thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউল আউয়াল 1446

অবৈধঅর্থ:আর্থিক লাভবান কে ?

২০১৯ মে ১৮ ১৩:৩৪:০০
অবৈধঅর্থ:আর্থিক লাভবান কে ?

মফিজুল ইসলাম

বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গিকার ছিল “দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ। দুর্নীতি নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে এবং হচ্ছে। আর অবৈধ অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হল দুর্নীতি। আপাতদৃষ্টিতে ধারণা করা যায়, যারা ঘুষ বা অবৈধ অর্থ প্রদান করেন তারা যে পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন, যাঁরা এই অর্থ গ্রহণ করেন তাঁরা সেই পরিমাণ আর্থিকভাবে লাভবান হন। কেননা তুলনামূলক ভাবে তাঁরা অন্যদের চেয়ে বেশি সম্পদের মালিক হন এবং বিলাসবহুল জীবন যাপন করেন। যা দেখে অনেকে অবৈধ অর্থউপার্জন করতে উৎসাহিত হন এবং সুযোগ খোঁজেন। ধর্মীয় ও নৈতিকতার দৃষ্টিতে, দুর্নীতি বা অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে দুর্নীতিবাজরা যে লাভবান হন না তা বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন সবাই বোঝেন। কিন্তু দুর্নীতিবাজরা অর্থনৈতিক দৃষ্টিতে আসলে কতটুকু লাভবান হন নাকি ক্ষতিগ্রস্থ হন সেটা নিয়ে আলোচনা করা যাক।

অর্থনৈতিক সুবিধা বা অসুবিধা বুঝতে হলে আমাদের উপযোগ সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। কোন দ্রব্য বা সেবার অভাব পূরণ করার ক্ষমতাকে অর্থনীতিতে উপযোগ বা তৃপ্তি বলা হয়। যেমন- খাদ্য আমাদের ক্ষুধা নিবারণ করে, বিনোদন বিনোদনের অভাব নিবারণ করে, ডাক্তারের স্বাস্থ্যসেবা অসুখ নিবারণ করে ইত্যাদি। এখন, আপনি যদি কাউকে উপকার করেন, তবে যাকে উপকার করলেন, তিনি তো আপনার মাধ্যমে উপকার বা উপযোগ পেলেনই, আবার আপনিও উপকার করতে পেরে মনে তৃপ্তি পেলেন বা উপযোগ লাভ করলেন । আবার, আপনি যদি কাউকে ক্ষতি বা অপকার করেন, তাহলেও আপনি উপযোগ পাবেন তবে সেটা হবে ঋণাত্বক ।

অবৈধ অর্থ উপার্জন করে দুর্নীতিবাজরা অর্থনৈতিক দৃষ্টিতে কতটুকু লাভবান হন সেটা আমরা সংখ্যা দিয়ে বিশ্লেষণ করি। মনে করি, একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা দুর্নীতি করে বা অবৈধ ভাবে ১০০.০০ টাকা উপার্জন করলেন। সেই টাকা নিয়ে ভোগ্যপণ্য বা সেবা ভোগ করে তিনি তাঁর পরিবারসহ যে উপযোগ পেলেন তার পরিমাণ ৫০.০০ ইউনিট । তিনি হয়তো ভাবতে পারেন, দুর্নীতি করে তিনি ৫০.০০ ইউনিট পরিমাণ লাভবান হয়েছেন। কিন্তু তিনি কি পরিমাণ ঋণাত্বক উপযোগ পেলেন সেটা আমরা এবার বিবেচনা করি। যার কষ্টের টাকা তিনি অবৈধভাবে গ্রহণ করেছেন তার মতো তিনিও ঋণাত্বক উপযোগ পাবেন। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, সেটা উপলব্ধি করার মতো বিবেক তার নেই। হ্যা, হয়তো আজকে তিনি উপলব্ধি করবেন না, কিন্তু পরে একদিন উপলব্ধি করবেনই। সেটা হয়তো মৃত্যু-যন্ত্রণায় যখন কষ্ট পাবেন আর অবৈধ অর্থের জন্য আফসোস করবেন কিন্তু মাফ চাইতে পারবেন না, তখনও হতে পারে। যখনই তিনি এটা উপলব্ধি করবেন, তখন তিনি এর ঋণাত্বক উপযোগ পাবেন। ধরি, তার পরিমাণ ২০.০০ ইউনিট।

তিনি একজন সৎ মানুষ হিসাবে তাঁর সহকর্মীদের কাছ থেকে যে উষ্ণ-প্রশংসামূলক আচরণ পেতেন, একজন ঘুষখোর বা অবৈধ অর্থ উপার্জনকারী কর্মকর্তা হিসাবে তিনি তাঁর সহকর্মীদের কাছ থেকে সেই আচরণ পাবেন না ; এক্ষেত্রে তিনি যে উপযোগ পাবেন তা হবে ঋণাত্বক। ধরি, তার পরিমাণ ১০.০০ ইউনিট।

আবার তিনি দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অবৈধ অর্থের বেশিরভাগ যাদের জন্য ব্যয় করলেন সেই পরিবারের সদস্যদের কাছে তিনি একজন ঘুষখোর বা অসৎ মানুষ হিসাবে বিবেচিত। তার সন্তানরা তাদের বুকটা চওড়া করে গর্বভরে বলতে পারেনা যে, আমার বাবা একজন সৎমানুষ। কিংবা তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী অবৈধ অর্থে বিলাসিতা করে বেড়ালেও অন্যের কাছে স্বামীর সততার প্রশ্নে অন্যের সামনে লজ্জিত হন । এক্ষেত্রেও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা পরিবারের কাছ থেকে ঋণাত্বক উপযোগ পাবেন। ধরি, তার পরিমাণ ১০.০০ ইউনিট।

এভাবে তিনি তাঁর আত্নীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিতজনের কাছ থেকেও ঋণাত্বক উপযোগ পাবেন। ধরি, তার পরিমাণ ১০.০০ ইউনিট।

এখন আমরা মোট উপযোগ বের করি:

তিনি মোট উপযোগ পেলেন = ৫০.০০ ইউনিট

তিনি উপযোগ হারালেন = (-)৫০.০০ইউনিট (২০+১০+১০+১০)

বিয়োগফল = ০০ (শুন্য)

অর্থাৎ দুর্নীতিবাজ অর্থনৈতিক দৃষ্টিতে অবৈধ অর্থউপার্জন করে কোন লাভবান হননি।

এখন তিনি যদি কখনও ধরা পড়ে যান, তাহলে অবৈধঅর্থ বাজেয়াপ্ত হতে পারে (ঋণাত্বক উপযোগ ৫০.০০) এবং আইনের মাধ্যমে তিনি সাজা ভোগ করবেন (ঋণাত্বক উপযোগ ১০.০০)। এক্ষেত্রে তাঁর ঋণাত্বক উপযোগ হবে, ৫০+১০=৬০.০০ ইউনিট।

অন্যদিকে তিনিসহ তার পরিবার সমাজের কাছে অপমাণিত হবেন। যার পরিমাণ ধরি, ২০.০০ ইউনিট ।

এভাবে তাঁর নীট উপযোগ হবে (০০-৬০.০০-২০.০০)= (-) ৮০.০০ ইউনিট।

অন্যদিকে, একজন সৎ মানুষ, যিনি সততার সাথে অর্থ উপার্জন করেন। তিনি যে পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেন তা দিয়ে নিজ, পরিবার, আত্নীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিতজনের জন্য খরচ করে যে পরিমাণ উপযোগ লাভ করেন, তার সাথে আরো অনেক উপযোগ তিনি পান তাঁর সততার পুরস্কার হিসাবে। এটা তিনি সব সময়েই উপলব্ধি করেন। এমনকি, জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও আর্থিক স্বচ্ছতার কারণে তৃপ্তির হাসি দিতে পারেন ।

এখন এটা স্পষ্ট যে, অবৈধ অর্থ-তা যে পন্থায়ই হোক না কেন, কাউকে লাভবান করতে পারে না। বরং দাতা-গ্রহিতা সবাইকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে। এজন্য, অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনকারীদের ভাবতে হবে, তারা সাময়িকভাবে আর্থিক সুবিধা মনে করে প্রকৃতপক্ষে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন ? নাকি, সৎভাবে জীবন-যাপন করে- নিজ, পরিবার, আত্নীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিতজনের কাছে একজন ভাল মানুষ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আর্থিকসহ সার্বিকভাবে লাভবান হবেন।

লেখক: কলামিস্ট ও ব্যাংকার

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/ মে ১৮,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর