thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৩ জমাদিউল আউয়াল 1446

রনাঙ্গনে বিপদে রাশিয়া: 

রুশ সৈন্যদের হটিয়ে খারকিভের রাস্তায় ইউক্রেনীয় সৈন্যদের আনাগোনা 

২০২২ সেপ্টেম্বর ১৪ ১৬:০৫:২৫
রুশ সৈন্যদের হটিয়ে খারকিভের রাস্তায় ইউক্রেনীয় সৈন্যদের আনাগোনা 

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বের অনেক গ্রাম ও শহরে বেশ কয়েক মাস পর নতুন করে নীল-হলুদ পতাকা উড়তে দেখা যাচ্ছে। রুশ সৈন্যদের বদলে এখন সেসব এলাকার রাস্তায় রাস্তায় ইউক্রেনীয় সৈন্যদের আনাগোনা।

প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি মঙ্গলবার দাবি করেন যে উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণে তার সেনাবাহিনী রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ থেকে ৬,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা দখল করে নিয়েছে। যদি এই দাবি সত্যি হয়, তাহলে গত পাঁচ মাস ধরে রাশিয়া ইউক্রেনের যতটা জায়গা দখলে নিয়েছিল, ইউক্রেনীয় সেনারা মাত্র সাত দিনে তার চেয়ে বেশি এলাকা পুনর্দখল করেছে।

ইউক্রেনের পুনরায় দখল করা এলাকার সুনির্দিষ্ট আয়তন নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা এখনও সম্ভব নয়, তবে রণাঙ্গন থেকে সাংবাদিকরা জানাচ্ছেন বিশাল এলাকা থেকে রুশ সৈন্যরা দ্রুত পিছু হটেছে। বিশেষ করে খারকিভ অঞ্চলের প্রায় পুরোটাই এখন আবারও ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে। অনেক জায়গায় অস্ত্র-সরঞ্জাম ফেলেই রুশ সৈন্যরা চলে গেছে।

এই পিছু হটার কথা রাশিয়া নিজেরাও অস্বীকার করেনি।

মস্কো থেকে বিবিসির স্টিভেন রোজেনবার্গ জানাচ্ছেন, রুশ রাষ্ট্রীয় যে টিভি নিয়মিত যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ সৈন্যদের সাফল্যের নানা ফিরিস্তি তুলে ধরে, শনিবার তারা তাদের সাপ্তাহিক সংবাদ-ভিত্তিক ফ্ল্যাগশিপ অনুষ্ঠানটি শুরুই করে বিরল এক স্বীকারোক্তি দিয়ে।

"আমাদের বিশেষ সামরিক অভিযানের রণাঙ্গনে এ যাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন সময় যাচ্ছে," ভাবগম্ভীর গলায় বলতে শুরু করেন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক।

"খারকিভ ফ্রন্টে পরিস্থিতি খারাপ - শত্রু সৈন্যের (ইউক্রেনীয়) সংখ্যা ছিল আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে যেসব শহর আমাদের সৈন্যরা মুক্ত করেছিল, এমন অনেক শহর থেকে তাদের চলে যেতে হয়েছে।"

যদিও রাশিয়ার প্রতিরক্ষা বিভাগের পক্ষ থেকে বলার চেষ্টা হচ্ছে যে এটি পলায়ন নয়, বরং যুদ্ধ কৌশলের অংশ হিসাবে সাময়িক পিছু হটা, কিন্তু পশ্চিমা সামরিক বিশ্লেষকদের অনেকেই গত এক সপ্তাহে উত্তর-পূর্বের রণাঙ্গনের ঘটনাপ্রবাহকে ইউক্রেনের অসামান্য সামরিক সাফল্য এবং রাশিয়ার চরম ব্যর্থতা হিসাবে দেখছেন।

কতগুলো প্রশ্ন নিয়ে এখন বিস্তার আলোচনা-বিতর্ক, বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে - ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বে যেসব জায়গা যুদ্ধের একদম শুরু থেকেই রাশিয়ার কব্জায় ছিল কীভাবে এক সপ্তাহের মধ্যে তা তারা হারিয়ে ফেললো? দক্ষিণের খেরসন বা মারিউপোল বা পূর্বের ডনবাসেও কি আগামী দিনগুলোতে একই ঘটনা চোখে পড়বে? প্রেসিডেন্ট পুতিন এখন কী করবেন?

আমেরিকা এবং নেটো জোটের কয়েকটি দেশ থেকে অব্যাহতভাবে পাওয়া বিপুল পরিমাণ অত্যাধুনিক অস্ত্র যে রণাঙ্গনে ইউক্রেনকে দিনে দিনে শক্তিশালী করেছে এবং একই সাথে রাশিয়াকে চাপে ফেলছে, তা নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে তেমন কোন মতান্তর নেই।

আমেরিকা এখন পর্যন্ত একাই ইউক্রেনের জন্য প্রায় ২,৫০০ কোটি ডলারের অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম দেয়ার অঙ্গীকার করেছে, এবং মার্কিন সেনাপ্রধান জেনারেলে মার্ক মিলি গত সপ্তাহে বলেছেন যে তাদের দেওয়া হিমারস দূরপাল্লার রকেট লঞ্চার দিয়ে ইউক্রেনীয়রা গত কয়েক সপ্তাহে চারশো'র মতো রুশ অস্ত্র ডিপো, কম্যান্ড পোস্ট এবং অন্যান্য টার্গেটে আঘাত করেছে।

এরই মধ্যে আট লাখেরও বেশি রাউন্ড ১৫৫ মিমি আর্টিলারি শেল ইউক্রেনকে পাঠিয়েছে আমেরিকা, যা দিয়ে এই পাল্টা হামলা চালানো হচ্ছে।

জেনারেল মিলি বলেন, "আমরা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি এসব অস্ত্র দিয়ে ইউক্রেন সত্যিকারের সাফল্য পাচ্ছে।"

তবে কুয়ালালামপুরে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সমর কৌশল বিশেষজ্ঞ ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী মনে করেন, অস্ত্র ছাড়াও আমেরিকা এবং নেটোর কাছ থেকে পাওয়া গোয়েন্দা তথ্য এবং পরামর্শ ইউক্রেনকে ব্যাপকভাবে সাহায্য করছে।

"গত মাস তিনেক ধরে ইউক্রেন বিভিন্নভাবে বার্তা দিচ্ছিল যে তারা দক্ষিণে পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস রাশিয়া তাতে বিশ্বাস করেছে এবং পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব থেকে বহু সৈন্য সরিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিরোধের জন্য নিয়ে গেছে," বলেন তিনি।

তার ফলেই, ড. আলী যোগ করেন, উত্তর-পূর্বের প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে গেছে এবং ইউক্রেনের সৈন্যরা বড় কোন প্রতিরোধ ছাড়াই রাশিয়া অধিকৃত অঞ্চলে দ্রুত ঢুকে পড়েছে।

"যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুকে বিভ্রান্ত করা খুবই পুরনো কৌশল। এবং আমার মনে হয়, ইউক্রেন বেশ সাফল্যের সাথে রাশিয়াকে বিভ্রান্ত করতে পেরেছে," বলেন মাহমুদ আলী।

ব্রিটিশ- আমেরিকান গোয়েন্দা তথ্য:

কীভাবে ইউক্রেনীয় বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের পাল্টা হামলায় এই সাফল্য পাচ্ছে, তা নিয়ে মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস উচ্চ পর্যায়ের মার্কিন কর্মকর্তাদের সূত্র থেকে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।

ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, কয়েক মাস আগে মার্কিন এবং ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েক দফা গোপন শলা-পরামর্শের মধ্য দিয়ে এই সমর কৌশলের সূচনা হয়।

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালিভান এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টে জেলেনস্কির একজন শীর্ষ উপদেষ্টা কয়েকবার নিজেদের মধ্যে কথা বলেছেন। জেনারেল মার্ক মিলি ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর সিনিয়র ক'জন জেনারেলের সাথে নিয়মিত আলোচনা করেছেন। কিয়েভে বসে সেই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হয়েছেন বেশ ক'জন ব্রিটিশ সামরিক পরামর্শকও।

সেই সাথে, কিয়েভে নতুন নিযুক্ত মার্কিন সামরিক আ্যাটাশে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গ্যারিক হারম্যান দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রতিদিন ইউক্রেনীয় শীর্ষ কম্যান্ডারদের সাথে বৈঠক শুরু করেন।

নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী, দক্ষিণের খেরসন অঞ্চলে এই মুহুর্তে কোনও পাল্টা হামলা ব্যর্থ হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে আপাতত উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে টার্গেট করতে ইউক্রেনকে পরামর্শ দেয়া হয়।

অগাস্ট মাস ধরে ব্রিটিশ ও আমেরিকানরা রুশ সৈন্যদের অবস্থান ও গতিবিধির গোয়েন্দা তথ্য ইউক্রেনকে দিয়ে গেছে, যা পুরোপুরি অনুধাবনে রুশরা ব্যর্থ হয়েছে বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

ইউক্রেনের সরকার এখন খোলাখুলি বলছে যে তাদের টার্গেট এখন দক্ষিণে ক্রাইমিয়ার সীমান্তবর্তী খেরসন, মারিউপোল এবং সেই সাথে পূর্বের ডনবাস। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, শীতের আগে জাপোরোশিয়ার পারমানবিক কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়াও এখন ইউক্রেনের অন্যতম প্রধান সামরিক লক্ষ্য।

কিন্তু সেটি কি করতে পারবে তারা?

এ ব্যাপারে অবশ্য অনেকেই সন্দিহান। এমনকি ইউক্রেনের এই সামরিক সাফল্যকে কতটা গুরুত্ব দেয়া উচিৎ, তা নিয়েও বিশ্লেষকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

কারণ, খেরসন-সহ দক্ষিণের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিশাল এলাকা এখনও রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। পূর্বের ডনবাস অঞ্চলের ৯০ শতাংশই তাদের দখলে।

এমনকি পুনর্দখল করা উত্তর-পূর্বের খারকিভ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ স্থায়ীভাবে ধরে রাখাটাও ইউক্রেনের জন্য কতটা সহজ হবে, তা নিয়েও সন্দেহ প্রবল। কারণ এলাকাটি রাশিয়ার সীমান্তে, এবং ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে রাশিয়া তাদের সীমান্তের ভেতর থেকেই দূরপাল্লার কামান দিয়ে সহজেই আঘাত করার ক্ষমতা রাখে।

রোববার খারকিভ শহরে দেশের বৃহত্তম থারমাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি রুশ ক্ষেপনাস্ত্র হামলায় বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে ইউক্রেনের এই নিয়ন্ত্রণ কতটা ভঙ্গুর।

বিবিসির প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংবাদদাতা জনাথন বিল বলেন, রাশিয়া গত কয়েক মাসে আস্তে আস্তে পূর্ব থেকে সৈন্য সরিয়ে দক্ষিণে প্রতিরক্ষা জোরদার করেছে। তাছাড়া দক্ষিণের যে ভৌগলিক বাস্তবতা, তাতে প্রায় উন্মুক্ত প্রান্তরে রুশ সৈন্যদের সাথে ইউক্রেনীয়দের লড়তে হবে - যেটা তাদের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।

"যুদ্ধের প্রথম দিকে রুশ সৈন্যদের যে বিপদ পোহাতে হয়েছে, ঠিক একই হাল হতে পারে দক্ষিণে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের। অনেকগুলো ফ্রন্ট এক সাথে খুললে তাদের বড় ঝুঁকির মুখে পড়তে হতে পারে ... যত ভেতরে তারা ঢুকবে সরবরাহ লাইন তত লম্বা হবে - যা রাশিয়ার টার্গেট হতে পরে। জায়গায় জায়গায় ইউক্রেনীয়রা ঘেরাও হয়ে পড়তে পারে।"

যুদ্ধে এলাকা দখল করা যতটা কঠিন, তা ধরে রাখা যে আরও কঠিন - উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে রুশ সৈন্যদের পালানোর ঘটনা তার একটি নমুনা।

এছাড়া, ক্রাইমিয়ার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা রাশিয়ার কাছে এক নম্বর অগ্রাধিকার। খেরসন এবং মারিউপোলের মত জায়গার নিয়ন্ত্রণ তাই তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারলে রাশিয়ার মূল ভূখন্ডের সাথে ক্রাইমিয়ার স্থলপথে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে।

ফলে, বিশ্লেষকরা মনে করেন, দক্ষিণের নিয়ন্ত্রণ সংহত করতে রাশিয়া তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করবে।

তবে বিশাল একটি এলাকা পুনর্দখলের ঘটনায় এই মুহুর্তে রাজনৈতিক কিছু সুবিধা পেতে পারে ইউক্রেন।

"তারা এখন বাকি বিশ্বের কাছে, বিশেষ করে পশ্চিমাদের কাছে ইঙ্গিত পাঠাচ্ছে যে তারা এই যুদ্ধে জিততে পারে এবং তাদেরকে অস্ত্র সাহায্য দেওয়া নিয়ে কারও ভেতর যেন আর কোন দ্বিধা না থাকে," বলেন বিবিসির জনাথন বিল।

প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সিনিয়র উপদেষ্টা আলেক্জান্ডার রোদনিয়ানস্কি সোমবার বিবিসিকে বলেন, "যুদ্ধক্ষেত্রে এই সাফল্য অব্যাহত রাখার জন্য ইউরোপের সমর্থন অত্যন্ত জরুরি। আমরা আমাদের দেশ মুক্ত করছি, আমাদের অনেক সহযোগী মনে করেছিল এটা সম্ভব নয়।"

এরই মধ্যে ইউক্রেন আরও অস্ত্রের জন্য চাপ তৈরি করেছে। বিশেষ করে টার্গেট করেছে জার্মানিকে, যারা এখনও ইউক্রেনকে লেপার্ড ট্যাংক-সহ অত্যাধুনিক অস্ত্র দিতে গড়িমসি করছে।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা মঙ্গলবার বলেন, জার্মানি এখনও অস্ত্র দেওয়া নিয়ে "হতাশাব্যাঞ্জক সংকেত" দিচ্ছে। এক টুইটে তিনি বলেন, "এই অস্ত্র তারা কেন দিচ্ছে না, তার একটিও যৌক্তিক কারণ নেই। যে ভয় কিয়েভ পায় না, তা নিয়ে জার্মানির ভয় কী?"

চাপে পুতিন:

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা দপ্তর এবং ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে তাদের সৈন্যদের পিছু হটার ঘটনাকে যুদ্ধের কৌশল হিসাবে দেখানোর চেষ্টা চলছে। বারবার বলা হচ্ছে, ইউক্রেনে তাদের 'বিশেষ সামরিক অভিযানের' যে লক্ষ্য, তা অর্জিত হচ্ছে।

কিন্তু রণক্ষেত্রের এই চিত্র পুতিন বিরোধীদের শক্তি বাড়িয়েছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। মিডিয়াতে, সোশাল মিডিয়াতে তারা ইউক্রেনে যুদ্ধ কৌশলে নিয়ে খোলাখুলি প্রশ্ন তুলছেন। এমনকি যুদ্ধের সমর্থকরাও হতাশা, ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা।

পুতিনের ঘোরতর সমর্থক হিসাবে পরিচিত চেচেন নেতা রমজান কাদিরভ খোলাখুলি বলেছেন ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে সরকারের কৌশল নিয়ে তিনি সরাসরি পুতিনের সাথে কথা বলতে চান, কারণ সরকারের ভেতর অন্যদের ওপর তিনি ভরসা করতে পারছেন না।

ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে খোলাখুলি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘোরতর সমর্থক হিসাবে পরিচিত চেচেন নেতা রমজান কাদিরভ

আরও বেশ কজনের মত রুশ পার্লামেন্টে কমিউনিস্ট পার্টির নেতা গেন্নাদি জুগানভ ইউক্রেনে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করে জনগণকে এই লড়াইতে সম্পৃক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।

সন্দেহ নেই, দেশের ভেতর চাপে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। ইউক্রেনে রাশিয়ার পরিণতি কী দাঁড়াতে পারে, তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ দানা বাঁধছে।

মি. পুতিন তার দেশের মানুষকে আশ্বস্ত করছেন যে ইউক্রেনের সামরিক অভিযানে তার কিছু "সীমিত লক্ষ্য" রয়েছে এবং সেগুলো তিনি অর্জন করেই ছাড়বেন।

ড. মাহমুদ আলী মনে করেন যে ইউক্রেনে প্রেসিডেন্ট পুতিন তার লক্ষ্য অর্জনে কতটা সুবিধা করতে পারছেন তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

তিনি বলেন, "দাড়িপাল্লার নিক্তিতে ওজন করলে আপনি সাফল্য-ব্যর্থতা দুটোই দেখতে পাবেন। তার (পুতিনের) যদি লক্ষ্য হয়ে থাকে ইউক্রেন যেন কোনওভাবে নেটো জোটের পুর্নাঙ্গ সদস্য না হতে পারে, সেটা নিশ্চিত করা - তাহলে তিনি তাতে আপাতত সফল হয়েছেন।

"কিন্তু তার অন্যতম লক্ষ্য যদি হয়ে থাকে জেলেনস্কিকে সরিয়ে রুশপন্থী কোন সরকার কিয়েভে বসানো, তাহলে তিনি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। ইউক্রেন থেকে তিনি কি নেটোকে সরাতে পেরেছেন? পারেননি," বলেন মি. আলী।

কিন্তু তারপরও ইউক্রেনে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করতে মি. পুতিন চাইছেন না। তার দ্বিধার অন্যতম কারণ হয়তো যে তাকে তখন সেনাবাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামুলক করতে হতে পারে, এবং তাতে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে জনমত বিগড়ে যেতে পারে।

কোন দিকে গড়াবে যুদ্ধ:

সেক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে, মি. পুতিন এখন কী করবেন?

মস্কোতে বিবিসির সংবাদদাতা স্টিভ রোজেনবার্গ বলছেন, কেউ-ই তা জানে না। তবে, তিনি বলেন, "একটি বিষয় সবাই জানেন যে মি পুতিন কখনও ভুল স্বীকার করার লোক নন, আর তিনি পিছু ফেরেন না।"

অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন যে শীতের আগে ইউক্রেন দক্ষিণের খেরসন এবং ডনবাসে ব্যাপক পাল্টা হামলার পরিকল্পনা করছে, এবং সেজন্য আমেরিকার কাছ থেকে আরও দূরপাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র চাইছে।

রুশ সরকারের মধ্যে এখনও তেমন কোন অস্থিরতা চোখে পড়ছে না।

কিন্তু ইউক্রেনে যদি তিনি আরও কোনঠাসা হন, তাহলে পরমানবিক বা অন্য কোনো ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহারের পথে মি. পুতিন যাবেন কি-না তা নিয়ে পশ্চিমা বিশ্লেষক মহলে কানাঘুষো শুরু হয়েছে।

অনেকেই সেই আশঙ্কা পুরোপুরি নাকচ করতে রাজী নন।

তবে ড. মাহমুদ আলী মনে করেন না যে রাশিয়া আদৌ পারমানবিক বা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের কথা বিবেচনা করছে। "এটা ঠিক যে রাশিয়া কোনওভাবেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে দিতে চাইবে যাতে ক্রাইমিয়া তাদের হাতছাড়া হওয়ার জোগাড় হয়। কিন্তু মি. পুতিন খুব ভালোভাবে জানেন পারমানবিক অস্ত্র ব্যবহারের পরিনতি কী হবে। তার নিজের দেশই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।"

রাশিয়া এখন খেরসন এবং ডনবানের প্রতিরক্ষা সংহত করতে জোর পদক্ষেপ নেবে বলে মনে করেন ড. আলী। কিন্তু তার ধারণা, বেশি বিপদ দেখলে হয়তো যুদ্ধকে "বিপজ্জনক মাত্রায়" সম্প্রসারিত করবে রাশিয়া।

ইউক্রেন সেনাবাহিনী ছবিটি প্রকাশ করে দাবি করেছে, নদীর মধ্যে এসব অস্ত্র রুশ সৈন্যরা ফেলে পালিয়েছে

তিনি বলেন, দু'ভাবে রাশিয়া তা করতে পারে: প্রথমত, ইউক্রেন বাদে অন্যত্র যুদ্ধ শুরু করে দিতে পারে। "অনেক সময় যুদ্ধরত কোন দেশ যখন মনে করে তারা জিততে পারছে না, তখন অস্থিরতা তৈরির জন্য সম্পূর্ণ অন্য জায়গায় যুদ্ধকে নিয়ে যেতে পারে। রাশিয়ার পক্ষে তা করা সম্ভব।"

দ্বিতীয়ত, তাদের হাতে যে ভয়াবহ সব মারণান্ত্র রয়েছে - যেগুলো তারা এখনও ইউক্রেনে ব্যবহারই করেনি - সেগুলোর ব্যবহার শুরু করতে পারে।

ড. আলী বলেন, এখনও রাশিয়া তাদের সমরশক্তির "সীমিত একটি অংশ" ইউক্রেনে ব্যবহার করেছে - বিমান বাহিনীর খুব ছোটো একটি অংশ ব্যবহার করেছে, কিছু বিধ্বংসী ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবহারই করেনি।

"যদি পরিস্থিতি সত্যিই একবারেই নাগালের বাইরে চলে যায়, আমরা হয়তো রাশিয়াকে তাদের সেই অব্যবহৃত বিমান এবং ক্ষেপনাস্ত্র শক্তির করতে প্রয়োগ দেখবো।"

গত এক সপ্তাহ ধরে ইউক্রেন দেখাচ্ছে যে তারা বিস্ময় তৈরির ক্ষমতা রাখে - রাশিয়ার সমর শক্তি নিয়ে যে মিথ বা পুরাকথা চালু ছিল তা হয়তো অনেকটাই তারা ভেঙ্গে দিতে পেরেছে।

তবে যুদ্ধ শেষ হতে হয়তো এখনও আরও অনেক দেরি হতে পারে।

( দ্য রিপোর্ট/ টিআইএম/১৪-০৯-২০২২)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

বিশ্ব এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ব - এর সব খবর