thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৩ জমাদিউল আউয়াল 1446

ভুলে ভরা নতুন বই

২০২১ জানুয়ারি ১৬ ০৭:৫২:১১
ভুলে ভরা নতুন বই

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া নতুন বইয়ে অসংখ্য ভুল ভ্রান্তি উঠে আসে। এবারো এর কোনো ব্যতিক্রম হয়নি। চলতি শিক্ষাবর্ষের নতুন বইয়েও এমন অনেক ভুল পাওয়া গেছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, যেসব কারণে এসব ভুল হয়েছে সেটি খতিয়ে দেখা হবে। লেখকদের সঙ্গে আলাপ করে করণীয় ঠিক করা হবে।

তবে শিক্ষাবিদরা বলছেন, নিয়মিত দায়সারা বক্তব্য দিয়ে এসব ভুলভ্রান্তি এড়ানো যায় না। এ বিষয়ে শক্ত আইনি কাঠামো থাকা দরকার।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, নিয়মিত বইয়ে ভুল তথ্যের মাধ্যমে বিতর্ক সৃষ্টি নতুন প্রজন্মের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং বিভ্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

২০২১ সালের পাঠ্যভুক্ত পঞ্চম শ্রেণির আমার বাংলা বইয়ে ‘অবাক জলপান’ অধ্যায়ে লেখক পরিচিতিতে বলা হয়েছে সুকুমার রায় ১৯২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। অন্যদিকে নবম-দশম শ্রেণির ‘ছায়াবাজি’ অধ্যায়ে এ লেখকের পরিচিতিতে বলা হয়েছে- সুকুমার রায় মৃত্যুবরণ করেছেন ১৯২৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। এনসিটিবি প্রণীত একই লেখকের ভিন্ন ভিন্ন তথ্যে বিভ্রান্ত শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকরাও।

অষ্টম শ্রেণির সাহিত্য কণিকা বইয়ের ২৭ নং পৃষ্ঠায় ‘বিব্রত’ শব্দের শব্দার্থ হিসেবে লেখা হয়েছে ব্যাকুল, ব্যতিব্যস্ত। নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ে ‘রহমানের মা’ অধ্যায়ে লেখকের পরিচয়ে বলা হয়েছে- রণেশ দাশগুপ্ত ঢাকার লৌহজংয়ের গাউপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও এ লেখক ভারতের আসামে জন্মগ্রহণ করেছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়।

বইটির ‘পোস্টার’ অধ্যায়ে লেখকের পরিচয়ে বলা হয়েছে- আবুল হোসেন খুলনা জেলার ফকিরহাট থানায় জন্মগ্রহণ করেন। কার্যত, ফকিরহাট থানা বর্তমানে বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত। ফকিরহাট একসময় খুলনার অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেই হিসাবে লেখার ক্ষেত্রে ‘তৎকালীন’ শব্দটি ব্যবহার করা উচিত ছিল। বইটিতে তা উল্লেখ করা হয়নি।

বাংলাদেশের সংবিধানে এ পর্যন্ত ১৭টি সংশোধনী আনা হলেও নবম-দশম শ্রেণির পৌরনীতি ও নাগরিকতা বইয়ের সংবিধান অধ্যায়ে ৫১ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে ‘১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের পর থেকে এ পর্যন্ত সংবিধান মোট ১৬ বার সংশোধন করা হয়েছে’।

বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা অধ্যায়ে ৫৬ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে- ‘দেশের প্রকৃত ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের হাতে ন্যস্ত। মন্ত্রিপরিষদই প্রকৃত শাসন ক্ষমতার অধিকারী’। অথচ সংবিধানের ৫৫ (২) অনুযায়ী- ‘প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বা তাহার কর্তৃত্বে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রযুক্ত হইবে।’

৫৭ নং পৃষ্ঠায় রাষ্ট্রপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে- ‘কোন ব্যক্তি পর পর দুই মেয়াদ অর্থাৎ একটানা ১০ বছরের বেশি রাষ্ট্রপতি পদে থাকতে পারেন না’। অথচ সংবিধানের ৫০ (২) অনুযায়ী- ‘একাদিক্রমে হউক বা না হউক- দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতির পদে কোন ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকিবেন না।’

দেশে মোট ১১টি সংসদ নির্বাচন হলেও ৭৫ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে দেশে ১০ বার সংসদ নির্বাচন হয়েছে।

‘গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন’ অধ্যায়ে বলা হয়েছে- ‘একটি দল নির্বাচিত হয়ে সঠিকভাবে জনগণের জন্য কাজ না করলে পরবর্তী নির্বাচনে জনগণ সাধারণত সেই দলকে আর নির্বাচিত করে না। উন্নত গণতান্ত্রিক দেশের এটি যেমন সত্যি তেমনিভাবে অনুন্নত দেশের ক্ষেত্রেও সত্যি। তেমনি, বাংলাদেশে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের পরিবর্তে বিএনপিকে এবং ২০০৮ সালে বিএনপির পরিবর্তে আওয়ামী লীগকে এ দেশের জনগণ ক্ষমতায় বসায়’।

শিক্ষাবিদরা মনে করেন, এটি গবেষণা ধর্মী বিষয়। যেটি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কোর্স শিডিউলের অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। তবে কিশোর ছেলেমেয়ের মাঝে এখনি এ জাতীয় বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেয়া বিব্রতকর ও অনুচিত বিষয়।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হলেও নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বইয়ের ১৮৮ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে ‘সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন’।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, একটা দুর্ঘটনা যেমন সারা জীবনের কান্না। তেমনি পাঠ্যপুস্তকের একটি ভুলও একজন শিক্ষার্থী, একটি প্রজন্মের জন্য বড় আকারের ক্ষতি। এ বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।

তিনি বলেন, পাঠ্যপুস্তকে যাতে ভুল ম্যাসেজ না যায় সেটি দেখার জন্য অবশ্যই একটি শক্তিশালী ব্যবস্থাপনা থাকা দরকার। যাতে একই ভুল দ্বিতীয়বার না হয়। এবং যেকোনো প্রকার ভুলের বিষয়েও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা যায়।

শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. একরাম উদ্দিন আহমদ বলেন, যেকোনো বই লেখার আগে এবং পরে অসংখ্যবার লেখাটি বা সংযোজন নিয়ে চিন্তা করতে হবে। তারপর সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম ভুল শিখবে। যেটা সবার জন্যই ক্ষতিকর দিক।

কেন এসব ভুল নিয়মিত হচ্ছে এমনটা জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, কিছু ভুল হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। মূলত এসব বই ২০১৩ সালে প্রণীত। ভুল সংশোধনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনার কথা রয়েছে। প্রয়োজনে লেখকদের কাছ থেকে কারণ জানতে চাওয়া হবে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৬ জানুয়ারি, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

শিক্ষা এর সর্বশেষ খবর

শিক্ষা - এর সব খবর