thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৭ জমাদিউল আউয়াল 1446

সেই শিশুটি এখন ছোটমণি নিবাসের বাসিন্দা

২০২২ জুলাই ২৯ ২৩:৪৯:০০
সেই শিশুটি এখন ছোটমণি নিবাসের বাসিন্দা

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ১৫ দিন বয়সী ফাতেমা আজ থেকেরাজধানীর আজিমপুরের ছোটমণি নিবাসেরবাসিন্দা। আজ শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে ফাতেমাকে বহনকারী মাইক্রোবাসটি এখানে পৌঁছায়। নিয়ে এসেছেন দাদা মোস্তাফিজুর রহমান ও ১০ বছর বয়সী বড় বোনসহ আটজনের একটি দল। বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উদ্যোগে দলটি ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়।

ছোটমণি নিবাসে মা–বাবার পরিচয়হীন ০-৭ বছর বয়সী পরিত্যক্ত বা পাচার থেকে উদ্ধার হওয়া শিশুদের রাখা হয়। কিন্তু ফাতেমার সব পরিচয় থাকার পরও শিশুটির থাকা–খাওয়া, চিকিৎসার কথা চিন্তা করে তাকে ছোটমণি নিবাসে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। শুরুতে দাদা রাজি না থাকলেও পরে আর্থিক কষ্টের কথা চিন্তা করে প্রশাসনের সিদ্ধান্তে সায় দেন। নাতনি ভাত খাওয়ার বয়স হলেই নিয়ে যাবেন বলে এই প্রতিবেদককে জানান দাদা মোস্তাফিজুর।

১৬ জুলাই ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ট্রাকচাপায় মারা যান ফাতেমার বাবা জাহাঙ্গীর আলম (৪২), মা অন্তঃসত্ত্বা রত্না বেগম (৩২) ও ছয় বছর বয়সী বোন সানজিদা। মৃত্যুর আগে সড়কে সন্তান জন্ম দেন রত্না। এরপর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৮ জুলাই তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে শিশুটির চিকিৎসায় পাঁচ সদস্যের বোর্ড গঠন করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ফাতেমা যে সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিল, তা সেরে গেছে। তবে দুর্ঘটনার সময় ভেঙে যাওয়া ডান হাতের কবজি সম্পূর্ণ সারতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আড়াইটার সময় আমাদের কাছে বাচ্চাটিকে হস্তান্তর করা হয়। এখানে মাতৃস্নেহে, অন্য শিশুদের সঙ্গে আদরযত্নে পারিবারিক পরিবেশেই বেড়ে উঠবে সে।’

ত্রিশাল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান জানান, তাঁরা শিশুটিকে হস্তান্তর করেছেন। এখন থেকে ছোটমণি নিবাসই তার দায়িত্বে থাকবে।

ফাতেমাকে যখন তার জন্য নির্ধারিত বিছানায় শোয়ানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল, তখন ছোটমণি নিবাসের অন্য শিশুরা চারপাশে ভিড় করে। ছবি তোলার সময় তারাও পোজ দিয়ে দাঁড়ায়। সবার উষ্ণ অভ্যর্থনায় ফাতেমার দাদা যেন কিছুটা স্বস্তি পান। তিনি বলেন, ‘সরকার সব দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দিছে। নাতনির ভাত খাওয়ার বয়স হইলেই নিয়ে যাব। এখন আমার একটু সমস্যা চলছে। প্রশাসনের আশ্বাসে রেখে গেলাম।’ দত্তক প্রশ্নে তিনি জানান, প্রায় সবই হারিয়েছেন। নাতনিকে তিনি ছাড়বেন না।গতকাল বৃহস্পতিবার নিজের আর্থিক অবস্থা বলতে গিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছিলেন, জাহাঙ্গীর আলম মারা যাওয়ার পর পরিবারে আর কোনো কর্মক্ষম সদস্য নেই। জাহাঙ্গীরের আরও দুটি সন্তান আছে। তিনি নিজেও শারীরিক প্রতিবন্ধী।

সরকার সব দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দিছে। নাতনির ভাত খাওয়ার বয়স হইলেই নিয়ে যাব।

ছোটমণি নিবাসের কর্মকর্তারা জানান, ফাতেমার চিকিৎসাসহ জন্য সব ব্যবস্থাই থাকবে। তার দাদা নাতনিকে যখন ইচ্ছা এসে দেখে যেতে পারবেন। কর্মকর্তারা এই দাদাকে বারবার বোঝাচ্ছিলেন, তাঁর নাতনি বেশ আদর–যত্নে থাকবে। তাঁকে কোনো চিন্তা করতে হবে না।

এই নিবাসে এখন ফাতেমাসহ সাত বছর বয়স পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সী ২৯টি শিশু আছে। তাদের দেখভালের জন্য প্রতি পালায় ৪ থেকে ৫ জন করে নিয়োজিত থাকে। খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো, খেলাধুলা ও সামগ্রিক পরিচর্যার জন্য তাঁরা সার্বক্ষণিক কাজ করেন বলে জানায় নিবাসের কর্তৃপক্ষ।

এদিকে বড় বোন জান্নাত ক্ষণে ক্ষণে বোনকে ছুঁয়ে দেখছে। ফাতেমা নামটি সে-ই দিয়েছে। সেদিনের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মা-বাবা, এক বোনকে সে হারিয়েছে। ছোট্ট বোনটিও এখন দূরে থাকবে। মন খারাপ করেই বোনের চারপাশে ঘুর ঘুর করছিল।

ঘড়ির কাঁটায় বেলা তিনটা। ফাতেমাকে স্বাগত জানানোর উত্তেজনায় বাচ্চাদের দুপুরের ঘুম উধাও। তবু ঘুমানোর আদেশ পেয়ে সবাই বিছানায় উঠে গেল। ওদিকে ফাতেমা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। দাদা ও বোন তাকে রেখে আজই বাড়ির পথ ধরবে। দ্য রিপোর্ট/ টিআইএম/

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর