thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি 25, ২৬ মাঘ ১৪৩১,  ৯ শাবান 1446

বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না: প্রধানমন্ত্রী

২০২০ জানুয়ারি ১০ ১৮:২০:২০
বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না: প্রধানমন্ত্রী

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) বিকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে রাজধানীর তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বক্তব্যের শুরুতে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের ২০ বছরের সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। বাঙালি জাতি মুক্তি পেয়েছিল। শেখ মুজিবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে, যার কাছে যা আছে, তা নিয়ে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছিল। শেখ মুজিবের জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হতে পারতো না। আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদা অর্জন করতে পারতাম না।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আরও বলেন, ২৫ মার্চ যখন পাকিস্তানি হানাদাররা হামলা শুরু করেছিল ঠিক তখনই জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয় অর্জন করেছিল। কিন্তু পাকিস্তানিরা এ বিজয় মেনে নিতে পারেনি। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে যার যা আছে তাই নিয়ে যুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। নির্দেশ দেন বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। বাংলার জনগণ তার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন। ৭ মার্চের ভাষণের পর ২৫ মার্চ পর্যন্ত পাকিস্তানি শাসন অচল হয়ে পড়েছিল। ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে তিনি যে নির্দেশ দিতেন সে অনুযায়ী দেশ চলতো। ৭ মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও যুদ্ধে বিজয় যে অবশ্যম্ভাবী, সে নির্দেশ দিয়েছিলেন। বাঙালি তার নির্দেশ পালন করে সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েছিল।

তিনি বলেন, ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদাররা আত্মসমর্পণ করে। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক চাপে পাকিস্তানিরা বাধ্য হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে। আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ ভারত আমাদের সহায়তা করেছিল। আমাদের শরাণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল, অস্ত্র দিয়েছিল। এমনিক যারা জাতিসংঘে আমাদের সমর্থন দিয়েছিলেন আমি তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ৮ জানুয়ারি জাতির পিতা পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তি পান। সেখান থেকে লন্ডন যান। তারপর দিল্লিতে হয়ে তিনি বাংলাদেশে আসেন। ১০ জানুয়ারি তিনি বাংলার মাটিতে ফিরে আসেন। আমরা ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করেছিলাম সত্য কিন্তু তারপরও বঙ্গবন্ধু দেশে না ফেরা পর্যন্ত সকলের কাছে মনে হয়েছিল স্বাধীনতার আনন্দ যেন অধরা।

দেশের মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের কথা উল্লেখ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলার মানুষের কথা বলতে গিয়ে তিনি জীবনের অনেক সময় কারাগারে কাটিয়েছেন। এ দেশের মানুষ যেন অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা ও উন্নত জীবন পায় এটাই ছিল তার স্বপ্ন। জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো, এটাই আমার প্রত্যয়।

মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা উদ্বোধন ঘোষণা করে তিনি বলেন, আজ জাতির পিতা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিন। এই দিনেই তার জন্মশতবাষির্কী উদযাপনের ক্ষণগণনা ঘোষণা করছি। যে দিনে তিনি তার প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরে এসেছিলেন, সে দিনই তার জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠান উদযাপনের ক্ষণগণনা ঘোষণা করছি। স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমার মনে পড়ে বঙ্গবন্ধু বাংলার মাটিতে এসে কিন্তু আমাদের কথা ভাবেননি। তিনি চলে গিয়েছিলেন রেসকোর্স ময়দানে, তার প্রিয় জনগণের কাছে। তারপরে আমরা তাকে পাই। তিনি এ দেশের মানুষকে গভীরভাবে ভালোবেসেছেন। চেয়েছিলেন এ দেশের মানুষ সুন্দর জীবন পাবে। যে বিজয়ের আলোকবর্তীকা তিনি আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন সে মশাল নিয়ে আমরা আগামী দিনে চলতে চাই। বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্রমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে চাই। বিশ্ব দরবারে মাথা উচু করে চলবে সম্মানের সঙ্গে চলবে বাংলাদেশ।

প্যারেড গ্রাউন্ডে আরও উপস্থিত ছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। উপস্থিত আছেন প্রায় ১২ হাজার দর্শক।

প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধু। ঐতিহাসিক এই দিনটিতেই মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা শুরুর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। আগামী ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে এই আয়োজনের মূল অনুষ্ঠান হবে। অনুষ্ঠানের সার্বিক বিষয় তত্ত্বাবধান করছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় কমিটিও গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে একটি বাস্তবায়ন কমিটিও গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, আওয়ামী লীগের গত সরকারের ১০ জন মন্ত্রী, বর্তমান সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, ঢাকার দুই মেয়র, তিন বাহিনীর প্রধান, পুলিশ মহাপরিদর্শক, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, দুজন সাবেক গভর্নর, বিভিন্ন ধর্মের মানুষের প্রতিনিধি এবং বেশ কয়েকজন সাংবাদিক, শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মী।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/জানুয়ারি ১০,২০২০)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর