thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৮ জমাদিউল আউয়াল 1446

দিল্লিতে শত শত মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন যে বীর পুলিশ

২০২০ ফেব্রুয়ারি ২৯ ১৯:২৫:২৮
দিল্লিতে শত শত মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন যে বীর পুলিশ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: ভারতের দিল্লিতে ধর্মীয় সহিংসতার সময় জনসাধারণের জীবন-সম্পদ রক্ষা করে বীর আখ্যায়িত হয়েছেন উত্তর প্রদেশের পুলিশ সুপার নীরাজ জাদাউন। তাকে নিয়ে চলছে জয়ধ্বনি। ডাকা হচ্ছে ‘হিরো কপ’ (বীর পুলিশ) নামে।

ঘটনায় বর্ণনা করতে গিয়ে নীরাজ বলেন, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি একটি সীমান্ত চৌকিতে টহল দিচ্ছিলেন তিনি। আচমকা তার অবস্থান থেকে ২০০ মিটার দূরে উত্তর-পূর্ব দিল্লির কারওয়াল নগরে থেকে তিনি গুলিবর্ষণের শব্দ শুনতে পান।

এসময় তিনি দেখেন ৪০-৫০ জন মানুষের একটি দল যানবাহনে আগুন দিচ্ছেন আর তাদের মধ্যে একজন হাতে পেট্রল বোমা নিয়ে একটি বাড়িতে ঢুকে পড়েন। ঠিক সেই মুহূর্তে জাদাউন সিদ্ধান্ত নেন তিনি পুলিশের ঐতিহ্যবাহী প্রোটোকল ভাঙবেন। এরপর প্রাদেশিক সীমানা ছেড়ে দিল্লি সীমান্তে প্রবেশের দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত নেন।

ভারতে সীমানা ছেড়ে অন্য রাজ্যে প্রবেশ করতে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নানারকম অনুমতি নিতে হয় পুলিশকে। তবে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর যে তাড়া নীরাজ জাদাউনের ভেতর কাজ করেছিল তখন, তা রাষ্ট্রীয় আইন লঙ্ঘন থেকে পিছপা হতে দেয়নি।

নীরাজ বলেন, ‘ব্যাপারটি আসলে খুব বিপজ্জনক ছিলো। আমরা দাঙ্গাবাজদের চেয়ে সংখ্যায় কম ছিলাম আর তারা ছিলো সশস্ত্র। শুরুতে আমরা সমঝোতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে আমরা তাদের বলি, শান্ত হও- না হলে পুলিশ গুলি চালাবে। এ ঘোষণার পর তারা পিছু হটলেও সেকেন্ডের মধ্যে আমাদের দিকে পাথর ছোড়া শুরু করে এবং আমরা গুলিরও শব্দ পেয়েছিলাম।’

উত্তর-পূর্ব দিল্লির দাঙায় এরই মধ্যে ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছে অন্তত ২ শতাধিক।

এদিকে নীরাজ জাদাউনের সিদ্ধান্তকে ‘দুঃসাহসী কর্মকাণ্ড’ বলে আখ্যায়িত করেছেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় হিন্দি ভাষার পত্রিকা ডেইলি আমার উজালার প্রতিবেদক রিচি কুমার। তার ভাষায়, এমন সাহসী কর্মকাণ্ড তিনি কখনো দেখেননি।

তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি খুবই বিপজ্জনক ছিলো। দাঙ্গাকারীরা পুরোপুরি সশস্ত্র ছিল এবং তারা কারও কথা শুনতে চাইছিল না।’

একই এলাকার মুরতাজা নামের একজন মুসলিম জানান, তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিবেশীরা তাকে পালাতে নিষেধ করেন। তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে নিশ্চিত করেন যে তারা কাউকে আমাদের ক্ষতি করতে দেবেন না।’

পুলিশ কর্মকর্তা নিরাজ জাদাউন বলেন তিনি যেসব দাঙ্গাবাজদের দেখেছেন তারা আগুন জ্বালানোর প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিলো। তিনি বলেন, ‘এই এলাকায় অনেক দোকানে বাঁশের মজুদ রয়েছে। আগুন ধরে গেলে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়তো আর তা ঘটতে দিলে দিল্লিতে নিহতের সংখ্যা অনেক বেশি বেড়ে যেত।’

তবে নায়ক হিসেবে আখ্যায়িত হতে থাকায় অস্বস্তিতে পড়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা নিরাজ জাদাউন। তিনি বলেন, ‘আমি নায়ক নই। আমি যে কোনো ভারতীয় রক্ষার শপথ নিয়েছি। আমি শুধুমাত্র আমার কর্তব্য করেছি কারণ চোখের সামনে মানুষ মরতে দিতে পারি না। আমরা থামানো মতো অবস্থায় ছিলাম আর সেটাই করেছি।’

প্রসঙ্গত, দিল্লি দাঙ্গার মধ্যে এমন ঘটনা আরো ঘটেছে। সহিংসতা চাঁদবাগে বিয়ে ভেস্তে যাওয়া এক হিন্দু তরুণীর বিয়ে হয়েছে প্রতিবেশী মুসলিম ভাইদের পাহারায়। মসজিদে একদল দুর্বৃত্তের আগুন লাগিয়ে দেয়ার ঘটনার পর আগুন নেভাতে ছুটে গিয়েছিলেন অশোকনগরের সুভাস শর্মা। মুরতাজা নামের একজন মুসলিম আশ্রয় নেন প্রতিবেশী হিন্দুরা।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ফেব্রুয়ারি ২৯,২০২০)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশ্ব এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ব - এর সব খবর