thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২১ জমাদিউল আউয়াল 1446

‘ইউসুফের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়’

২০১৩ নভেম্বর ১০ ১৭:৩৮:৩৪
‘ইউসুফের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়’

দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক : একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির একেএম ইউসুফের বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের চতুর্থ সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউসুফ আলী সিকদার (৭৬)। জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন, ইউসুফের নেতৃত্বে খুলনায় রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়।

ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের বেঞ্চে রবিবার তিনি জবানবন্দি দেন। জবানবিন্দগ্রহণ শেষে জেরার জন্য আগামী ১২ নভেম্বর দিন ঠিক করেছেন আদালত।

ইউসুফ আলী তার জবানবন্দিতে বলেন, একাত্তর সালের ৭ মার্চের পরে সংগ্রাম কমিটি গঠনের পর প্রশিক্ষণের জন্য তিনি প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ২৬ মার্চের পরে আরো কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে সুন্দরবনে ৯ নম্বর সাবসেক্টর কমান্ডার জিয়াউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন তিনি। সে সময় আলফা গ্রুপ নামে একটি দল গঠন করা হয় এবং তিনি এ দলের কমান্ডার নিযুক্ত হন।

তিনি বলেন, একাত্তর সালে ইউসুফ খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর চেয়ারম্যান ছিলেন। তারই নেতৃত্বে খুলনায় রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। ২৬ মার্চের পরে রাজাকার বাহিনীর কিছু অংশ শরণখোলা থানায় আসে এবং সেখানে দুটি ক্যাম্প করে। একটি ক্যাম্প ছিলো থানায়, অপরটি ছিল রায়েন্দাবাজারে জনৈক ব্যবসায়ী নাসির মিয়ার দালানে।

তিনি আরো বলেন, একাত্তরের ৬ জুলাই আমরা রায়েন্দাবাজার এসে রাতে অ্যাম্বুস করি। এ বিষয়টি কোনোভাবে রাজাকাররা জেনে যায়। ওইদিন (৭ জুলাই) রাত ৩টার সময় একটি লঞ্চ আসার আওয়াজ পাই। ওই লঞ্চে করেই কিছু রাজাকারসহ ইউসুফ এসেছেন বলে জানতে পারি।

এ সময় রাজাকাররা তাদের অবস্থান লক্ষ্য করে আকস্মিক গুলি করতে শুরু করলে মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা গুলি চালায়। প্রায় দুই ঘণ্টা গোলাগুলি চলার পর অস্ত্র ও গোলাবারুদ কম থাকায় মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হন।

তিনি বলেন, এ অবস্থায় রাজাকাররা আমদের পিছু ধাওয়া করে। আমরা তখন যে যার মত এদিক-ওদিক আত্মগোপন করি। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় জানতে পারি আমাদের সঙ্গী ক্যাপ্টেন আনোয়ার, আজমত আলী মুন্সি ও ইসমাইল, গার্লস স্কুলে আটকা পড়েছে। রাজাকাররা তল্লাশী চালিয়ে তাদেরকে সেখান থেকে বের করে নিয়ে আসে।

পরে তাদেরকে একেএম ইউসুফের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় এবং শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছিল বলে শুনেছেন তিনি। নির্যাতনের পরে মওলানা ইউসুফ তাদের গুলি করে হত্যা করার নির্দেশ দিলে রাজাকাররা তিনজনকে গুলি করে হত্যা করে।

১৯৭১ সালের ৭ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান সাক্ষী। পরে রাজাকাররা চলে গেলে আত্মগোপন থেকে বের হয়ে তিনজনের লাশ উদ্ধার করে রায়েন্দাবাজারেই তাদের দাফন করা হয়। দাফনের স্থানটিতে বর্তমানে একটি স্মৃতিসৌধ রয়েছে।

সাক্ষী ইউসুফ বলেন, ১৯৭১ সালের ৯ জুন মওলানা ইউসুফের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী তাফালবাগী বাজারে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল ফকির ও বাসারাত খাঁকে আটক করে। তাদের দুজনকে লঞ্চে অবস্থানরত একেএম ইউসুফের কাছে আনার পর তার নির্দেশে নির্যাতনের পর গুলি করে হত্যা করা হয়।

এ ঘটনার কথা বাজারে আসা লোকজনের কাছ থেকে শুনেছেন বলে জানান তিনি। পরে শহীদ আসমত আলী মুন্সির বাড়িতে রাজাকাররা লুটপাট চালায় বলেও শুনেছেন তিনি।

মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ আলী শিকদার বলেন, ১৯৭১ সালের ১৯ জুলাই একেএম ইউসুফ রায়েন্দাবাজারে রাজাকারদের নিয়ে বৈঠক করার সময় সেখানে রাজাপুর থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধা সালাম খান হাজির হলে তাকে আটক করে রাজাকাররা। তাকে নির্যাতন করার পরে গুলি করে হত্যার লাশ নদীতে ফেলে দেয়া হয়।

জবানবন্দি শেষে সাক্ষীকে জেরা শুরু করেন আসামির আইনজীবী অ্যাডভোকেট গাজী এমএইচ তামিম। পরে জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় মঙ্গলবার পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবি করা হয়।

গত ১২ মে প্রসিকিউশনের অভিযোগ আমলে নিয়ে ইউসুফের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। পরে ধানমন্ডির বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গত ২৩ জুন একেএম ইউসুফের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাটি প্রথম ট্রাইব্যুনাল থেকে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করার আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ১ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তরের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

দিরিপোর্ট২৪/ এআইপি/এসবি/এমডি/নভেম্বর ১০, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

অপরাধ ও আইন এর সর্বশেষ খবর

অপরাধ ও আইন - এর সব খবর