thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৭ জমাদিউল আউয়াল 1446

ডিআইজি প্রিজন পার্থের কথা বলেছিলেন জেলার সোহেল রানা

২০১৯ জুলাই ৩০ ১২:০২:৫১
ডিআইজি প্রিজন পার্থের কথা বলেছিলেন জেলার সোহেল রানা

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: ৮০ লাখ টাকাসহ গত রোববার (২৮ জুলাই) ঢাকা থেকে গ্রেফতার হয়েছেন সিলেট কারাগারের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) পার্থ গোপাল বণিক। তার সম্পর্কে আগেই তথ্য দিয়েছেলেন ভৈরবে ৪৪ লাখ টাকাসহ গ্রেফতার চট্টগ্রামের জেলার (বর্তমানে বরখাস্ত) সোহেল রানা বিশ্বাস।

গত বছরের ২৬ অক্টোবর সোহেল রানা বিশ্বাস ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনে ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকাসহ নিয়ে রেলওয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। এ সময় তার কাছে আড়াই কোটি টাকার বিভিন্ন ব্যাংকের এফডিআর, এক কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক, পাঁচটি চেক বই ও ১২ বোতল ফেনসিডিল পায় পুলিশ।

তখন পুলিশ বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে রেলওয়ে থানায় দুটি মামলা করে। এর মধ্যে একটি মানিলন্ডারিং আইনে এবং অপরটি মাদক আইনে মামলা করা হয়। এরপর মানিলন্ডারিং মামলাটি ময়মনসিংহ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অফিসে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেয় কর্তৃপক্ষ। মাদকের মামলায় রেলওয়ে পুলিশ কয়েকদিন আগে আদালতে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। বর্তমানে মানিলন্ডিরিং মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে।

ঘটনার একদিন পর সোহেল রানাকে কর্তৃপক্ষ সাময়িক বরখাস্ত করে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। একটি তদন্ত কমিটি করে কারা কর্তৃপক্ষ এবং অপরটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ঘটনার পর থেকে ওই জেলা সোহেল রানা কিশোরগঞ্জ কারাগারে বন্দি রয়েছেন। তিনি নিম্ন আদালতসহ উচ্চ আদালতে একাধিকবার জামিন আবেদন করলেও জামিন পাননি।

জেলার সোহেল রানা ভৈরবে গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে ১৬১ ধারায় জবানবন্দিতে বলেছিলেন- জব্দকৃত টাকা ডিআইজি প্রিজন পার্থ গোপাল বণিক ও জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিকের। এই টাকা ঢাকায় পার্থ গোপাল বণিকের বাসায় পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল জেলার সোহেল রানার।

তৎকালীন এই জেলার পুলিশের কাছে তথ্য দিয়েছিলেন- চট্টগ্রাম কারাগারে প্রতি মাসে অবৈধভাবে আয় হয় আড়াই কোটি টাকা। আয়ের ৪২ লাখ টাকার ভাগ তিনি পান আর বাকি টাকা পার্থ গোপাল বণিক ও প্রশান্ত কুমার বণিক পান। যদিও ওই সময় এই প্রতিনিধির কাছে পার্থ গোপাল বণিক ও প্রশান্ত কুমার বণিক এ কথা অস্বীকার করেছিলেন।

জেলার সোহেল রানা এর আগেও নানা অপকর্ম, অফিসিয়াল শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে চাকরি জীবনে দুইবার সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন। সেসময় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হলে ক্ষমা চেয়ে পার পান তিনি।

জেলার সোহেল রানার কাছ থেকে জব্দকৃত আড়াইকোটি টাকার এফডিআরের মধ্য ঘটনার দু'দিন পর তার স্ত্রী হোসনে আরা বেগম পপি ও তার শ্যালক রাকিবুল হাসান ময়মনসিংহের দুটি ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা তুলে নেয়। পুলিশের হাতে এফডিআর থাকলেও স্ত্রী ও শ্যালক তড়িঘড়ি করে কীভাবে এক কোটি টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিল এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। এ ঘটনা তদন্ত করছে দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা সাধন সূত্রধর। জেলার সোহেল রানার মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা তার ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ২৬টি ব্যাংক হিসাবের সন্ধান পেয়েছেন।

ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও যশোরের বিভিন্ন ব্যাংকে নামে বেনামে এসব হিসাব রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে তদন্তকারী কর্মকর্তা এ সকল হিসাব জব্দ করে জানতে পারেন হিসাবগুলোতে তিন কোটি টাকা এখনও জমা আছে। এসব হিসাবে গত দুই বছরে প্রায় ১০/১৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে বলে প্রমাণও মিলেছে বলে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা।

সোহেল রানা বিশ্বাস ভৈরবে গ্রেফতারের পর পুলিশকে জানিয়েছিলেন- চট্টগ্রাম কারাগারে কীভাবে অবৈধ টাকা রোজগার হয়। কারাগারের আটজন কারারক্ষী টাকাগুলো বিভিন্ন পন্থায় আদায় করে থাকেন। তার মধ্য কারাগারের ভেতর মাদক ব্যবসা অন্যতম। এছাড়া বিশেষ ব্যবস্থায় হাজতি ও বন্দিদের দেখা-সাক্ষাৎ, বিনাশ্রম কয়েদিকে কাজের ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়, দীর্ঘদিন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদেরকে স্ত্রীর সঙ্গে কারাগারে রাতযাপনের ব্যবস্থা, কয়েদিদেরকে নির্যাতন করে টাকা আদায়, ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিম্নমানের খাবার দেয়া, স্থানীয় বন্দিদেরকে দূরের কারাগারে পাঠানোর ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, হাসপাতালে রাখার ব্যবস্থা করে দেয়াসহ নানাভাবে কারাগারে টাকা আয় করা হয় বলে তিনি পুলিশকে সে সময়ে জানিয়েছিলেন।

জেলার সোহেল রানার মামলার দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা সাধন সূত্রধর জানান, গতকালের ঘটনার পর পার্থ গোপাল বণিক এই মামলার আসামি হতে পারেন। কারণ তিনি ৮০ লাখ টাকা কোথা থেকে আয় করলেন জানতে হবে। যদি চট্টগ্রাম কারাগার থেকে অবৈধভাবে এ টাকা আয় করেন তবে তিনি এই মামলার আসামি হবেন। এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

তিনি বলেন, এফডিআরের এক কোটি টাকা সোহেলের স্ত্রী ও শ্যালক কীভাবে তড়িঘড়ি করে ব্যাংক থেকে উত্তোলন করল তা তদন্ত করা হচ্ছে। এক কোটি টাকার উৎস বলতে না পারলে তারা দুজনও মামলার আসামি হবেন। তাদের ২৬টি হিসাবের মধ্য কয়েকটি হিসাবে প্রায় তিন কোটি টাকা জমা পাওয়া গেছে, যা জব্দ করা হয়েছে। এই টাকারও উৎস জানাতে হবে। দীর্ঘ ৯ মাস যাবত সোহেলের মামলাটি তদন্ত করলেও এখন পার্থ গোপাল বণিক ৮০ লাখ টাকাসহ গ্রেফতারের পর মামলার মোড় অন্যদিকে নেবে বলে জানান এই দুদক কর্মকতা।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/জুলাই ৩০,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

অপরাধ ও আইন এর সর্বশেষ খবর

অপরাধ ও আইন - এর সব খবর