thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ১৮ জানুয়ারি 25, ৫ মাঘ ১৪৩১,  ১৮ রজব 1446

আউটসোর্সিংয়ের নামে ২০০ কোটি হাতিয়ে নেয় পলাশ

২০১৯ মে ১৩ ০০:৫০:৫৪
আউটসোর্সিংয়ের নামে ২০০ কোটি হাতিয়ে নেয় পলাশ

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : রেক্স আইটি ইনস্টিটিউট (Rex IT Institute) নামে ২০১৭ সালে কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন আব্দুস সালাম পলাশ। প্রতিষ্ঠানটিতে আউটসোর্সিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, এসইও, ওয়েব ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের প্রশিক্ষণ দেয়া হত। পেইড মার্কেটিংয়ের প্রচারণা বেছে নিয়ে বেকার প্রশিক্ষণার্থীদের পলাশ অফার দেয়, ‘বিনিয়োগ করলেই ৫০ থেকে শতভাগ রিটার্ন’।

পলাশের এমন আশ্বাসে প্রতিষ্ঠানটির পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী বিভিন্ন অংকের টাকা বিনিয়োগ করে। প্রথম বিনিয়োগকারীদের বেশি বেশি লাভ দেখিয়ে তাদের পেমেন্ট করা হতো। পরে বেশি লাভের আশায় মোটা অংকের টাকা বিনিয়োগ করেন প্রথম দিকের বিনিয়োগকারীরা। আর এটিকেই ফাঁদ হিসেবে নেন পলাশ। আর গত আড়াই বছরে হাতিয়ে নেন ২০০ কোটি টাকা।

গত বৃহস্পতিবার এক ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীর অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে আব্দুস সালাম পলাশকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি)। এ সময় তার কাছ থেকে একটি টয়োটা সেলুন কার, পাঁচটি ল্যাপটপ, তিনটি হার্ডডিস্ক ও ছয় লাখ টাকাসহ বিদেশি মুদ্রা এবং নন-ব্যাংকিং কাগজপত্র জব্দ করা হয়।

রোববার রাজধানীর মালিবাগে অবস্থিত সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আসলে প্রতারক পলাশ কোনো মার্কেটিং না করে এমএলএম ব্যবসার মতো কেবল মানুষের কাছে থেকে টাকা নিয়ে তা দিয়ে অন্যদের লাভ প্রদান করতো। অনেকে তার এ প্রতারণার ব্যাপারটি বুঝতে পারলে সে গা ঢাকা দেয়।

প্রথম দিকের বিনিয়োগকারীদের বেশি বেশি লাভ দেখানো হতো ও ক্যাশে তাদের পেমেন্ট দিয়ে দেয়া হতো ফলে তারা আরও বেশি টাকা নিয়ে এসে এখানে বিনিয়োগ করতো। পরবর্তীতে টাকার পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে তাদের আংশিক পেমেন্ট দেয়া হতো আর বলা হতো বাকি টাকা রি-ইনভেস্ট করা হয়েছে।

মোল্যা নজরুল বলেন, দীর্ঘদিন এ পেশায় জড়িত থাকায় তার আমেরিকান অ্যাকাউন্ট আছে, তার মাধ্যমেই ক্যাম্পেইন চলবে। তাদের সন্দেহ দূর করার জন্য অ্যাডভারটেন গোল্ড (ADVERTEN Gold) নামে একটি সাইট তৈরি করে যা দেখতে অরিজিনাল অ্যাডভারটেনের (ADVERTEN) মতো।

ভিকটিমদের বলা হয়, অ্যাডভারটেন (ADVERTEN) পলাশের কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য এ সাইট তৈরি করে দিয়েছে যেখানে সব ভিকটিমকে আলাদা সাব-অ্যাকাউন্ট তৈরি করে দেয়া হয়। সেখানে তিনি সবাইকে মনগড়া একটি হিসাব দেখাতেন।

জিজ্ঞাসাবাদে আব্দুস সালাম পলাশ সিআইডিকে জানায়, ভিকটিমদের বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত দেয়ার চাপের কারণে প্রায় দেড় মাস আগেই গা ঢাকা দেন তিনি। গ্রেফতার এড়াতে ঠিকানা গোপন, মোবাইলফোন নম্বর পরিবর্তন করেন। তবে প্রতারণা অব্যাহত রাখতে ফেসবুকে লাইভে এসে নতুন নতুন প্রজেক্ট ও সব বিনিয়োগকারীর জন্য আকর্ষণীয় অফার ও দেশের বাইরে বেড়াতে যাবার প্রচারণা ঠিকই চালাতেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পলাশ জানায়, প্রথমে ফ্রি মার্কেটিং ক্যাম্পেইনে আগ্রহীদের নিয়োগ করা হতো, পরবর্তীতে তাদের পেইড মার্কেটিংয়ে ঢুকিয়ে দেয়া হতো। তাদেরকে বলা হতো পেইড মার্কেটিং করার জন্য তাদের পেপাল অথবা ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়েসহ কার্ড থাকতে হবে। আর বাংলাদেশে যেহেতু পেপালের কার্যক্রম নেই তাই তারা এখনই সরাসরি মার্কেটিং করতে পারবে না।

মোল্যা নজরুল বলেন, ২০১০ সালে পলাশ আউটসোর্সিং শুরু করে। ২০১৬ সালে আইটি ভিশন এ ট্রেনার হিসেবে ৯ মাস কাজ করে। পরে ২০১৭ সালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে সে রেক্স আইটি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে। শুরুতে শিক্ষার্থীদের ট্রেনিং করালেও পরবর্তীতে প্রতারণায় জড়িয়ে পড়ে।

পলাশের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হয়েছ। বিষয়টি তদন্ত করছে সিআইডি।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/ মে ১২,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

অপরাধ ও আইন এর সর্বশেষ খবর

অপরাধ ও আইন - এর সব খবর