thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ৩ মে 24, ২০ বৈশাখ ১৪৩১,  ২৪ শাওয়াল 1445

দেড় বছরেও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের চালের মূল্য বৃদ্বির কারসাজি বন্ধ হয়নি

২০২৩ আগস্ট ১৯ ২০:০২:৫৯
দেড় বছরেও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের চালের মূল্য বৃদ্বির কারসাজি বন্ধ হয়নি

আমির হামজা, দ্য রিপোর্ট: গত ১৮ মাসেও চালের বাজারের বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের চালের মূল্য বৃদ্বির কারসাজি বন্ধ হয়নি। যদিও ইতোমধ্যে চালের মূল্য বৃদ্বির নিয়ে কারসজি বন্ধ করতে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন বড় বড় ২০ টি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানসহ আরো অন্যান্য চাল বিক্রির করা কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন সূত্র এ বিষয়টি জানা যায়।

কমিশন বলছেন, গত ২০২২ সালের মার্চ মাসে থেকে এখন পর্ষন্ত চালের বাজারের কারসাজি কমে আসেনি। কারণ গত বছর মার্চ মাসে চালে বাজারে কারসাজি বন্ধ করার জন্য কমিশন উপরে দেওয়া মামলা গুলো করেছিল। প্রতিযোগিতা কমিশনের ৬ষ্ঠ সভায় আরো বলা হয়েছে। প্যাকেটজাত চালের দাম খোলা চালের দাম থেকে প্রতি কেজি ১৮ থেকে ২০ টাকা বেশি রাখা হচ্ছে।

চলতি মাসের ৯ তারিখে প্রতিযোগিতা কমিশনের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চালের বাজারে একই রকম কারসাজি হচ্ছে। গত দেড় বছর ধরে প্রতিযোগিতা কমিশনের টিমটি জানিয়েছে চালের বাজারে উচ্চ মূল্য অবস্থা বিরাজ রয়েছে। গত ১৮ মাস আগে ২০২২ সালের মার্চ মাসে চালের বাজারে কারসাজির কারণে ২০ টি বড় কর্পোরেট কোম্পানিসহ ঢাকার বাইরে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করেন কমিশন। প্রতিযোগিতা কমিশন আরো দুই পত্রিকায় চালের বাজার সংক্রান্ত অভিযোগটির প্রেক্ষিতে প্রতিযোগিতা কমিশনের অনুসন্ধান টিম চলতি মাসের ৯ তারিখে চালের বাজারে গিয়ে একই রকম অবস্থা দেখতে পায়। অনুসন্ধান দলের প্রতিবেদন যাচাইক্রমে, চালের বাজার সংক্রান্ত অভিযোগটি প্রাথমিক ভাবে সঠিক বলে প্রতীয়মান হয় এবং অনুরুপ বিষয়ে কমিশনে ২০ টি মামলা চলমান থাকায় বিষয়টি আমলে নিয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলে মত দেওয়া হয়েছে। প্রতিযোগিতা কমিশনের বোর্ড সভায় সিব্দান্ত হয়েছে কোম্পানিগুলো চালের মূল্য বৃদ্বির বিষয়ে কমিশনে বর্তমানে ২০টি মামলা বিচারাধীন থাকায় আলোচ্য প্রতিবেদনের বিভিন্ন বিশ্লেষণ ও মতামত প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় সেগুলোকে রেফারেন্স হিসেবে কমিশন গ্রহণ করবে ।

প্রতিযোগিতা কমিশনের মামলা দেওয়া কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে -বসুন্ধরা ফুড এ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক,স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের চেয়ারম্যান, এসিআইয়ের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), ব্র্যাক সিড অ্যান্ড অ্যাগ্রো এন্টারপ্রাইজের চেয়ারম্যান অথবা এমডি, প্রাণ ফুডসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অথবা এমডি, সিটি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের এমডির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে কুষ্টিয়ার রশিদ অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টের স্বত্বাধিকারী মো. আবদুর রশিদ, দিনাজপুরের জহুরা অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী মো. আবদুল হান্নান, নওগাঁর বেলকন গ্রুপের স্বত্বাধিকারী মো. বেলাল হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের এরফান গ্রুপের স্বত্বাধিকারী মো. এরফান আলী, বগুড়ার কিবরিয়া অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক মো. গোলাম কিবরিয়া, নওগাঁর মফিজ উদ্দীন অটোমেটিক রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী তৌফিকুল ইসলাম, বগুড়ার আলাল অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টের আলাল আহমেদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নুরজাহান অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্বাধিকারী মো. জহিরুল ইসলাম, বগুড়ার খান অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী পুটু মিয়া, কুষ্টিয়ার মেসার্স দাদা রাইচ মিলের মো. আরশাদ আলী, নওগাঁর মজুমদার অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী ব্রজেন মজুমদার, নারায়ণগঞ্জের সিটি অটো রাইস অ্যান্ড ডাল মিলস এবং নওগাঁর ম্যাবকো হাইটেক রাইস ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান অথবা এমডির।

এদিকে বসুন্ধরা ফুড এ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামলা অভিযোগে বলা হয়েছে , একটি অনলাইন পত্রিকায় প্যাকেটজাত চালের দাম বাড়ায় কারা শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যেখানে বলা হয়েছে বাজারে খোলা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮- ৬৫ টাকায়, একই চাল প্যাকেটজাত করে বিক্রি করা হচ্ছে ৭৫-৭৮ টাকায়। এছাড়াও আরেকটি দৈনিক পত্রিকায় একই মানের চাল প্যাকেটজাত করে নেয়া হচ্ছে বাড়তি দাম। চালের (প্যাকেটজাত) বাজারে কৃত্রিম সংকট নিরুপণ বিষয়ক অভিযোগটি প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ এর ১৫ এর উপ-ধারা (২) এর দফা (ক) এর উপ দফা (অ) এবং দফা (খ) লঙ্ঘন করেছে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়। দেশে চালের বার্ষিক চাহিদা ৩ কোটি ৫৬ লাখ টন। চাহিদা পূরণে স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের পাশাপাশি সামান্য কিছু আমদানি করতে হয়। সম্প্রতি বিশ্বের দ্বিতীয় উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারক দেশ ভারত হঠাৎ করেই চাল রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এতে দেশটির রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার প্রভাব এশিয়ার অন্যান্য দেশে পড়তে শুরু করেছে। দেশের চালের বাজারেও এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। তবে দেশে এবার ধানের বাম্পার ফলন ও পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে এবার চাহিদার থেকে ২৭ লাখ টন বেশি চাল বেশি রয়েছে। ফলে জুলাই মাসে দেওয়া ভারতের চাল রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার প্রভাব দেশে চালের বাজারে পড়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। কিন্তু ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, নির্বাচনী বছর ও সরকারের শেষ সময়ে তারা ভর্তুকি দিয়ে হলেও দেশের চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে চাইবে। যার ফলে দেশের প্রধান খাদ্য উপকরণ চালের বাজার অস্থির হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী, গতকাল শনিবার ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি সরুচাল বিক্রি হয়েছে ৬২ থেকে ৭২ টাকায়। মাঝারি মানের চাল (পাইজাম) ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় এবং মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। যদিও বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৭৪-৭৭, বিআর-আটাশ ৩৩-৪৮ ও নাজির শাইল ৬৬ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।দেশে চালের বার্ষিক চাহিদা ৩ কোটি ৫৬ লাখ টন। চাহিদা পূরণে স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের পাশাপাশি সামান্য কিছু আমদানি করতে হয়।

(দ্য রিপোর্ট/ মাহা /১৯ অগাস্ট/২০২৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

অর্থ ও বাণিজ্য এর সর্বশেষ খবর

অর্থ ও বাণিজ্য - এর সব খবর