর্মের ভবিষ্যত সম্পর্কে মুসা রুচুনগুরা বলেছেন,

"এমন এক যুগ আসবে যখন বিপুল সংখ্যক মানুষ ইসলামের পতাকাধারী হিসেবে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও রাজনীতিসহ বিশ্বের ঘটনা-প্রবাহের অগ্রদূত হবেন। অর্থাৎ মুসলমানরাই সব কিছুতে থাকবেন চালকের আসনে। তাই হে মানুষ, বিশ্বের যেখানেই থাকুন না কেন, আসুন, সবাই মিলে সত্য ও অপরাজেয় ধর্ম হিসেবে ইসলামের পতাকাকে বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত করি।"


সূত্র: পার্স টুডে


(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/ডিসেম্বর ২৯,২০১৮)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

ধর্ম এর সর্বশেষ খবর

ধর্ম - এর সব খবর