thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি 25, ৯ মাঘ ১৪৩১,  ২৩ রজব 1446

আজ সত্যজিৎ রায়ের ৯৯তম জন্মদিন

২০২০ মে ০২ ১৪:৩৭:০৩
আজ সত্যজিৎ রায়ের ৯৯তম জন্মদিন

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: চলচ্চিত্র জগতে তিনি এক বিস্ময় বললে ভুল বলা হবে না। বিজ্ঞাপনের কাজ ছেড়ে চলচ্চিত্র জগতে এসে তিনি নিজেও বিস্মিত হয়েছিলেন বেশ কয়েকবার। বলছি, প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার, সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পী সত্যজিৎ রায়ের কথা। ‘বিষয় চলচ্চিত্র’ বইতে সত্যজিৎ রায় বলেছেন, “কাজের আনন্দ এবং কাজের পারিশ্রমিক, এই দুই-এরও অতিরিক্ত কিছু যে চলচ্চিত্র থেকে লাভ হতে পারে সেটা গোড়ায় জানা সম্ভব ছিল না। আজ জানি যে, একটা ছবি নির্মাণের কালে এমন সব অভিজ্ঞতা হয় যার সঙ্গে হয়ত সে-ছবির সরাসরি কোনও যোগ নেই , কিন্তু যা মনে গভীর দাগ রেখে যায়।”

মহান সৃষ্টিশীল এ মানুষটির আজ ৯৯তম জন্মদিন। ১৯২১ সালের এই দিনে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। জন্ম কলকাতায় হলেও বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁর ছিল আত্নিক সম্পর্ক। সত্যজিৎ রায়ের পূর্ব পুরুষরা ছিলেন বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার বড় মাসুয়া গ্রামের অধিবাসী। সে হিসেবে তাঁকে এই বাংলার বললেও খুব একটা ভুল হবে না।

চলচ্চিত্রের তিনি কি না ছিলেন? চলচ্চিত্র নির্মাণের বাইরে তিনি ছিলেন একাধারে গীতিকার, সংগীত পরিচালক কল্পকাহিনী লেখক, প্রকাশক, চিত্রকর, গ্রাফিক নকশাবিদ ও চলচ্চিত্র সমালোচক। সব কিছুতেই রয়েছে তার উজ্জল অবদান।

অনেকেই জানেন না তিনি বেশ ভালো ছবিও তুলতে পারতেন। আর সেই দক্ষতা ধরা দেয় মাত্র ১৪ বছর বয়সে। ১৯৩৬ তাঁর তোলা ছবি বিদেশি পত্রিকা বয়েজ ওন পেপার-এ প্রথম পুরস্কার পায়। সে বছরই ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন সত্যজিৎ। ১৯৪০ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তি নিকেতনের কলা ভবনে ভর্তি হন সত্যজিৎ। বলা যায় এখানেই প্রখ্যাত চিত্রকর নন্দলাল বসুর হাতে শিল্পী সত্যজিৎ- এর জন্ম ঘটে।

কর্মজীবন একজন বাণিজ্যিক চিত্রকর হিসেবে শুরু করলেও নির্মাণে আসেন অন্যভাবে। প্রথমে কলকাতায় ফরাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা জঁ রনোয়ারের সাথে সাক্ষাৎ ও পরে লন্ডন শহরে সফররত অবস্থায় ইতালীয় বাস্তবতাবাদী ছবি লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে দেখার পর তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্বুদ্ধ হন।

নির্মাণে এসে প্রথম ছবিতেই নিজের জাত চেনালেন সত্যজিৎ। একেবারে বাজিমাৎ যাকে বলে, তেমনটি করেছেন তিনি। ১৯৫২ সালে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘পথের পাঁচালী’ থেকে সিনেমা নির্মাণ করেন ‘পথের পাঁচালী’। টাকার অভাবে শেষ করতে বিলম্ব হয় অনেকটা দিন। শেষমেষ মুক্তি পায় ১৯৫৫ সালে। অস্কারসহ দুনিয়াব্যাপি খ্যাতি পায় সিনেমাটি।

ডকুমেন্টারি ফিল্ম, শর্ট ফিল্ম, ফিচার ফিল্মসহ সত্যজিৎ রায় পরিচালনা করেছেন মোট ৩৭ টি ছবি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অপরাজিত, পরশপাথর, জলসাঘর, অপুর সংসার, দেবী, তিনকন্যা, কাঞ্চনজঙ্ঘা, অভিযান, মহানগর, চারুলতা, গুপী গাইন বাঘা বাইন, হীরক রাজার দেশে, অরণ্যের দিনরাত্রি, অশনি সংকেত, সোনার কেল্লা, ঘরে-বাইরে, গণশত্রু, শাখা-প্রশাখা, আগন্তুক।

বিখ্যাত পথের পাঁচালি, অপরাজিত ও অপুর সংসার এই তিনটি চলচ্চিত্রকে একত্রে অপু ত্রয়ী বলা হয়, এবং এই চলচ্চিত্র-ত্রয়ী তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ বা ম্যাগনাম ওপাস হিসেবে বহুল স্বীকৃত।

তিনি বাংলা চলচ্চিত্রে অতুলনীয়। বিশ্ব চলচ্চিত্রে বিভিন্ন সমলোচকরা তাকে কখনো আন্তন চেখভ, জঁ রনোয়ার, হাওয়ার্ড হক্স, ভিত্তোরিও দে সিকা অথবা কখনো ভোল্ফগাং, আমাদেউস মোৎসার্ট কিংবা শেক্সপিয়ারের সঙ্গেও তাকে তুলনা করা হয়েছে। সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী ভি এস নাইপল শতরঞ্জ কে খিলাড়ি-র একটি দৃশ্যকে শেক্সপিয়ারের নাটকের সাথে তুলনা করেন!

সত্যজিৎ রায়ের বর্ণময় কর্মজীবনে বহু পুরস্কার পেয়েছেন। তবে এগুলির মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হল ১৯৯২ সালে পাওয়া একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কারটি (অস্কার)।

বাংলা সাহিত্যে সত্যজিৎ রায় একটা বড় জায়গা দখল করে আছেন। বিশেষ করে শিশুতোষ গোয়েন্দা কাহিনী ফেলুনাথ সিরিজ ছেলে-বুড়ো সবার প্রিয়। এছাড়া বিজ্ঞানী প্রফেসর শঙ্কুও সবার কাছেও দারুণ পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিল। তিনি একাধিক ছোট গল্প লিখেছেন।

১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন এই মহান চলচ্চিত্রকার। মৃত্যুর মাত্র একসপ্তাহ আগে সত্যজিৎ রায় পান বিশ্ব চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সন্মানজনক অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড (অস্কার)। জীবদ্দশায় তিনি অর্জন করেন ৩২টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার।

কিংবদন্তি এই চলচ্চিত্র নির্মাতার জন্মদিনে শুভেচ্ছা ও বিনম্র শ্রদ্ধা।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০২মে,২০২০)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জলসা ঘর এর সর্বশেষ খবর

জলসা ঘর - এর সব খবর