thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ৪ মে 24, ২০ বৈশাখ ১৪৩১,  ২৫ শাওয়াল 1445

দেশি ফেরিওয়ালা একক্লিকেই পৌঁছাচ্ছে যশোরের গুড়-পাটালি

২০২০ ডিসেম্বর ২৭ ০২:০৯:৪৬
দেশি ফেরিওয়ালা একক্লিকেই পৌঁছাচ্ছে যশোরের গুড়-পাটালি

যশোর প্রতিনিধি : শীত এলেই দেশে-বিদেশে যেখানেই থাকুন না কেনো, বাঙালির মনে পড়ে যায় যশোরের খেজুররস, গুড়-পাটালি আর পিঠার কথা। কিন্তু মানুষের লোভের আগুনে পুড়ে গেছে যশোর অঞ্চলের লাখো খেজুরগাছ। তাই চৌকষ গাছিও বেঁচে থাকার তাগিদে পেশা বদলেছেন। যা কিছু খেজুরগাছ এখনো যশোরের ঐতিহ্যের জানান দিচ্ছে, শীত এলে সেগুলো থেকে রস সংগ্রহের জন্য গাছি পাওয়া দুষ্কর। ফলে রস তথা গুড়-পাটালির উৎপাদন কমেছে আশঙ্কাজনক। কিন্তু যশোরের গুড়-পাটালির চাহিদা থেকে গেছে আগের মতোই। এই সুযোগে কিছু অসাধু কারবারি খেজুরগুড়ের সঙ্গে ভেজাল মিশিয়ে দেদারছে বিকোচ্ছে।

সরকারিভাবে যশোর জেলাকে যেভাবে ব্রান্ডিং করা হয়েছে, সেখানেও রয়েছে খেজুর গুড়ের কথা-‘নানা রঙের ফুলের মেলা, খেজুর গুড়ের যশোর জেলা’। এসব কারণেই যশোরের খেজুররস,গুড়-পাটালির পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে যশোরের উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ এগিয়ে আসছেন। তাদের মধ্যে এই মুহূর্তে অন্যতম “দেশি ফেরিওয়ালা”(deshiferiwala.com)|

সাইটটির প্রধান নির্বাহী স্মৃতি বিশ্বাস বলেন, আমাদের জেলার প্রধান যে ঐতিহ্য খেজুরগাছের রস, গুড়, পাটালি, তাকে কীভাবে টিকিয়ে রাখা যায় তা নিয়ে প্রথমে আমরা একটি সমীক্ষা করি। আমরা দেখতেই পাই, এই ঐতিহ্যটি হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ খেজুরগাছের সংখ্যা কমে যাওয়া। দ্বিতীয় কারণটি হলো, খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহের ব্যাপারটি বেশ কষ্টকর। নিপুণদক্ষতা না থাকলে ভালো মানের রস-গুড়-পাটালি উৎপাদন করা যায় না। একসময় যেসব দক্ষ গাছি তাদের নিপুণ হাতে এই কাজটি করতেন, তাদের বেশিরভাগই মারা গেছেন। যারা বেঁচে আছেন তারা বয়সের ভারে ন্যুব্জ। আগে গাছিদের সন্তানরাই বাবার কাছ থেকে শিখে এই কাজ করতেন। এখন অন্য কাজে অল্প পরিশ্রমে বেশি টাকা আয়ের সুযোগ হওয়ায় গাছিদের সন্তানরা আর খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহের কষ্টসাধ্য কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। এ অবস্থায় যশোরের এ ঐতিহ্য বিলুপ্তির দিকে এগুচ্ছে।’

আমাদের পরিকল্পনা, রস সংগ্রহ, গুড়-পাটালি তৈরির কাজকে বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক করে তুলতে হবে। তা না হলে কোনোভাবে নতুন প্রজন্মকে গাছ কাটা, রস-গুড় উৎপাদনে আগ্রহী করা যাবে না। কেবল স্থানীয় বাজারে গুড়-পাটালি বিক্রি করলে গাছিরা ভালো দাম পাবেন না। দরকার আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। আমরা ঠিক এই কাজটিই করছি। যশোরে উৎপাদিত গুড়-পাটালি দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। গাছিরা যাতে ভালো দাম পান, সেই দিকেও দৃষ্টি রাখা হয়েছে। আমরা deshiferiwala.comনামে একটি ই-কমার্স সাইটের মাধ্যমে শীত মৌসুমে যশোরের গুড়-পাটালি ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, বিশেষ করে নগর-মহানগরগুলোতে পৌঁছে দিচ্ছে, বলছিলেন স্মৃতি বিশ্বাস।

কর্মসূত্রে যশোরে দীর্ঘদিন বসবাস করেছেন ঢাকার কেরানিগঞ্জের মানুষ জাকির হোসেন। করপোরেট হাউজে উচ্চপদে কর্মরত জাকির হোসেন যশোর ছাড়লেও এখানকার খেজুরগুড়-পাটালির স্বাদ ভোলেননি।তাইতো ঢাকায় অবস্থান করেও তিনি খুঁজে ফেরেন যশোরের গুড়-পাটালি। রাজধানীতে বসে যশোরের খাঁটি গুড়-পাটালি পেয়ে খুশি জাকির হোসেন।

deshiferiwala.com-এর অন্যতম পরিচালক রাহুল দেব সুর বলেন, জেলার বাঘারপাড়া ও বসুন্দিয়া এলাকার কয়েক ডজন গাছিকে আমরা সংগঠিত করেছি। সেখানে কাজ করছেন আমাদের বিশ্বস্ত কর্মীরা। ফলে ভেজাল গুড়-পাটালি তৈরির কোনো সুযোগ নেই। এসব গাছির কাছ থেকে আমরা যে গুড়-পাটালি সংগ্রহ করি, তা স্থানীয় বাজারদরের চেয়ে খানিকটা বেশি। বৈশিষ্ট্য হলো, একশ ভাগ বিশুদ্ধতার নিশ্চয়তা।’

দেশি ফেরিওয়ালা’র চীফ অপারেটিং অফিসার দীপংকর দাস বলেন, গাছিরা আগে এক কেজি খেজুরগুড়ে ভেজাল মিশিয়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেশি লাভ করতেন। আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার- ভেজাল দেওয়া যাবে না। ভেজাল দিয়ে গাছিরা যে বাড়তি মুনাফা করতেন, তা পুষিয়ে যাবে ন্যায্য দামে খাঁটি গুড়-পাটালি বিক্রি করতে পারলে। এই প্রক্রিয়ায় আমরা খুবএকটা লাভ করতে না পারলেও ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছি। আমাদের স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য হলো, যশোরের ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করা। এই কাজে সফল হলে পরে খেজুরগাছের সংখ্যা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন নতুন গাছি তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে এগোনো।’

deshiferiwala.com-এর গুড়-পাটালির চাহিদা রয়েছে প্রবাসীদের কাছেও। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বলছেন, কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে এই মুহূর্তে দেশের বাইরে পাঠানো যাচ্ছে না জনপ্রিয় খাদ্যপণ্যটি। অথচ প্রতিদিনই প্রবাসীরা নানা মাধ্যমে যোগাযোগ করেন deshiferiwala.com-এর সঙ্গে। বিশেষত deshiferiwala.com-এর ফেসবুক পাতা (facebook/ deshiferiwala) ইতিমধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অনেকে আবার হটলাইনেও (০১৯৫৮-৩০৫০১০) যোগাযোগ করে পছন্দের পণ্যটি নিতে সচেষ্ট হন।

deshiferiwala.comএর পরিচালক স্মৃতি বিশ্বাস বলেন, দেশের নানান ধরনের পণ্য আমাদের ই-কমার্স সাইটটিতে বিক্রি হচ্ছে। যশোরে তৃণমূল পর্যায়ে আরো অনেক বিখ্যাত পণ্য উৎপাদিত হয়, সেগুলোও আমরা এই সাইটের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দিতে পারি। তারই অংশ হিসেবে যশোরের বিখ্যাত নকশিকাঁথা, নানা ধরনের হস্তশিল্প, সূচির কাজ করা পোশাক বাজারজাত করার ব্যবস্থা করছি। যশোরে উৎপাদিত নাড়ুঘি ও মধুও এই ই-কমার্স সাইটে বিক্রি করা হচ্ছে। বাজারজাত করার আগে এগুলোর মান সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মান এবং বিশুদ্ধতার ব্যাপারে আমরা আপস করি না।’

এদিকে দেশি ফেরিওয়ালার অন্যতম কো-ফাউন্ডার প্রিয়াংকা রানী জানান, যে কেউ কিনতে পারেন deshiferiwala.comসাইট থেকে। যশোরের বিখ্যাত সব পণ্যই পর্যায়ক্রমে পাওয়া যাবে এই সাইটে।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/ডিসেম্বর ২৭, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

অর্থ ও বাণিজ্য এর সর্বশেষ খবর

অর্থ ও বাণিজ্য - এর সব খবর