thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৪ জমাদিউল আউয়াল 1446

ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে তালিকাভুক্ত কোম্পানি কম দর হারায়-খায়রুল হোসেন

২০২২ সেপ্টেম্বর ১৮ ২১:৫১:৪৫
ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে তালিকাভুক্ত কোম্পানি কম দর হারায়-খায়রুল হোসেন

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক:বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. খায়রুল হোসেন বলেছেন, "ভারতে যেসব আইপিও এসেছে গত দশ বছরে তার মধ্যে চল্লিশ শতাংশের শেয়ার ভ্যালু ফেসভ্যালুর নিচে নেমে গেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে যেসব কোম্পানি বাজারে এসেছে তার মধ্যে মাত্র সাত- আট শতাংশের শেয়ার দর কমেছে"। অন্যদিকে, পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেছেন,"যেসব আইপিও আসছে তার অনেক গুলোর দাম ফেসভ্যালুর নিচে নেমে গেছে। সঠিক ভাবে যাচাই বাছাই করে তালিকাভুক্ত না করে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। একটি কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। সংশ্লিষ্ট কোম্পানি নিজের কাগজপত্র তৈরি করে। সেগুলো যাচাই বাছাই করে অডিট ফার্ম, ইস্যু ম্যানেজার বা মার্চেন্ট ব্যাংক, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ ।তারপরসিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন সেসব কাগজপত্র দেখে। তারপর অনুমোদন দেয়। এসব যাচাই বাছাইয়ের পরও কিভাবে দুর্বল কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়?

শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় রাজধানীর গুলশানের হোটেল ওয়েষ্টিনে 'বাংলাদেশের পুঁজিবাজার: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট এই দুই ব্যক্তি কোম্পানির তালিকাভুক্তি নিয়ে এসব কথা বলেন।ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামসিএমজেএফ ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন বিএমবিএ যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে।
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যানপ্রফেসর ড. খায়রুল হোসেন আরও বলেন,আমাদের শেয়ার মার্কেট সঠিকভাবে উন্নয়ন হচ্ছে না। ভালো কোম্পানিগুলো বাজারে আসছে না। নতুন নতুন কোম্পানিগুলোর আসার মতো সুযোগও তৈরি হচ্ছে না। যেখানে ভালো কোম্পানিগুলোকে ঋণ দিতে ব্যাংক মুখিয়ে আছে, সেখানে তারা ক্যাপিটাল মার্কেটে ভালো সুযোগ না পেলে তারা কেন আসবে? সুতরাং যতদিন ব্যাংকের লং টার্ম লোন দেয়ার তারল্য থাকবে। ততদিন ভালো কোম্পানি এখানে আসতে আগ্রহ দেখাবে না বলে মন্তব্য করেন ।

খাইরুল হোসেন বলেন, পৃথিবীর সব দেশের ক্যাপিটাল মার্কেটেই ভোলাটিলিটি আছে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো এতটা নেই কোথাও। আমাদের ইনভেস্টমেন্ট কম, মিউচুয়াল ফান্ডর আকার ছোট। আমাদের দেশে আইনের ঘাটতি নেই। আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটে বড় কোম্পানি না আসার ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হচ্ছে অ্যাওয়ারনেস। এছাড়া ব্যাংকগুলো লং টার্ম লোন দেয়ায় তারা নিরুৎসাহিত হয়।

তিনি বলেন, আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়াতেও প্রচুর নন-পার্ফমেন্স কোম্পানি রয়েছে। এক্ষেত্রে আইপিও অনুমোদন দেয়ার সময়ের ফাইন্যান্সিয়াল এনালাইসিসের কোন ব্যর্থতাকে বুঝায় না, বরং আইপিওতে আসার পরও অনেক কোম্পানি খারাপ হয়।

বিএসইসির সাবেক এই চেয়ারম্যান আরো বলেন, ভালো কোম্পানি না আসায় বিনিয়োগকারীরা ইনভেস্টমেন্টের সুযোগ পাচ্ছে না। ইনসেন্টিভ দিয়ে ভালো কোম্পানি আনার কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। একইসঙ্গে করপোরেট কর হারের ব্যবধান বাড়ালেও কোম্পানিগুলো আসতে আগ্রহ দেখাবে না। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ৫-১০ শতাংশের বেশি কোম্পানি ফেসভ্যালুর নিচে শেয়ার দর কিন্তু ভারতেও প্রায় ৪৫ শতাংশ শেয়ার ফেসভেলুর নিচে। সেই দিক থেকে আমাদের মার্কেট অনেকটাই ভালো।

অন্যদিকে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন,দুর্বল কোম্পানিগুলো নিয়ে চালানো হচ্ছে। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবিসি) লিমিটেডের ট্যাক্স তথ্য যেমন সবাই জানতে পারে, তেমনি যদি অন্যান্য বহুজাতিক কোম্পানির তথ্যও সবাই জানতে পারতো তাহলে দেশের অর্থনীতির জন্যও ভালো হতো। কিন্তু লিস্টিং না হওয়ার কারণে অন্য বহুজাতিকদের তথ্য আমাদের অজানা। ইনসেন্টিভের মাধ্যমে হলে তাদের মার্কেটে আনতে হবে। তাদের অন্তত ১০ শতাংশ এখানে লিস্টিংয়ের বাধ্যবাধকতা করা উচিত বলে মন্তব্য করেন অর্থনীতিবিদঅধ্যাপক আবু আহমেদ।

ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) সভাপতি জিয়াউর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান। মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএমবিএ'র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মনিরুজ্জামান সিএফএ।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলের চেয়ারম্যান, সাবেক মুখ্যসচিব নজিবুর রহমান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মো: জাহিদ হাসান, বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ আল-আমিন, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও, সিএফএ সোসাইটির প্রেসিডেন্ট শাহীন ইকবাল, ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্ট বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) এর প্রেসিডেন্ট মামুনুর রশীদ এফসিএমএ, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ বাংলাদেশ (আইসিএসবি) এর প্রেসিডেন্ট মোজাফফর আহমেদ এফসিএমএ এফসিএস, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট বাংলাদেশ (আইসিএবি) এর কাউন্সিল সদস্য গোপাল চন্দ্র ঘোষ।

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক/মাহা/১৯ সেপ্টেম্বর/২০২২

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর