thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ 25, ২০ ফাল্গুন ১৪৩১,  ৪ রমজান 1446

পানিতে ডুবে মৃত্যু: বাংলাদেশের উদ্যোগে জাতিসংঘে রেজুলেশন পাস

২০২১ এপ্রিল ২৯ ১১:৫৭:৫৬
পানিতে ডুবে মৃত্যু: বাংলাদেশের উদ্যোগে জাতিসংঘে রেজুলেশন পাস

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ বিষয়ক ঐতিহাসিক এক রেজুলেশন সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করল জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ। প্রথমবারের মতো জাতিসংঘে নেয়া এই রেজুলেশনটি উত্থাপন করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। রেজুলেশনটিতে পানিতে ডুবে মৃত্যুকে একটি ‘নীরব মহামারি’ হিসেবে হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এ ধরণের রেজুলেশন এটিই প্রথম।

নীরব এই বৈশ্বিক মহামারির বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে নিয়ে আসতে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন গত ২০১৮ সালে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বাংলাদেশের পাশাপাশি রেজুলেশনটিতে সহ-নেতৃত্ব দেয় আয়ারল্যান্ড আর এতে সহ-পৃষ্ঠপোষকতা দেয় ৮১ টি দেশ। পানিতে ডুবে মৃত্যু বিশ্বের প্রতিটি জাতিকেই ক্ষতিগ্রস্থ করছে বলে রেজুলেশনে উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি অগ্রহণযোগ্য উচ্চহারের এই মৃত্যু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে একটি কর্ম-কাঠামোও ঠিক করা হয়েছে এতে।

পানিতে ডুবে-মৃত্যু প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি, জাতীয় পদক্ষেপকে উৎসাহিত করা এবং এ বিষয়ক সর্বোত্তম অনুশীলন ও সমাধানসমূহ পারস্পরিকভাবে ভাগ করে নেয়ার লক্ষ্যে ২৫ জুলাইকে ‘বিশ্ব ডুবে-মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে সাধারণ পরিষদ।

রেজুলেশনটি উত্থাপনের সময় দেয়া বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বলেন, “পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্যে জাতিসংঘে একটি রেজুলেশন গ্রহণের তাগিদ অনুভব করেছিল বাংলাদেশ।" তিনি আরো বলেন, “আমরা বিশ্বব্যাপী শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা যদি পানিতে ডুবে মৃত্যুহার-কে শুণ্যের কোটায় না আনতে পারি তবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় আমাদের সাফল্য অর্থাৎ এসডিজি-৩ অর্জন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে”।

পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণের মতো ঘটনার ৯০ ভাগ সংঘটিত হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে। এশিয়াতে এই সংখ্যা সবচেয়ে বেশি উল্লেখ করে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, "পানিতে ডুবে মৃত্যু কেবল দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি বৈষম্য”।

রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, যেহেতু পানিতে ডুবে-মৃত্যুর ঘটনাগুলি দরিদ্র পরিবারকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ করছে, তাই, এটি প্রতিরোধে নেয়া পদক্ষেপ এসডিজি-১ সহ আরও কয়েকটি এসডিজি অর্জনেও ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১৮ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করছে উল্লেখ করে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, "আর যাতে কোনো মূল্যবান জীবনের পানিতে ডুবে মৃত্য না হয় সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে শেখ হাসিনা সরকার। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে শিক্ষা, নারী ও শিশু, সমাজকল্যাণ, যুব ও ক্রীড়া এবং ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সসহ ১২টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত একটি আন্ত:মন্ত্রণালয় টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এই টাক্সফোর্স ‘পানিতে ডুবে মৃত্যু হ্রাস সংক্রান্ত জাতীয় কৌশল’ প্রণয়ণে কাজ করে যাচ্ছে"।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সবশেষ হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে প্রতিবছর ২লাখ ৩৫ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করছে। বিশ্বেও বেশ কয়েকটি দেশে পানিতে ডুবে-মৃত্যু শিশু মৃত্যু বিশেষ করে ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ।

জাতিসংঘে ৭৫ বছরের ইতিহাসে এমন একটি বিষয় তুলে ধরা হয়নি। পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধকে আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে নিয়ে আসা এবং এ বিষয়ক একটি রেজুলেশন গ্রহণে নেতৃত্ব দেয়ার মাধ্যমে বৈশ্বিক সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনে বাংলাদেশ তার একটি প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করলো বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২৯ এপ্রিল, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর