thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১,  ২০ জমাদিউস সানি 1446

সুরাইয়া ইসলামের কবিতা

২০১৯ আগস্ট ১২ ০৩:০৫:৩০
সুরাইয়া ইসলামের কবিতা

সর্বজ্ঞ

অভ্যাসবশত আমিও রোজ কেবলামুখী হই
নতজানু হয়ে কার সাথে যেন বলতে থাকি কথা
অথচ প্রার্থনার মোনাজাতে
আমার কিছুই চাওয়া হয় না।

কান্নায় অভ্যস্ত মানুষগুলো কেঁদে চলে অবিরাম
কিন্তু আমি কাঁদি না
আমি কেবল তালগাছ ঘেরা
স্বচ্ছ পুকুরে হারিয়ে যাই
অথবা শহুরে রাস্তায়
গায়ে গায়ে ধাক্কালাগা মানুষগুলোর মাঝে
নিজেকে মূর্খ মনে হয়
নির্দিষ্ট করতে পারি না

প্রভুর কাছে আমার কি চাওয়া উচিত
আদতে এত বাছ-বিচারের কিইবা আছে
প্রভুতো সর্বজ্ঞ।

শেষবেলা

আরও কতো ফুল ফোটা বাকি
এসো আরও কিছু বীজ বুনি
নাইবা দেখা হলো ভুট্টার বেড়ে ওঠা দিন
পাশ ফিরে শুয়ে থাকা দেখে
আমিও হস্তমৈথুনে অভ্যস্ত ফড়িং
আদিম অক্ষরগুলোর মানে না খুঁজে
এসো বরং ফ্রাইপ্যানে পপকর্ন ফোটা দেখি

পোয়াতি

সেদিন চাঁদ উঠেছিল বিড়লা কুঠির শেষ প্রান্তে,
মাটির কোল ঘেঁষে তুমি তখন শীতের রাতের মৃত হৃদয়ের প্রেত
আর আমি পোয়াতি মেহগনির ফাটা ত্বক
সুখাবিষ্ট হাসি হেসে তোমার বাহু জড়িয়ে বললাম
‘অভ্যস্থ জীবন ছেড়ে আমি চলে যাচ্ছি’
নির্বাক তোমার নিঃশ্বাসের ওঠা-নামায় মনে হচ্ছিল,
এক্ষুণি যেন ঘোড়ার পিঠে বিহার করে ফিরলে
নাভীর তলদেশ পর্যন্ত বার বার পাক খাচ্ছিল
যে ভালোলাগার স্তুতি

ভালোভাবে খেয়াল করে দেখেছি
আদতে ওটা একটা মণ্ডহীন সরীসৃপ
অর্ধনিমীলিত চোখে বুকভরে টেনে নিলাম
সিরিঙ্গার গন্ধসংক্রমিত অবসাদ
ঘাসের ওপর পড়ে থাকলো প্রলম্বিত
দেবদারুর ছায়ার চেয়েও বিশাল এক বিষন্নতার ছায়া।


দোলনা হারানো দিন

একদিন কলোনির বড় শিমুল গাছটির তলায়
আমার কৈশোরকে হারিয়ে ফেললাম

মিতু কতবার ডেকে গেল- এই, কিরে খুঁজবি না?
আমি একদিনও খুঁজতে যাইনি
আমার কেমন যেন ভয় করতো
মলিন আকাশে মেঘে ঢাকা দুঃখী চাঁদটাকে দেখেও
আমার মন খারাপ হতো।
এমনকি হুসনাদের বুড়ো আমগাছটায় ঝোলানো
দোলনায় চড়তেও আমি খুব ভয় পেতাম
অদ্ভুত এক গতি অসুস্থতা আমাকে তাড়িয়ে বেড়াতো।

আমার মেয়েটির গতি অসুস্থতা নেই
দোলনায় চড়া ওর খুব পছন্দের
বেলকোনির গ্রিলে একটি ওড়না বেধে দিলেই
দিব্বি দোল খেয়ে কাটিয়ে দেয় সারাদিন
অথচ ছয়তলার বেলকোনিতে একদিন মেয়েটাও
তার শৈশব হারিয়ে ফেলল

সারাটা বিকেল আমরা দু’জন খুঁজতে থাকলাম।
বেলকোনির কোণে পুঁইশাকের জংলা

উত্তরে রঙ্গন, বেলি ফুলের ঝোঁপ
আর দক্ষিণের গ্রিলে মগে ঝোলানো মানিপ্লান্ট
কোত্থাও খুঁজে পেলাম না।
হঠাৎ যেন শহুরে বৃষ্টির অন্তর্বাস থেকে উঠে আসা
ডাস্টবিনের ভারী গন্ধের মধ্যে অকাললুপ্ত হয়ে গেল সব।
এরপর আমি আর মেয়ে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে
কেবল বজ্রপাতের শব্দ শুনতে থাকলাম।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/আগস্ট ১১,২০১৯)


পাঠকের মতামত:

SMS Alert

সাহিত্য এর সর্বশেষ খবর

সাহিত্য - এর সব খবর