thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২১ জমাদিউল আউয়াল 1446

রমজান শেষের ভাবনা ও ঈদুল ফিতর

২০১৯ জুন ০৫ ১৬:১৮:৫৮
রমজান শেষের ভাবনা ও ঈদুল ফিতর

আবুল বাশার

রহমত, বরকত ও অফুরন্ত সওয়াব কামাইয়ের মাস রমজান এসেছিল মহা সমারোহে। চলেও গেল মুহূর্তে। আগমনের পূর্বে মনে হয় এখনো অনেক বাকী। আসলে মনে হয় কেবল তো শুরু। চলে গেলে মনে হয় ইস! এত তাড়াতাড়ি চলে গেল? আর কিছুদিন থাকলে আরও কিছু কল্যাণ হাসিল করতে পারতাম। জীবনটাও এভাবে শেষ হয়ে যাবে।

শুরুতে ভেবেছিলাম এবারের রমজানে গতবারের চেয়ে বেশি বরকত হাসিল করব। মাস শেষে এসে দেখছি তলানীতে তেমন কিছুই জমা হয়নি। তাহলে কি এবারের রোজা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হল? আল্লাহই ভাল জানেন। আয়নার সামনে দাঁড়ালে নিজেকে বেশ ফ্যাকাসে মনে হয়।ভয় হয় এখনই যদি পরপারের ডাক আসে তাহলে আল্লাহর কাছে গিয়ে কী জবাব দেব?

এ বছর দেখেছি অনেক সুস্থ সবল মানুষ দিনের বলায় গোগ্রাসে গিলছে। অথচ রাসূল (স) বলেছেন, রমজান মাসে যারা দিনের বেলায় খানাপিনা করে তারা তাদের পেট জাহান্নামের আগুন দিয়ে পূর্ণ করে।

কুরআন মাজীদে আল্লাহর হুকুম অমান্যকারীদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাবের সুসংবাদ (!) দেয়া হয়েছে। এদের পরিণতির কথা ভাবলে অন্তরটা আরও কেঁপে ওঠে।

মুনাফিকদের পরিণতির কথা বলা হয়েছে এভাবে- "মুনাফিকদেরকে সুসংবাদ দিয়ে দাও যে তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক আযাব প্রস্তুত রয়েছে।" (সূরা নিসা, আয়াত নং- ১৩৮)।

আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন- "কাফেরদিগকে মর্মান্তিক শাস্তির সুসংবাদ দাও।" (সূরা তাওবাহ, আয়াত নং- ৩)

কৃপণদের সম্পর্কে বলা হয়েছে- "যারা সোনা ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করেনা তাদেরকে কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দাও।" (সূরা তাওবাহ, আয়াত নং- ৩৪)।

এমনিভাবে সূরা ইনশিকাক-এর ২০-২৪ আয়াতে যারা আল্লাহর হুকুম অমান্য করে তাদেরকেও যন্ত্রণাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে।

দাগী আসামিকে পুলিশ যখন হ্যান্ডকাপ পরিয়ে নিয়ে যায় তখন তাকে দুই একটা বেতের বাড়ি দিলে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলতে থাকে সামান্য বেতের বাড়িতে কাতর হলে চলবে? থানায় যাও। রিম্যান্ডে নিলে আরও মজা পাবে। মহান আল্লাহ তায়ালা ঠিক তেমন বাচনভঙ্গি দিয়েই কথা বলেছেন। যাতে অপরাধীরা সতর্ক হতে পারে।

রোজার মাস তো চলেই গেল। যারা এ মাসে রোজা থাকেনি তাদের জন্য করণীয় কী?

এর জন্য কয়েকটি করণীয় দিক রয়েছে। যেমন-

১. যারা অসুস্থতাজনিত কারণে রোজা থাকতে পারেনি তারা সুস্থ হলে বাকী রোজাগুলো পূর্ণ করবে।

২. যে সমস্ত অসুস্থ ব্যক্তির সুস্থ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই তারা প্রতিটি রোজার জন্য দুই জন গরীব মানুষকে একবেলা অথবা একজন গরীব মানুষকে দুইবেলা পেটপুরে খেতে দেবে।

৩. সুস্থ থেকেও যারা রোজা থকেনি তারা খালেস দিলে তাওবা করবে এবং বাকী রোজাগুলো পূর্ণ করবে।

৪. সকল মানুষের উচিত হবে কুরআনের সাথ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা।

রাসূল (স) বলেছেন, কিয়ামতের দিন সিয়াম ও কুরআন আল্লাহর দরবারে বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। সিয়াম বলবে- "হে আমার রব, আমি ওকে পানাহার ও যৌনকর্ম থেকে বিরত রেখেছিলাম। সুতরাং ওর ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ কর। আর কুরআন বলবে, হে আমার রব, আমি ওকে রাত্রে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছিলাম। (ও রাত জেগে নামাযে কুরআন তিলাওয়াত করেছিল)। সুতরাং ওর ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ কর।" রাসূল (স) বলেন, ওদের উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। (মুসনাদে আহমাদ, হাকেম, বায়হাকী)।

রাসূল (স) বলেন, (কিয়ামতের দিন) কুরআনওয়ালাকে (পাঠক, হাফেজ ও তার উপর আমলকারীকে) বলা হবে কুরআন কারীম পড়তে থাক ও চড়তে থাক। যেভাবে দুনিয়াতে ধীরে ধীরে পড়তে সেভাবে পড়তে থাক। কেননা জান্নাতে তোমার স্থান হল তোমার পড়া যেখানে শেষ হবে সেখানে।" (তিরমিযি, আবু দাউদ, আহমাদ)।

এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, দুনিয়াতে কুরআনের সাথে যার যত বেশি সম্পর্ক বেশি হবে কিয়ামতে জান্নাতে তার মর্যাদা তত বেশি হবে।

এবার আসি ঈদের কথায়। সারা বিশ্বের মুসলিম একযোগে রমজানের চাঁদ দেখে রোজা থাকে আর শাওয়ালের চাঁদ দেখে রোজা ভাঙ্গে।

রমজান মাসে মুসলমানরা মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। শাওয়াল মাস থেকে রমজানের শিক্ষাকে কাজে লাগানো শুরু করে।

ঈদের মাঠে ধনী- গরীব, ছোট-বড়, সাদা-দালো, বংশ- গোত্র নির্বিশেষে এক কাতারে দাঁড়িয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার শপথ নিয়ে থাকে।

কুরআনের ঘোষণা অনুযায়ী ঐক্যবদ্ধ হওয়া ফরজ। আর বিচ্ছিন্ন হওয়া হারাম। কুরআনের ভাষায়, "আর তোমরা সকলে সম্মিলিতভাবে আল্লাহর রজ্জু সুদৃঢ়ভাবে আকড়ে ধর। আর পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। (সূরা

আমরা যদি কুরআন হাদীস ও ইসলামের ইতিহাস লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাব যে, ইসলামের কিছু কম গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত নফল বা মুস্তাহাব বিষয় যা আমল করা বা না করা নিয়ে রাসূল(স), সাহাবী ও তাবেয়ীদের আমলেও কোন দ্বন্দ্ব ছিল না। অথচ আজ তা নিয়ে মারামারিও হচ্ছে। এটা দুঃখজনক। এমতবস্থায় আমাদের উচিত হবে গৌন বিষয় গৌন রেখে মৌলিক বিষয়ে বিশ্বের সব মুসলমান ঐক্যবদ্ধ হওয়া।

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে হিংসা বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে আনন্দের সাথে ঈদের নামায আদায় করার তৌফিক দিন। আমীন।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জুন ০৫,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

ধর্ম এর সর্বশেষ খবর

ধর্ম - এর সব খবর