thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ১৮ জমাদিউল আউয়াল 1446

ঘুর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস মাত্রা ছাড়ালো

২০১৩ নভেম্বর ১২ ০৮:৪৪:০৭

ফিলিপাইনের স্থলভাগে আঘাত হেনেছে প্রলয়ঙ্করী ঘুর্ণিঝড় হাইয়ান। দশ হাজার মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। কয়েকটি জনপদ সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। আবহাওয়াবিদদের মতে ঘুর্ণিঝড়টি ছিল স্মরণকালের সবচাইতে প্রলয়ঙ্করী। শুক্রবার সকালে এটি ঘণ্টায় ৩৮৯ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে। ঘুর্ণিঝড়ের সঙ্গে ৪৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস এসে আঘাত হানে উপকূলে। তার সঙ্গে ছিল ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। প্যাসলোবান শহরের বেশিরভাগ ভবন ধ্বংস হয়ে যায়। তাছাড়া শহরটি পানিতেও ডুবে যায়।

শুধু সামরিক বিমানে ছাড়া দুর্গত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। যে অঞ্চলে ঘুর্ণিঝড়টি আঘাত হেনেছে তার ভূপ্রকৃতি ও জনবসতি সম্পর্কে আমাদের সম্যক জানা নেই। তাই ঘুর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ও জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতার কথা শুনে আমাদের আতকে ওঠারই কথা।

সমুদ্র উপকূলবর্তী একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ঝড় জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে চির পরিচিত। মাঝে মাঝে এর উপকূলবর্তী এলাকায় আঘাত হানে ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস। কিন্তু ফিলিপাইনের উপকূলে যে মাত্রায় ঘুর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস আঘাত হেনেছে তা আমাদের মধ্যে নতুন করে দুর্ভাবনার জন্ম দিয়েছে।

আমরা জানি ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভূ-প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেরই অংশ। আর মানুষ এগুলোকে মোকাবেলা করেই টিকে আছে। আধুনিক বিজ্ঞানের বিকাশের পর মানুষ এগুলোকে জয় করার স্বপ্ন দেখছে। বলা যায়, জয় করতে না পারলেও এ থেকে আত্মরক্ষার নতুন নতুন কৌশল বের করছে মানুষ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রকৃতির যে রুদ্রতার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে শুরু করেছে তা মানব সভ্যতাকে নতুন করে ভাবিয়ে তোলারই কথা।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্তর আমেরিকার উপকূলবর্তী এলাকায় যে ধরনের ভয়াবহ টর্নেডো আঘাত হানছে, যে ধরনের জলোচ্ছ্বাস-সুনামি এশীয় প্রশান্ত এলাকায় আঘাত হানছে এবং সর্বশেষ ফিলিপাইন উপকূলে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস যে মাত্রায় আঘাত হানলো তা দেখে পুরো মানব সভ্যতাকেই নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণে আজ যেভাবে কার্বন মিশ্রণ ঘটছে আণবিক বর্জ্য ফেলে সমুদ্র-মহাসমুদ্রগুলোর উপর যে আঘাত হানা হচ্ছে, আধুনিক নির্মাণকাজের জন্য প্রকৃতির চরিত্র যেভাবে পাল্টিয়ে ফেলা হচ্ছে তা দেখে স্বাভাবিকভাবেই মনে হতে পারে প্রকৃতি মনুষ্যসৃষ্ট এইসব অপকর্মই পাল্টা আঘাত হানছে না তো? আগে যা ছিলো সহনীয় মাত্রায় ক্রমান্বয়ে তা ঘটছে আরও ভয়াবহভাবে। আধুনিক বিজ্ঞাননির্ভর ব্যবস্থা দিয়ে যাকে মোকাবেলা করা যাচ্ছে না। এর খেসারত দিতে হচ্ছে ব্যাপক আকারে। প্রকৃতি বিজ্ঞানীদের এবং পৃথিবীর বিবেকবান মানুষদের প্রকৃতির এই প্রতিশোধপরায়ণ রূপকে অবশ্যই আমলে আনতে হবে। আমাদের উন্নয়ন-ভাবনায়ও আনতে হবে পরিবর্তন। যা প্রকৃতির চরিত্রের বিপরীত না হয়ে হবে তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একটি উন্নয়নশীল এবং ঘন জনসংখ্যার সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশ হিসেবে এক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে।

পাঠকের মতামত:

SMS Alert