thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি 25, ১ মাঘ ১৪৩১,  ১৪ রজব 1446

রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আছে জামাই আদরে!

২০১৯ সেপ্টেম্বর ০১ ১৩:০৮:৫৮
রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আছে জামাই আদরে!

কক্সবাজার প্রতিনিধি: এই মুহূর্তে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখেরও বেশি। সরকার ও বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তারা বেশ আয়েশী জীবনযাপন করছেন। উখিয়া ও টেকনাফের স্থায়ী বাংলাদেশি নাগরিকরা ঠিকমতো টিউবওয়েলের পানি না পেলেও রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে সরবরাহ করা হচ্ছে বোতলজাত পানি। রোহিঙ্গা শিশু ও নারীরা পাচ্ছে উচ্চ আমিষ সমৃদ্ধ খাবার।

প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, এসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কারণেই দীর্ঘ দুই বছর পরও রোহিঙ্গারা নানা অজুহাতে বাংলাদেশ ছেড়ে মিয়ানমারে ফিরে যেতে চান না। আর এই প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, ‘তাদের আরাম কিছুটা কমিয়ে দিতে হবে।’

প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গা শিশুদের শরীরে পুষ্টি বাড়াতে দেওয়া হচ্ছে সয়াপ্রোটিন বিস্কুট। বয়স অনুপাতে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শিশুখাদ্য হিসেবে দুগ্ধজাত খাদ্য ও সেরেলাক। অপুষ্টিতে ভোগা রোহিঙ্গা নারীদের দেওয়া হচ্ছে উচ্চ আমিষসমৃদ্ধ খাবার। যা শরীরে দ্রুত কাজ করে।

স্থানীয়রা বলছেন, সরকার ও দাতাদের কাছ থেকে পাওয়া খাওয়া-দাওয়া ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বাবদ যা পায় তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। অতিরিক্ত ত্রাণ-সামগ্রী হিসেবে পাওয়া পণ্যসামগ্রী বিক্রি করার জন্য রীতিমতো দোকান খুলে ব্যবসা সাজিয়েও বসেছে রোহিঙ্গারা। উখিয়া টেকনায় ও কক্সবাজারের আশে-পাশে এসব দোকান অহরহই চোখে পড়ে। জনমনে এখন প্রশ্ন—রোহিঙ্গারা আসলে কী খায়? কী কী পণ্য তারা ব্যবহার করে?

উল্লেখ্য, ১৯৯১-৯২ সালে ৩৩ হাজার ৫৪২ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তখন মিয়ানমার সরকার তাদের ফেরত নেয়নি। সেই থেকে তারা টেকনাফ ও উখিয়ায় অবস্থান করছে। পরবর্তী সময়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানে আরও ৭ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৫ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করলে রোহিঙ্গা সংকট ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। জাতিসংঘের হিসাবে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ১৮ হাজার ৯৫১ জন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ্ কামাল বলেন, ‘আগের যারা ছিল, তাদেরসহ প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের সমন্বয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)সহ জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় এনজিওর সহায়তায় মিয়ানমার নাগরিকদের জন্য মানবিক সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে।’

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির দুই থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট পরিবারের জন্য প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল, নয় কেজি ডাল ও তিন লিটার ভোজ্য তেল দেওয়া হচ্ছে। চার থেকে সাত সদস্যের পরিবারের জন্য জন প্রতি মাসে ৬০ কেজি চাল, ১৮ কেজি ডাল ও ছয় লিটার ভোজ্য তেল এবং আটের বেশি সদস্যের পরিবারের জন্য প্রতি মাসে ১২০ কেজি চাল, ২৭ কেজি ডাল এবং ১২ লিটার ভোজ্য তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি প্রতি মাসে দুই রাউন্ডে এসব খাদ্য সমগ্রী বিতরণ করে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এসব কার্যক্রম তদারকি করে।’

শাহ কামাল আরও বলেন, ‘এ পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে ৫০০ টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের জন্য। বাংলাদেশের জনগণ প্রাথমিকভাবে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা বাবদ পাওয়া বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের ১৪টি গোডাউনে সংরক্ষিত রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পানীয় পানির সরবরাহ দিতে সরকারের ব্যবস্থাপনায় কয়েকশ গভীর ও অগভীর টিউবওয়েল বসানো হলেও রোহিঙ্গারা আসলে সে পানি পান করে না। এসব টিউবওয়েলের পানি দিয়ে তারা গোসল, থালাবাসন ধোয়াসহ দৈনন্দিন কাজকর্ম সারে। খাবারের জন্য তারা বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠী বা এনজিওদের কাছ থেকে ত্রাণ হিসেবে পাওয়া শুকনা খাবারের প্যাকেটে মিনালের ওয়াটারে বোতল থাকে। সেই বোতলের পানিই তারা পান করে। বাড়তি বোতলজাত পানি তারা বিক্রি করে বলেও শুনেছি।’

সিনিয়র সচিব মো. শাহ্ কামাল বলেন, ‘সব ক্যাম্পে এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৭৭১টি নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬ হাজার ৭টি অগভীর নলকূপ, ৩ হাজার ৬৩২টি গভীর নলকূপ ও ১১টি কুয়া স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া, উখিয়ার কুতুপালং-বালুখালী নতুন ক্যাম্প এলাকার ১২ নং ক্যাম্পে জাইকা, আইওএম ও ডিপিএইচই’র যৌথ উদ্যোগে ৩০ হাজার লোকের জন্য পানি সরবরাহের উপযোগী ১ হাজার ৪০০ ফুট গভীরতাসম্পন্ন একটি বৃহৎ নলকূপ বসানো হয়েছে।’

জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের জন্য সরবরাহ করা বিভিন্ন সংস্থা বা এনজিও বা জাতিসংঘের দেওয়া খাবারের বক্সে বিভিন্ন প্রকার ফলের জুসেরও প্যাকেট সরবরাহ করা হয়। এই সুবাদে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন প্রকার ফলের রসও খায়। গর্ভবতী রোহিঙ্গা মহিলাদের অপুষ্টি দূর করতে হাই প্রোটিন সমৃদ্ধ প্যাকেটজাত খাবার সরবরাহ করা হয় বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. আফসার উদ্দিন।

তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘শুরু থেকেই অপুষ্টিজনিত কারণে দুর্বল গর্ভবতী মহিলাদের সরকারের নির্দেশেই হাসপাতালে এনে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও খাবার দেওয়া হচ্ছে। এসব খাবারের তালিকায় ভাত, ডাল, মাছ মাংস, বিভিন্ন মৌসুমী ফলসহ উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার ও শিশুদের দেওয়া হয় সেরেলাকসহ দুগ্ধজাত খাদ্য। কোরবানির সময় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেওয়া হয়েছে সাড়ে তিন হাজার গরু। যা তারা নিজেরাই জবাই করে ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছে।’

এ বিষয় জানতে চাইলে কক্সবাজারের সাবেক ডিসি আলী হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের জন্য যেসব খাবার দেওয়া হয়, বা তারা যা খায়, তা উখিয়া চেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দারা অনেকে কল্পনাও করে না।’ তিনি বলেন, ‘সয়াপ্রোটিন বিস্কুট অত্যন্ত দামি। যা আমাদের দেশের বিত্তবানরা খায়। কিন্তু কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসকারী বা বেড়ে ওঠা শিশুদের কাছে এটি একটি পরিচিত খাদ্য।’

জানতে চাইলে চট্টগামের বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নান বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের জন্য শুধু কি দামি খাবার? তাদের ব্যবহারের জন্য বিছনার চাদর হাড়িপাতিল কম্বল সবই খুব দামি। এসব জিনিসপত্র রোহিঙ্গারা কোনও দিনই ব্যবহার করেনি।’ তিনি বলেন, ‘জীবনের চাহিদার চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত জোগান পাওয়ায় স্বদেশে ফিরতে চাচ্ছে না রোহিঙ্গারা। এ সবের বাইরেও রোহিঙ্গাদের শারীরিক পুষ্টির চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় এনে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা মাছ মাংস সরবরাহ করে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো শহীদ উল্লাহ বলেন, ‘রোহিঙ্গারা তো এদেশে জামাই আদরে আছে। এত আরাম আয়েশে থাকলে কে এই সুযোগ ছেড়ে যায়? কামাই রোজগার করা লাগে না। অথচ হাই লেভেলের খাদ্যখাবার ও সুবিধা ভোগ করছে তারা।’ তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সামগ্রী এখন টেকনাফ, উখিয়া, কক্সজার, চকরিয়া পেরিয়ে চট্টগ্রাম শহরের অলিগলিতে সহজলভ্য হয়েছে।’ হাত বাড়ালেই নিত্য এসব পণ্য পাওয়া যাচ্ছে বলেও তিনি জানান।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/সেপ্টেম্বর ০১ ,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর