thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৪ জমাদিউল আউয়াল 1446

যা আছে মুনিয়ার সুরতহালে, ধর্ষণের সুপারিশে নমুনা সংগ্রহ

২০২১ এপ্রিল ২৮ ২০:১৯:১৫
যা আছে মুনিয়ার সুরতহালে, ধর্ষণের সুপারিশে নমুনা সংগ্রহ

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: রাজধানীর গুলশানের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট থেকে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনার পর মুনিয়ার সঙ্গে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের কিছু অন্তরঙ্গ ছবি ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। এ থেকেই দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়।

সোমবার সন্ধ্যায় মরদেহ উদ্ধারের পর গতকাল মঙ্গলবার সকালে করা হয় তার ময়নাতদন্ত। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে তাকে কুমিল্লার টমসম ব্রিজ কবরস্থানে দাফন করা হয়।

বুধবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে মুনিয়ার সুরতহাল রিপোর্টের আংশিক অংশ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। গুলশান থানার এসআই শামীম হোসেন এই সুরতহাল রিপোর্ট লেখেন।

সুরতহাল রিপোর্টে বলা হয়, মুনিয়ার বয়স ২৩ বছর। গায়ের রং ফর্সা। লম্বা অনুমান ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি। মাথার চুল লম্বা অনুমান ১২ ইঞ্চি। চুলের রং বাদামি। মুখমণ্ডল গোলাকার, নাক স্বাভাবিক, চোখ দুটি বন্ধ, জিহ্বা মুখ থেকে আধা ইঞ্চি বাহিরে, দাঁত দিয়ে কামড়ানো, দুইটি দাঁত দেখা যায়। জিহ্বা দিয়ে সামান্য লালা বের হয়েছে। গলার বামপাশে অর্ধচন্দ্রাকৃতি গভীর কালো দাগ রয়েছে। হাত দুটি শরীরের সঙ্গে লম্বালম্বি অর্ধমুষ্টি।

মৃতের বড় বোনের দ্বারা মরদেহ ওলট-পালট করে বুক পেট ও পিঠ স্বাভাবিক দেখা যায়। মলদার স্বাভাবিক, যৌনাঙ্গ দিয়ে লালচে রঙের পদার্থ বের হতে দেখা যায়। দুই পা লম্বালম্বি, পায়ের আঙুল নিম্নমুখী।

মুনিয়াকে ধর্ষণ কিংবা বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে সুপারিশ করা হয়েছে সুরতহাল রিপোর্টে। তা জানার জন্য নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়াও, প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র বিভাগীয় প্রধান ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বরাবর পাঠানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, সুরতাহাল প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই হয় ময়নাতদন্ত। এরই মধ্যে ময়নাতদন্ত শেষ হলেও এখনো প্রতিবেদন আসেনি।

এদিকে, কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার এখনো কোনো কূল-কিনারা হয়নি। এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মুনিয়ার বড় বোন মামলা করেন। মামলায় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মোসারাত জাহান (২১) মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। দুই বছর আগে মামলার আসামি সায়েম সোবহান আনভীরের (৪২) সঙ্গে মোসারাতের পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর থেকে তারা বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় দেখা করতেন এবং সবসময় মোবাইলে কথা বলতেন। এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

২০১৯ সালে মোসারাতকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে আসামি রাজধানীর বনানীতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। সেখানে তারা বসবাস করতে শুরু করেন। ২০২০ সালে আসামির পরিবার এক নারীর মাধ্যমে এই প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারে। এরপর আসামির মা মোসারাতকে ডেকে ভয়ভীতি দেখান এবং তাকে ঢাকা থেকে চলে যেতে বলেন। আসামি কৌশলে তার (বাদী নুসরাতের) বোনকে কুমিল্লায় পাঠিয়ে দেন এবং পরে বিয়ে করবেন বলে আশ্বাস দেন।

সর্বশেষ গত ১ মার্চ মোসারাতকে প্ররোচিত করেন আসামি। তিনি বাসা ভাড়া নিতে বাদী নুসরাত ও তার স্বামীর পরিচয়পত্র নেন। ফুসলিয়ে তিনি মোসারাতকে ঢাকায় আনেন। তিনি গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কে বাসা (ফ্ল্যাট-বি-৩) ভাড়া নেন। ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে আসামি ও তার (বাদীর) বোনের স্বামী-স্ত্রীর মতো ছবি তুলে তা বাঁধিয়ে রাখা হয়। আসামি বাসায় এলে কক্ষটি পরিপাটি করে রাখা হতো। বোনের মাধ্যমে মামলার বাদী জানতে পারেন, আসামি তাকে বিয়ে করে বিদেশে স্থায়ী হবেন। কারণ, দেশে থাকলে আসামির মা–বাবা আসামিকে কিছু না করলেও তার বোনকে মেরে ফেলবেন। গত ১ মার্চ থেকে আসামি মাঝেমধ্যে ফ্ল্যাটে আসা-যাওয়া করতেন।

বাদী এজাহারে আরো বলেন, ২৩ এপ্রিল মোসারাত তাকে ফোন করেন। মোসারাত তাকে বলেছেন, আনভীর তাকে বকা দিয়ে বলেছেন, কেন তিনি (মোসারাত) ফ্ল্যাটের মালিকের বাসায় গিয়ে ইফতার করেছেন, ছবি তুলেছেন। ফ্ল্যাটের মালিকের স্ত্রী ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেছেন। এ ছবি ‌পিয়াসা দেখেছেন। পিয়াসা মালিকের স্ত্রীর ফেসবুক বন্ধু। এখন পিয়াসা তার মাকে সবকিছু জানিয়ে দেবেন। তিনি (আসামি) দুবাই যাচ্ছেন, মোসারাত যেন কুমিল্লায় চলে যান। আসামির মা জানতে পারলে তাকে (মোসারাত) মেরে ফেলবেন।

দুদিন পর ২৫ এপ্রিল মোসারাত তাকে ফোন করেন। ওই সময় তিনি কান্নাকাটি করে বলেন, আনভীর তাকে বিয়ে করবেন না, শুধু ভোগ করেছেন। আসামিকে উদ্ধৃত করে মোসারাত বলেন, আসামি তাকে বলেছেন, তিনি (মোসারাত) তার শত্রুর সঙ্গে দেখা করেছেন। মোসারাতকে তিনি ছাড়বেন না।

মোসারাত চিৎকার করে বলেন, আসামি তাকে ধোঁকা দিয়েছেন। যেকোনো সময় তার বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তারা (বাদী নুসরাতের পরিবার) যেন দ্রুত ঢাকায় আসেন। নুসরাত তার আত্মীয়স্বজন নিয়ে বেলা দুইটার দিকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় রওনা দেন। আসার পথে বারবার মোসারাতের ফোনে ফোন করেন কিন্তু তিনি আর ফোন ধরেননি। গুলশানের বাসায় পৌঁছে দরজায় নক করলে ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে নিচে নেমে আসেন। তারা নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষ থেকে বাসার ইন্টারকমে ফোন করেন। পরে ফ্ল্যাটের মালিকের নম্বরে ফোন দিলে মিস্ত্রি এনে তালা ভেঙে ঘরে ঢোকার পরামর্শ দেন। মিস্ত্রি ডেকে তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকার পর তিনি দেখেন, তার বোন ওড়না পেঁচিয়ে শোয়ার ঘরের সিলিংয়ে ঝুলে আছেন।

এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, পুলিশ এসে ওড়না কেটে মোসারাতের মৃতদেহ নামায়। আলামত হিসেবে আসামির সঙ্গে ছবি, আসামির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে লেখা ডায়েরি ও তার ব্যবহৃত দুটি মুঠোফোন নিয়ে যায় পুলিশ।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২৮ এপ্রিল, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

অপরাধ ও আইন এর সর্বশেষ খবর

অপরাধ ও আইন - এর সব খবর