thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউল আউয়াল 1446

দুই ‘ছকে’ নির্বাচনের পরিকল্পনা ক্ষমতাসীনদের

২০১৩ নভেম্বর ১২ ২২:১২:৩৩

আমানউল্লাহ আমান, দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক: দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দুই ‘ছকে’ নির্বাচন করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে ক্ষমতাসীনরা।

প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট নির্বাচনে অংশ নিলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের জোট হিসেবে মহাঐক্য জোটে নির্বাচনে অংশ নেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

অন্যদিকে যদি ১৮ দলীয় জোট নির্বাচনে অংশ না নেয় তবে মহাজোটের শরীক দলগুলো এককভাবে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে। ১৪ দলীয় জোটের শীর্ষ স্থানীয় একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সোমবার আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল নেতারা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, দেশের শান্তি এবং গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে হলে নির্বাচনের বিকল্প নেই। জাতীয় পাটি (জেপি) সব সময় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বলেই আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন, এতে কে আসল আর কে আসল না, তাতে কিছু যায় আসে না।

প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও আপনার দল নির্বাচনে অংশ নিবে কি না? সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “নির্বাচন গণতান্ত্রিক অধিকার। এখানে উনি নির্বাচন করলে আমি করবো আর উনি না করলে আমি করবো না । এতোটা অসহায় আমি নই। নির্বাচনে যারা আসতে চাইবেন তারা আসবেন। আর যারা আসতে চাইবেন না তারা আসবেন না।”

জোট নেতারা মনে করেন, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা কোন দলের অংশগ্রহণের উপর নির্ভর করে না। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করে ভোটারদের ভোট প্রদাণের উপর। আওয়ামী লীগের ৪০ শতাংশ ভোট রয়েছে এবং জোটের অন্যান্য দলের রয়েছে ১৫ শতাংশ। জোট হিসেবে সব দল মিলিয়ে এই জোটের মোট ৬৫ শতাংশ ভোট রয়েছে। এই ৬৫ শতাংশ ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া ও ভোট প্রদাণ নিশ্চিত করতে হবে। নিবন্ধিত ৪১ দলের মধ্যে অর্ধেকের বেশি দলের অংশগ্রহণ করাতে পারলে এবং ৬৫ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতিতে ভোটগ্রহণ হলে সেই নির্বাচন দেশে-বিদেশে প্রশ্ন বিদ্ধ হবে না। সেক্ষেত্রে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আমরা উভয় ঐক্যমত পোষণ করছি সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখতে নির্বাচনের বিকল্প নেই। কে নির্বাচনে আসলো আর না আসলো এটা নিয়ে চিন্তা করা যাবে না। যেভাবে হোক নিবাচন করা হবে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচনের কাজ শুরু করা হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার ভোট দিলেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। কোন দলের অংশগ্রহণের উপর নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করে না।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন দিরিপোর্ট২৪কে বলেন, আওয়ামী লীগের ৪০ শতাংশ ভোটার রয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কারণে অনেকে অনেক সুযোগ-সুবিধার প্রত্যাশা করেছিলো। যারা সুযোগ-সুবিধা পাননি তারা দলের উপর অনেকটাই ক্ষুব্ধ। আমাদের কাজ হলো সব অভিমান ভেঙ্গে আওয়ামী লীগের ৪০ শতাংশ ভোটারকে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসা।

এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মঙ্গলবারও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সঙ্গে বৈঠক করেন ১৪ দল নেতারা। বৈঠক শেষে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডরী আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহনের ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সর্বদলীয় সরকারেই অধীনেই তরিকত ফেডারেশন নির্বাচনে অংশ নেবে।”

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের স্বার্থে গণতন্ত্রের স্বার্থে সর্বদলীয় সরকারের অধিনে আমরা নির্বাচনে অংশ নেব। বিরোধী দলের নির্বাচন বান-চালের আন্দোলন সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করা হবে।

তিনি বলেন, দেশ ও জাতি আজ দুইভাবে বিভক্ত। এক স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি অন্যটি স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি। আমাদের আন্দোলন ততদিন চলবে যতদিন জঙ্গী-হেফাজত-জামায়াত-শিবিরের তা-ব-নাশকতা থেকে দেশকে বের করে আনতে না পারবো।

অন্যদিকে রবিবার থেকে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ মনোনয়নপত্র বিক্রির কাজ শুরু করেছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ১৪৭৬টি, ওয়ার্কাস পাটি ৩৯টি মনোনয় দিয়েছে। জাসদ ৪০টি মনোনয়নপত্র বিক্রি করেছে।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মল্লিক দিরিপোর্ট২৪কে বলেন, “ইতিমধ্যে আমাদের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ শুরু করেছে। মহাজোটগতভাবে নির্বাচনের জন্য আমরা মনোনয়ন দিচ্ছি। তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।”

জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নূরুল আম্বিয়া দিরিপোর্ট২৪কে বলেন, “ সারাদেশ থেকে আমাদের প্রার্থীরা মনোনয়পত্র কেনা শুরু করেছে। কে নির্বাচনে আসলো না আসলো সেটা জানার বিষয় নয়। ১৪ দলীয় জোট আন্দোলন-নির্বাচনের জোট। আমরা জোটগতভাবে নির্বাচন করবো।

গণতন্ত্রী পার্টি সোমবার থেকে মনোনয়ন পত্র বিতরণ শুরু করে। দলটির সাধারণ সম্পাদক নুরুর রহমান সেলিম দিরিপোর্ট২৪কে বলেন, “আমাদের দলের সংসদীয় বোর্ড সারা দেশে আমাদের প্রার্থীদের মনোনয়ন দেবেন। তারপর জোট নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব আমরা এককভাবে নির্বাচন করবো না জোটগতভাবে নির্বাচন করবো।

সাম্যবাদী দলের মহানগরের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দিরিপোর্ট২৪কে বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিএনপি নির্বাচনে না আসলে আমরা এককভাবে ২০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেব। যদি বিএনপি নির্বাচনে আসলে আমরা জোটগতভাবে নির্বাচন করবো।

তিনি আরো জানান, “বিএনপি নির্বাচনে আসলে জোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগ জোটের শরীক দলগুলোকে সঠিক মূল্যায়ন করবে। সেক্ষেত্রে সাম্যবাদী দলকে ৭টি আসন, জাসদকে ৭ টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ৭টি ও গণতন্ত্রী পার্টিকে ৫ আসন ছেড়ে দেবেন জোটের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। আর যদি বিএনপি নির্বাচনে না আসে তবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত জোটের এই চারটি দল ২০০-২৫০ আসনে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে।

(দিরিপোর্ট২৪/এইউএ/এসবি/নভেম্বর ১২, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর