thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউল আউয়াল 1446

পদত্যাগপত্র নিয়ে দুই মন্ত্রীর পরস্পর বিরোধী বক্তব্য

২০১৩ নভেম্বর ১২ ১৯:৩৮:৩৪
পদত্যাগপত্র নিয়ে দুই মন্ত্রীর পরস্পর বিরোধী বক্তব্য

দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক : নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে মন্ত্রিসভার সদস্যদের পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে দুই মন্ত্রী বিপরীতধর্মী বক্তব্য দিয়েছেন।

সংবিধান অনুযায়ী এটি পদত্যাগপত্র নয়, একটি আনুষ্ঠানিকতামাত্র বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী শফিক আহমেদ। অপরদিকে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু জানিয়েছেন সংবিধান মেনেই পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।

সচিবালয়ে মঙ্গলবার দুটি আলাদা অনুষ্ঠানে দুই মন্ত্রী এ বক্তব্য দেন।

এদিন দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, মন্ত্রিসভার সদস্যরা রাষ্ট্রপতি বরাবরে পদত্যাগের জন্য পত্র দেননি। এটি সংবিধান অনুযায়ী পদত্যাগপত্র নয়, একটি আনুষ্ঠানিকতামাত্র। এটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা থাকবে। তবে পদত্যাগের জন্য এটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর আগে সংশ্লিষ্টদের মৌখিক অনুমতি নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাংবাদিকদের বলেন, মন্ত্রিসভার সদস্যরা সংবিধান মেনেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। তবে সেটা রাষ্ট্রপতির কাছে যতক্ষণ না উপস্থাপন হবে এবং তিনি যতক্ষণ পর্যন্ত না সই করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত মন্ত্রীরা দাফতরিক ও নির্বাহী দায়িত্ব পালন করবেন।

এটি নিয়ে অহেতুক বিতর্ক না করে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা যদি মনে করেন তাহলে আদালতের মাধ্যমে এর নিষ্পত্তি করা যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, সাংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যদি কোন মন্ত্রী রাষ্ট্রপতির নিকট পেশের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগপত্র দেন সেক্ষেত্রে তার পদ শূন্য হবে। কিন্তু বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যরা যে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন তা রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করার জন্য দেওয়া হয়নি। তাই সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদের ১(ক) এর বিধানটি আকৃষ্ট হচ্ছে না। তাই মন্ত্রিসভার সদস্যরা মন্ত্রী হিসেবেই আছেন, তাদের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনে কোন বাধা নেই।

মন্ত্রীর নিজের পদত্যাগপত্রের বিষয়ে এ ব্যাখ্যা কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব মন্ত্রীদের একই রকম। পদত্যাগপত্রের এ বিষয়টি স্পষ্ট ও এটা নিয়ে কোন সংশয় নেই বলেও দাবি করেন শফিক আহমেদ।

রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়ার জন্য দেওয়া না হয় তবে তো এটা পদত্যাগপত্র নয়। তবে কি পদত্যাগের জন্য দ্বিতীয় দফা আবারো পদত্যাগপত্র দিতে হবে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, পত্রটি রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিলেই এটি কার্যকর হবে।রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর আগে মন্ত্রীদের আবারো অনুরোধ জানাতে হবে। সে অনুমতি মৌখিক হলেই হবে।

তবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেওয়া মন্ত্রিসভার সদস্যদের দেওয়া পত্রগুলোর কি নাম হবে। এ বিষয়ে শফিক আহমেদ বলেন, এটি আনুষ্ঠানিকতামাত্র। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী কোন মন্ত্রী এই পত্র দেননি বলেও জানান তিনি।

সোমবারই বর্তমান সরকার কাঠামোর সর্বশেষ মন্ত্রিসভা বৈঠক ছিলো কিনা- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যেটুকু জানি প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনে আরো বসবেন। যে কোন সময় আবার মন্ত্রিসভা বৈঠক ডাকতে পারেন তিনি।

সংবিধানের বাইরে গিয়ে এভাবে পদত্যাগপত্র দেওয়ার মাধ্যমে মন্ত্রিসভার সদস্যরা জাতির সঙ্গে প্রতারণা করছেন কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, না প্রতারণা হয়নি। এতে প্রতারণার কি আছে!

অন্যদিকে হাসানুল হক ইনু বলেন, দুই ধরনের পদত্যাগপত্র রয়েছে। যদি কোন মন্ত্রী স্বেচ্ছায় মন্ত্রিপরিষদ থেকে সরে যেতে চান তাহলে পদত্যাগপত্র দেবেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রিপরিষদের পুনর্গঠন করার জন্য বা কাউকে বাদ দেওয়ার জন্য পদত্যাগের আহ্বান জানাতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে কেউ পদত্যাগপত্র জমা দিলে সংবিধানের বিধান অনুযায়ী তা রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করার পরই পদ শূন্য হবে।

নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের জন্য গত সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। তবে কয়েকজন আগেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন। এর আগে ৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার সকল সদস্যকে এক সপ্তাহের মধ্যে পদত্যাগের নির্দেশ দেন। তখন থেকেই বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়- একপক্ষ বলছেন বিষয়টি সংবিধানের পরিপন্থী, পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর মন্ত্রিসভার সদস্যদের পদ শূন্য হয়ে গেছে। তাদের আর কাজ করার অধিকার নেই। আরেকপক্ষ বলছেন সংবিধান মেনেই এটি করা হচ্ছে।

সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী এর আগে তাদের বক্তব্যে জানিয়েছেন- পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া সদস্যদের মধ্যে যারা সর্বদলীয় সরকারে থাকবেন তাদের আর নতুন করে শপথ নিতে হবে না। যারা থাকবেন না তাদের পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে চলে যাবে। সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রিসভায় যারা নতুনভাবে আসবেন তারা শপথ নেবেন। মন্ত্রিসভার সকল সদস্যের পদত্যাগের পর পদত্যাগ নিয়ে বিতর্ক আরো জোরালো হয়।

(দিরিপোর্ট২৪/আরএমএম/এসবি/নভেম্বর ১২, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর