thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৬ জমাদিউল আউয়াল 1446

ঝড়ে গাছ চাপায় সাতজনের মৃত্যু

২০২২ অক্টোবর ২৫ ১০:৩৪:২৭
ঝড়ে গাছ চাপায় সাতজনের মৃত্যু

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: সোমবার মধ্যরাতে ভোলার কাছ দিয়ে উপকূল অতিক্রম করে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এখন দুর্বল হয়ে একটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এখন সেটি নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে।

ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানাচ্ছে, আগামী ছয় ঘণ্টার মধ্যে সেটি একটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হতে পারে। নোয়াখালীর ওপর দিয়ে সেটি সিলেট দিয়ে ভারতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

সোমবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের ভোলার উপকূল দিয়ে স্থলভাগে উঠে আসে। সেই সময় ঝড়টির গতি ছিল ঘণ্টায় ৫৬ কিলোমিটার।

সমুদ্র বন্দরগুলোতে বিপদসংকেত কমিয়ে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

ঝড়ের প্রভাবে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে বলছে আবহাওয়া দপ্তর। সেই সঙ্গে সাগর উত্তাল থাকবে।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় ১৩টি জেলায় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বেশি বলে জানিয়েছিল বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।

ঝড়ে গাছ চাপায় সাতজনের মৃত্যু

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা জানাতে পারেনি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

তবে বাংলাদেশের স্থানীয় সাংবাদিকদের তথ্য গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, ঝড়ে বিভিন্ন জেলায় গাছ চাপা পড়ে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে।

এর মধ্যে কুমিল্লায় ঘরের ওপর গাছ পড়ে একটি পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। গাছ চাপা পড়ে ভোলায় দুইজন এবং নড়াইলে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

বরগুনায় ঘরের চালে গাছ পড়ে একজন নারীর মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে জলোচ্ছ্বাসের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে সেটার ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এখনো জানা যায়নি।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংএর কারণে দক্ষিণের জেলাগুলোর অনেক এলাকা সোমবার সন্ধ্যা থেকেই বিদ্যুৎ বিহীন হয়ে পড়েছে।

বরগুনার আমতলীর বাসিন্দা লায়লা রেহানা জানিয়েছেন, সোমবার বিকাল থেকেই সেখানে বিদ্যুৎ চলে গেছে। এখনো স্বাভাবিক হয়নি।

সোমবার সারাদিনের বৃষ্টিতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের অনেক এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা তৈরি হয়।

গাছ পড়ে রাতে ঢাকার অনেক সড়ক, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-বরিশাল সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে মঙ্গলবার সকাল নাগাদ সড়কে আবার স্বাভাবিক যানচলাচল শুরু হয়।

নৌযান ও তিন বিমান বন্দরে চলাচল বন্ধ

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে সোমবার থেকেই বাংলাদেশের দক্ষিণের জেলাগুলোয় নৌ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সেটি চালু হয়নি।

সোমবার দুপুর থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বরিশাল বিমানবন্দরে কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সেটি বন্ধ থাকবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।


ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ করা না হলেও ঝড়ের কারণে সোমবার কয়েকটি বিমান ঢাকার পরিবর্তে সিলেটে জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হয়েছে।

সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরের পরিচালক মোঃ হাফিজ আহমেদ জানিয়েছেন, মোট আটটি বিমান ঢাকার পরিবর্তে সিলেটে অবতরণ করতে বাধ্য হয়। এর মধ্যে সাতটি আন্তর্জাতিক আর একটি অভ্যন্তরীণ বিমান সংস্থা রয়েছে।

মঙ্গলবার বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রনালয়।


কীভাবে নামকরণ হয় ঘূর্ণিঝড়ের


বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা আঞ্চলিক কমিটি একেকটি ঝড়ের নামকরণ করে।

যেমন ভারত মহাসাগরের ঝড়গুলোর নামকরণ করে এই সংস্থার আটটি দেশ।

দেশগুলো হচ্ছে: বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মায়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং ওমান, যাদের প্যানেলকে বলা হয় WMO/ESCAP।

একসময় ঝড়গুলোকে নানা নম্বর দিয়ে শনাক্ত করা হতো। কিন্তু সেসব নম্বর সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য হতো।

ফলে সেগুলোর পূর্বাভাস দেয়া, মানুষ বা নৌযানগুলোকে সতর্ক করাও কঠিন মনে হতো।

এ কারণে ২০০৪ সাল থেকে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের উপকূলবর্তী দেশগুলোয় ঝড়ের নামকরণ শুরু হয়।

সে সময় আটটি দেশ মিলে মোট ৬৪টি নাম প্রস্তাব করে। সেই তালিকায় থাকা একটি নামই সিত্রাং।

এর আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বা অস্ট্রেলিয়া অঞ্চলে ঝড়ের নামকরণ করা হতো।

ভারত মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড়কে সাইক্লোন বলা হলেও আটলান্টিক মহাসাগরীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় হারিকেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বলা হয় টাইফুন।

কিভাবে ঝড় তৈরি হয়?

সমুদ্রের উষ্ণ পানির কারণে বায়ু উত্তপ্ত হঠাৎ করে এসব ঝড়ের তৈরি হয়।

তখন তুলনামূলক উষ্ণ বাতাস হালকা হয়ে যাওয়ার কারণে ওপরে উঠে যায়, আর ওপরের বাসা ঠাণ্ডা বাতাস নীচে নেমে আসে। এসে নীচের বায়ুমণ্ডলের বায়ুর চাপ কমে যায়। তখন আশেপাশের এলাকার বাতাসে তারতম্য তৈরি হয়।

সেখানকার বাতাসের চাপ সমান করতে আশেপাশের এলাকা থেকে প্রবল বেগে বাতাস ছুটে আসে। আর এ কারণেই তৈরি হয় ঘূর্ণিঝড়ের।

এর ফলে প্রবল বাতাস ও স্রোতের তৈরি হয়। যখন এসব এই বাতাসের ভেসে ঝড়টি ভূমিতে চলে আসে, তখন বন্যা, ভূমিধ্বস বা জলোচ্ছ্বাসের তৈরি করে।

সাইক্লোন, হারিকেন আর টাইফুনের মধ্যে পার্থক্য কী?

এর সবগুলো ঝড়। তবে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এগুলোকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়।

যেমন আটলান্টিক, ক্যারিবিয়ান সাগর, মধ্য ও উত্তরপূর্ব মহাসাগরে এসব ঝড়ের নাম হারিকেন

উত্তর পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে সেই ঝড়ের নাম টাইফুন

বঙ্গোপসাগর, আরব সাগরে এসব ঝড়কে ডাকা হয় সাইক্লোন নামে।

যদি কোন নিম্নচাপ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার গতিবেগ অর্জন করে, তখন সেটি আঞ্চলিক ঝড় বলে মনে করা হয় এবং তখন সেটির নাম দেয়া হয়। কিন্তু সেটি যদি ঘণ্টায় ১১৯ কিলোমিটার (৭৪ মাইল) গতিবেগ অর্জন করে, তখন সেটি হারিকেন, টাইফুন বা সাইক্লোন বলে ডাকা হয়।

এগুলোর পাঁচটি মাত্রা হয়েছে। ঘণ্টায় ২৪৯ কিলোমিটার গতিবেগ অর্জন করলে সেটির সর্বোচ্চ ৫ মাত্রার ঝড় বলে মনে করা হয়। তবে অস্ট্রেলিয়া ঝড়ের মাত্রা নির্ধারণে ভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করে। দ্য রিপোর্ট/ টিআইএম/

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর