thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৩ জমাদিউল আউয়াল 1446

লুণ্ঠনের দ্বিতীয় উৎস হচ্ছে শেয়ারবাজার-ড. দেবপ্রিয়

২০২২ আগস্ট ৩০ ১৮:২৮:৩০
লুণ্ঠনের দ্বিতীয় উৎস হচ্ছে শেয়ারবাজার-ড. দেবপ্রিয়

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক:‘প্রতিটি দেশে অর্থনীতির বিকাশ শুরু হলে লুণ্ঠন হয়। আমাদের দেশেও তা হয়েছে। আশির দশকে ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউটের (ডিএফআই) শিল্প সংস্থার মাধ্যমে ঋণ দেওয়া শুরু হয়। ওই সময় ভিত্তিহীন অনেক প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। এসব ঋণই খেলাপির প্রথম উৎস, যা আজও বিদ্যমান। আর দেশে লুণ্ঠনের দ্বিতীয় উৎস হচ্ছে শেয়ারবাজার।’

মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম মিলনায়তনে ‘ইআরএফ ডায়ালগ’-এ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেছেন। ইআরএফের সভাপতি শারমিন রিনভীর সভাপতিত্বে সংলাপ সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘১৯৯৬ সালে ভিত্তিহীন কোম্পানিগুলো প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা উঠিয়ে নিয়েছে। পরবর্তীতে সেই কোম্পানিগুলোকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।’

তিনি বলেন, ‘সরকারি টাকায় প্রকল্প হচ্ছে লুণ্ঠনের আরেকটি মাধ্যম। এ খাতের ব্যক্তি, গোষ্ঠী এবং প্রতিষ্ঠান সুবিধাভোগী। ফলে, শ্রেণির চেয়ে ব্যক্তির অগ্রাধিকার বেশি। এসব ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা না থাকায়, নির্বাচন ব্যবস্থা না থাকায় উৎপাদনশীল উদ্যোক্তা কমে যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে প্রতিযোগিতা। এক্ষেত্রে সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকলে ভবিষ্যতে জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি চাপে আছে, তবে সঙ্কটে নেই। এই চাপ দীর্ঘ মেয়াদে চলতে থাকলে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা আছে। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে ভালো হবে না। যারা বলছেন, আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে, তাদের জন্যেই পরিস্থিতি অস্থিতীশীল হবে। আগামী ২০২৩ কিংবা ২০২৪ সালের আগে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’

‘গত এক দশ ধরেই দেশ উন্নয়নের অভিযাত্রায় আছে। এ সময় দেশের অনেক সাফল্য আছে। দেশের ৫০ বছরের ইতিহাসের মধ্যে গত ১০ বছর প্রতিশ্রুতিশীল সফল দশক হিসেবে বিবেচিত হবে। এ সময় কৃষি উৎপাদন বেড়েছে, রেমিট্যান্স বেড়েছে, ভৌত অবকাঠামোসহ নানা খাতে উন্নয়ন হয়েছে। তবে, পেশাদার অর্থনীতিবিদদের মতে, এ সময় চার ধরনের বিচ্যুতি দেখা গেছে। গত ১০ বছর বাংলাদেশের যে হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, সেভাবে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বাড়েনি, এটি হলো প্রথম বিচ্যুতি। বিদেশি বিনিয়োগ ২ বিলিয়ন ডলারের ওপরে উঠতে পারেনি, যা জিডিপির ১ শতাংশের নিচে। এ সময় রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ হয়েছে। রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বেশি হওয়ায় ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। অর্থনীতিকে স্বাভাবিক রাখতে ভবিষ্যতে ব্যক্তি খাতের বিনিযোগ গুরুত্ব দিতে হবে। দ্বিতীয় বিচ্যুতি হলো—আর্থিক খাতের দুর্বলতা। এর মধ্যে অন্যতম হলো কর আহরণে অপারগতা। প্রত্যেক্ষ কর আহরণ করতে না পারলেও ভ্যাটের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে সবার ওপর করহার চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর্থিক দুর্বলতার ফলে নিজেদের প্রয়োজনে আমদানি করতে পারছে না, শুল্ক কমানো যাচ্ছে না,’ বলেন এই অর্থনীতিবিদ।

তৃতীয় বিচ্যুতির বিষয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নেই। দেশে দৃশ্যমান অবকাঠামোর জন্য যে ব্যয় করা হয়েছে, সে হারে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। তবে, দৃশ্যমান অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয়েছে, তা রাজনৈতিক ঘাটতি পূরণ করতে করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আন্তঃখাতে এই বৈষম্য দূর করতে হবে। সর্বশেষ বিচ্যুতি হলো—সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দে বৈষম্য। এর ফলে সাধারণ মানুষ যতটুকু পাপ্য, তা পায়নি। সামাজিক নিরাপত্তায় বৈষম্যের কারণে নাগরিকদের স্বাস্থ্য শিক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। ভবিষ্যতে জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে এসব বিচ্যুতি কমাতে হবে।’

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর