thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১,  ২১ জমাদিউস সানি 1446
মো: মাকসুদুর রহমান

যাকাত ধনীদের সম্পদে গরীবের হক

২০২০ মে ০৫ ২৩:২৬:০৪
যাকাত ধনীদের সম্পদে গরীবের হক

সকল বিষয়ে ইতিবাচক থাকতে পরলে ভাল। কিন্তু কিছু অনুভূতি আছে যা সবসময় ইতিবাচকভাবে প্রকাশ করতে গেলে তার মূল স্পিরিটটা প্রকাশিত হয় না। সে কারণে নীচের কথাগুলোতে যদি কেউ কষ্ট পান তাঁদের কাছে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

যাকাত ধনীদের সম্পদে গরীবের হক। হক বলতে যা বুঝায় তা হলো অধিকার। ইংরেজীতে যাকে বলে Right। আরও সহজভাবে বললে যাকাতকে যেভাবে বলা যায় তাহলো কেউ তার দাস বা চাকরের কাছ কোন জিনিস রেখে বললো ঐ সময়ে তুমি অমুককে জিনিসটা দিয়ে দিবে। যদি ঐ দাস বা চাকর নির্দেশ মত কাজ না করে তাহলে তার মাধ্যমে কি কি অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে?

প্রথমত, সে তার মনিবের হুকুম অমান্য করে নাফরমানী করছে।

দ্বিতীয়ত, সে তার মনিবের এবং মনিব যাকে তাঁর সম্পদ দিতে বলেছিলেন তার (অর্থাৎ গরীবের) সম্পদ আত্মসাৎ করছেন।

এখন প্রশ্ন হলো যিনি যাকাত দেওয়ার মত নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকার পরেও যাকাত না দিয়ে আত্মসাত করছেন তার স্ট্যাটাস কী হচ্ছে?

যাকাতকে আমরা অনেকেই দাতব্যকাজ বা চ্যারিটি মনে করি। আসলেই কি তাই? যার পাওনা টাকা তাকে পরিশোধ করাটা কি চ্যারিটি না দায় বা দেনা পরিশোধ করা? বিষয়টা এভাবে চিন্তা করাই শ্রেয়।

আল্লাহ যা বাধ্যতামূলকভাবে করতে বলেছেন সেটা করতেই হবে। খুশী মনে করলে আপনি অতিরিক্ত সম্মান পাবেন। অখুশি হয়ে করলেও আপনি অন্তত খেয়ানতকারী হচ্ছেন না। আপনাকে এটা মানতেই হবে। কারণ কোরআনে সালাতের পরে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যাকাতের উপর। তারপর রোজা ও হজ্জ্বের কথা বলা হয়েছে।

যাকাতের ব্যাপারে আমাদের সম্মানিত আলেম সমাজের হয়তো মাইন্ডসেটে সমস্যা আছে অথবা পড়াশোনার পরিধি সীমিত। কারন তাঁদের মধ্যে খুবই নগন্য ব্যতিক্রম ছাড়া সবাই যাকাতের ওয়াজ করতে গিয়ে বড়লোকদের কাছে দয়া-দাক্ষিণ্যই ভিক্ষা করেন। এতিমখানা, লিল্লাহ বোর্ডিং-এর বাইরে যে যাকাত দেওয়া উচিত তা তাঁরা অনেকে ঘুণাক্ষরেও বলেন না। এর দুটি কারণ হতে পারে তাহলো হয় নিজেদের প্রতিষ্ঠানের আয় কমে যাওয়ার ভয়, নয় তো জ্ঞানের অভাব।

এবিষয়ে আলেমসমাজকেই মূখ্যভূমিকা পালন করতে হবে। তাঁদেরকে যাকাতের মূল স্পিরিটটা বুঝাতে হবে। নিসাবের পাশাপাশি কোন কোন খাতে যাকাত দিতে হবে তা স্পষ্ট করে বলতে হবে। কারণ সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া সবাই মনে করে যাকাত মানে হলো এতিমখানায় দান-খয়রাত করা। দারিদ্র্য বিমোচন, ঋণগ্রস্থদের ঋন পরিশোধ, বিপদে পড়া পথিকের পথ খরচ দেয়া, নও মুসলিমকে সহযোগিতা করাসহ ইসলামের প্রচার প্রসারে যাকাতের টাকা খরচ করাও যে অত্যন্ত জরুরী সেটা তাঁদেরকে ভালো করে বুঝিয়ে বলতে হবে।

একটু চিন্তা করে দেখুন (ওশরের কথা না হয় বাদই দিলাম) আমাদের দেশে যাকাতযোগ্য লিকুইড মানি( নগদ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান গচ্ছিত টাকা, সোনা গহনা ইত্যাদি) কম করে হলে ২০ লক্ষ কোটি টাকা হবে। এর বিপরীতে যাকাত হবে ৫০ হাজার কোটি টাকা!

এবার ভেবে দেখুন এ টাকা যদি সরকারের তত্ত্বাবধানে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উপর্যুক্ত খাতগুলোতে ব্যবহার করা যায় তাহলে দেশের জন্য কত বড় কাজ করা সম্ভব!

আসুন সবাই হিসেব করে যাকাত দিয়ে আল্লাহ এবং বান্দার অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করি। সু-প্রশস্ত করি নিজেদের নাযাতের পথ।


লেখক: ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/০৫মে, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

ধর্ম এর সর্বশেষ খবর

ধর্ম - এর সব খবর