thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ১৩ জুলাই 25, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২,  ১৭ মহররম 1447

নাটক- সিনেমা- গানে ৩০০ কোটির ক্ষতি

২০২০ মে ০৭ ১৬:১৯:১৬
নাটক- সিনেমা- গানে ৩০০ কোটির ক্ষতি

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: যদিও টেলিভিশন নাটক কিংবা অনুষ্ঠানকে কোন ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে সরকার দেখে না। কিন্তু হিসেব করলে করোনায় এর মতো খুব কম সেক্টরই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। প্রতি ঈদে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ঈদ নাটক অনুষ্ঠান নির্মাণ হয়। এই বছর যেখানে ৫ কোটি টাকার অনুষ্ঠানও প্রচার হবে না।

আর এই ৫ কোটি টাকার অনুষ্ঠান অবশ্যই করোনার আগে শুটিং করা। ২০টির মতো চ্যানেলের ঈদের বিশেষ নাটক অনুষ্ঠান নির্মাণ করার কথা ছিল।রিয়েলিটি শো, রান্না, নাচ-গান ও নানা আয়োজনে মুখর থাকে টিভি চ্যানেলগুলো। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাজটে থাকে একক নাটক, ঈদ ধারাবাহিক ও টেলিফিল্মে। ধরা যাক একটি সিঙ্গেল কিংবা একক নাটকের মূল্য ৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে ২০টি টিভি চ্যানেলে সাত দিনে সাতটি একক নাটকের মূল্য দাঁড়ায় ৪ কোটি ২ লাখ টাকার মতো। এখানে কম বেশি হতে পারে। তাছাড়া এমন অনেক চ্যানেলই আছে যেখানে প্রতিদিন একাধিক একক নাটকও প্রচার করে। সে ক্ষেত্রে এর আর্থিক লেনদেন দাঁড়ায় আরো বেশি। এরপর আছে ঈদকে ঘিরে ধারাবাহিক নাটক ও টেলিফিল্ম। সাত পর্বের ধারাবাহিক কম হলেও সাত লাখ টাকার হবে। টেলিফিল্ম ৫ লাখ মূল্যের চেয়ে খুব কমই আছে। এছাড়া বিভিন্ন প্যাকেজ অনুষ্ঠান তো আছেই। সবমিলিয়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকা লেনদেন হয় শুধু ঈদের নাটকের বাজারে। কিন্তু করোনাকালে এর পুরোটাই ক্ষতির খাতায়।

গেল কয়েকবছরে ঈদে সবচেয়ে বেশি কাজ করা আফরান নিশো, অপূর্ব, মেহজাবিন, তানজিন তিশা, মমরা ঈদের আগে আর শুটিং শুরু করবে না। মোশাররফ করিমও শুটিং করতে ইচ্ছুক না। তবে তাকে দেখা যেতে পারে দুয়েকটি নাটকের শুটিংয়ে, যদি অনুমতি দেয় সরকার। বেশ কয়েকজন পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাদের আর্থিক টানাপোড়েনের কথা। এর মধ্যে আবার অনেক নির্মাতা শুধু ঈদ কেন্দ্রীকই নাটক টেলিফিল্ম নির্মাণ করেন। বিশাল এই আর্থিক ক্ষতি সামলে ওঠা এক বা দুদিনের কাজ নয়। আলোচিত ও জনপ্রিয় নির্মাতাদের অনেকেই হাল ছেড়ে দিয়ে নির্ধারিত শিডিউল বাতিল করে ফেলেছেন এরই মধ্যে। অচিরেই নাটক ও টেলিফিল্ম নির্মাণের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাচ্ছেন অনেকেই। আসন্ন ঈদ নিয়ে পাঁচ শতাধিক নাটকের কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতিতে তা সম্ভব হচ্ছে না।

কোনো কোনো নির্মাতা অবশ্য বিকল্প পথ হিসেবে ইনডোরে শুটিং করার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু করোনার ভয়ে ইউনিটের অনেকেই শুটিং করতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাইতো ঘরে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন শিহাব শাহিন, চয়নিকা চৌধুরী, রেদওয়ান রনি, আশফাক নিপুন, মাবরুর রশীদ বান্নাহ, মিজানুর রহমান আরিয়ানের মতো ঈদের ব্যস্ত নির্মাতারা।

সিনেমার ক্ষতি:

মুক্তির অপেক্ষায় আছে প্রায় ১৫ চলচ্চিত্র। সময়মতো মুক্তি না পাওয়ায় ও চলচ্চিত্র নির্মাণ ও সিনেমা হল বন্ধ থাকায় গত এক মাসে ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করলেন চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি।চরম মানবেতর জীবনের কবলে পড়েছেন চলচ্চিত্রের স্বল্প আয়ের শিল্পী, কলাকুশলী, নির্মাতা ও সিনেমা হলের কর্মীরা। করোনাভাইরাসের কারণে ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে সিনেমা হল। বেশির ভাগ বন্ধ সিনেমা হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন বা ভাতা পাননি। বড় সিনেমাহলগুলোতে প্রায় দশ লক্ষ টাকা আর ছোট সিনেমাহলগুলোতে ৫ লক্ষ টাকা দেখভালের জন্য খরচ হবেই। এমনিতেই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা আগে থেকেই ভালো না। অনেক সিনেমা হলই ঐতিহ্যের খাতির ভুর্তুকি দিয়ে চলছিল, কিন্তু এই করোনাকাল তাদের নি:স্ব বানিয়ে দিলো। অনেক সিনেমা হল মালিকই জানিয়েছেন, তাদের আর হল হয়তো খোলাই হবে না। হলের জায়গায় অন্য কিছু ভাবছেন তারা। আর করোনাকালে মানুষ এখন অনলাইন নির্ভর আরো বেশি হয়ে গেছে। অনলাইনের বিভিন্ন স্ট্রিমিং সাইটেই মিলে যাচ্ছে বিনোদনের খোড়াক। সেখানে এখন সিনেমা হলে স্যাতস্যাতে সোফায় বসে সিনেমা দেখার মানুষ নগন্য।

অনেক হলের যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এদিকে ছবির নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে দিন কাটছে চলচ্চিত্রের কলাকুশলী ও সহশিল্পীদের। এছাড়া সম্পাদনা বিভাগ, ডাবিং, মেকআপম্যান, স্ট্যান্টম্যান, ক্যামেরাম্যান, প্রোডাকশনবয়সহ সবাই বেকার। সবমিলিয়ে চরম দুর্যোগের কবলে পড়েছে চলচ্চিত্র শিল্প। সরকারি সহায়তা না পেলে এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠা সম্ভব নয় বলে বলছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট মানুষরা। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে পারছে না এফডিসি কর্তৃপক্ষও। সংস্থাটির আয় থেকেই ব্যয় নির্বাহ করা হয়। করোনার কারণে কাজ বন্ধ থাকায় এফডিসিতে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কোনো আয় নেই। সেক্ষেত্রে তাদের জন্য সরকার কিছু ব্যভস্থা নিয়েছেন। যদিও সে ব্যবস্থাতে তাদের পেট অর্ধেকই খালি থাকবে।

গানের জগত:

বাসায় বসে অনেক শিল্পী গান তৈরী করছেন। কিন্তু সেই গান কেনার মতো লোক এখন খুব কম পাওয়া যাবে। সকলেরই টেনেটুনে চলছে। তাই শিল্পী জগতও একটা বড় ক্ষতির মুখে। তাছাড়া জনপ্রিয় শিল্পীদের প্রচুর স্টেজ শো থাকে দেশে বিদেশে। সেক্ষেত্রে গানের ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতিও ৫০ কোটি টাকার কম নয়।স্বচ্ছল শিল্পীদের পাশাপাশি একটি গান তৈরী ও স্টেজে পারফর্ম করার জন্য আরো অনেক মানুষের জোগান থাকে। সেই মানুষগুলোর অবস্থা খুব একটা সুবিধার না। দিন আনে দিন খায় অবস্থা। আর তারাও কাজহীন সমসয় কাটাচ্ছেন দীর্ঘদিন।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০৭মে, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জলসা ঘর এর সর্বশেষ খবর

জলসা ঘর - এর সব খবর