thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১,  ২০ জমাদিউস সানি 1446

পদ হারানোর শঙ্কায় শীর্ষ নেতারা

২০১৪ মার্চ ২৯ ১৩:১৪:৪৫
পদ হারানোর শঙ্কায় শীর্ষ নেতারা

বান্দরবান প্রতিনিধি : উপজেলা নির্বাচনে বান্দরবানের সাতটি উপজেলাতেই হেরেছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এ পরাজয়ে বেকায়দায় পড়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। তৃণমূল ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের অভিযোগ, সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণেই দলের প্রার্থীরা হেরেছেন। আর ‘আলংকরিক’ নেতাদের কারণেই দল সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। উপজেলা নির্বাচনের ভরাডুবির পর পদ হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতা।

জানা গেছে, জেলার শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা যোগ্য-সক্রিয় ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে অযোগ্য ব্যক্তিকে উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামতের মূল্যায়ণ না করে প্রার্থী দেওয়ায় সাত উপজেলার একটিতেও জয় পাননি আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা।

এই পরাজয়কে আওয়ামী লীগের জন্য ‘অশনি সংকেত’ হিসেবে দেখছেন অনেকে।

আওয়ামী লীগ থেকে বাদ পড়া নেতা জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৭ বছরের টানা সভাপতি প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘সাত উপজেলায় আওয়ামী লীগের ভরাডুবি একটি অশনি সংকেত। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামতের মূল্যায়ণ করতে বারবার তাগিদ দিয়ে এসেছি। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতারা বিষয়টিতে গুরুত্ব না দেওয়ায় তৃণমূলের সংগঠন কোথায় যাচ্ছে সেটিও খেয়াল রাখেনি। সংগঠন যাদের গ্রহণযোগ্য মনে করছে, তারাই সুবিধা আদায়ের জন্য ত্যাগী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ভুল বুঝিয়ে সংগঠনের ক্ষতি করেছেন। সুবিধাভোগী ওই নেতাদের আচার-আচরণ, কর্মকাণ্ডে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চরম অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ। সবগুলো উপজেলায় ভরাডুবির এটিই মূল কারণ।’

সাবেক পৌর মেয়র ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান বিপ্লব বলেন, ‘স্থানীয় জনগণের আস্থা হারিয়েছে বান্দরবান আওয়ামী লীগ। পাহাড়ের সংখ্যালঘুরা আওয়ামী লীগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, যার প্রতিফলন সাত উপজেলা নির্বাচনে ঘটেছে।’

জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক সাদেক হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘সাত উপজেলায় আওয়ামী লীগের ভরাডুবির জন্য স্থানীয় নেতাদের দলাদলিই আর একটি কারণ। দলের শীর্ষপদে থাকা অধিকাংশ নেতাই আলংকরিক। যারা অনেক ক্ষেত্রেই দলীয় প্রার্থীদের পরাজয় নিশ্চিত করতেই কাজ করেছেন। বীর বাহাদুর এমপির সাজানো বাগান ধ্বংস করতে কাজ করেছেন। এ ধরনের সুবিধাভোগী আলংকরিক নেতাদের বাদ দিয়ে সংগঠনকে পুনর্গঠনের দাবি উঠেছে তৃণমূল থেকে। এর সঙ্গে একমত পোষণ করে সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর দাবি আমাদেরও।’

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তসলিম ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করেছেন। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে নেতাকর্মীদের অসন্তোষ ও বিভাজন তৈরি করেছেন। বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়ানো হয়েছে। সংগঠনের নেতাদের দলাদলির কারণেই প্রার্থীদের পরাজয় ঘটেছে।’

আলীকদম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নাছির বলেন, ‘প্রার্থী সিলেকশনে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামতের মূল্যায়ণ করা হয়নি। যে কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো ধরনের সমন্বয় ছিল না। নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ, অসন্তোষই পরাজয়ের অন্যতম কারণ।’

লামা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘জয়-পরাজয় ভাগ্যের বিষয়। নেতাকর্মীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ছিল, ভুল বোঝাবুঝি এবং বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ব্যাপারটাও ছিল অন্যতম কারণ। তবে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিও পরাজয়ের জন্য অনেকটা দায়ী।’

রোয়াংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যা ও সাধারণ সম্পাদক চহ্লা মং মারমা বলেন, ‘ভয়ভীতির কারণে ভোটারেরা পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে পারেনি। সকলের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করেছে। সাংগঠনিকভাবে কোনো দুর্বলতা ছিল না। স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে-প্রাণে আন্তরিকভাবে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন।’

রুমা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জুয়েল বম বলেন, ‘নেতাকর্মীদের সমন্বয়নহীনতা কিছুটা ছিল। তবে মূল কারণ হচ্ছে- ভয়ভীতির কারণে ভোটারেরা পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে পারেনি। সকলের মধ্যে আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন নিয়ে এক ধরনের আতঙ্ক ছিল।’

থানছি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মংথোয়াই ম্যা রনি বলেন, ‘অন্য প্রার্থীদের তুলনায় সামগ্রিকভাবে দুর্বল ছিল আওয়ামী লীগের প্রার্থী থোয়াই হ্লা মং। কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই হুট করে প্রার্থী ঘোষণা করে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছিল। যে কারণে বিড়ম্বনার পাশাপাশি কর্মী-সমর্থকদের নানা কথাও শুনতে হয়েছে।’ সময় স্বল্পতায় ভোটারের কাছেও পৌঁছতে পারেনি, প্রচার-প্রচারণায় অনেক ঘাটতি ছিল। এ সব কিছুই পরাজয়ের অন্যতম কারণ।’

বান্দরবান সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পাইহ্লা অং মারমা বলেন, ‘সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণেই পরাজয়। সঠিকভাবে মূল্যায়ণ না করায় হতাশ এবং ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়েও নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।’ এদিকে নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দলের মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি এবং জেলা কমিটিসহ অঙ্গসংগঠনগুলোর কমিটি গঠনে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ণ না করায় সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও দূরত্ব বেড়েছে। এতে সক্রিয় নেতাকর্মীরাও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। এটিও পরাজয়ের অন্যতম একটি কারণ।

(দ্য রিপোর্ট/এএস/ইইউ/এএস/আরকে/মার্চ ২৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর