thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল 24, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ২১ শাওয়াল 1445

কী কাজ ডিএসই’র বেআইনি তিন উপ-কমিটির?    

২০২৪ জানুয়ারি ২৫ ১৬:৪০:৪৮
কী কাজ ডিএসই’র বেআইনি তিন উপ-কমিটির?
 
 

তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে ডিমিউচুলাইজড (মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনাকে পৃথকীকরণ) করার এক দশক পরও পুঁজিবাজারে ইতিবাচক কোনো প্রভাব পড়েনি। বরং এটি তার নিজস্বতা হারিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অঙ্গ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

পুঁজিবাজারে স্বাভাবিক গতি ধরে রাখতে কোনো ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়নি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। ২০১০ সালের ধসের পর ডিমিউচুলাইজেশনকে বাজারের গতি আনতে ‘প্রধান ওষুধ’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।

২০১৩ সালে ডিএসইকে ডিমিউচুলাইজড প্রতিষ্ঠান হিসেবে সংস্কার করা হয়। মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনাকে পৃথক করতে পরিচালনা পরিষদের সংখ্যায় পরিবর্তন আনা হয়। আগে ডিএসই‘র ব্রোকারদের মধ্য থেকে ১২ জন পরিচালক ছিলেন। বিপরীতে ১২ জন পরিচালক ছিলেন মনোনিত বা স্বতন্ত্র। এই ১২ জন ছিলেন দেশের শীর্ষ পর্যায়ের অর্থনীতিবিদ বা পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ। অতীতে ভারসাম্যময় এই পরিচালনা পরিষদের সব ধরনের মতামত গ্রহণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। তবে নির্বাহী কার্যক্রমে ডিএসই’র কয়েকজন পরিচালকের হস্তক্ষেপের কারণে বিতর্কিত হয়ে পড়ে ডিএসই’র সামগ্রিক কার্যক্রম।

ডিমিউচুলাইজড পরবর্তী সময়ে ডিএসইতে সরকারের পক্ষ থেকে সাত জন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। বিপরীতে ডিএসই’র ট্রেক হোল্ডারদের মধ্য থেকে চার জন পরিচালক নির্বাচিত হন। আর চীনের সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে নিযুক্ত হন একজন পরিচালক। ফলে এই পরিচালনা পরিষদের ট্রেক হোল্ডারদের ভূমিকা গৌণ হয়ে পড়ে। নিরক্ঙুশ হয়ে যায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ক্ষমতা। এই নিয়ন্ত্রণ যতটা না বাজারের স্বার্থে, তার চেয়ে বেশি প্রয়োগ হচ্ছে ব্যক্তির পছন্দ-অপছন্দের ওপর।

ডিমিউচুলাইজড আইন মেনে এই পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের মধ্য থেকে পাঁচটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূতভাবে আবার তিনটি উপ-কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

ডিমিউচুলাইজড আইন ২০১৩ অনুযায়ী যেসব কমিটি করার বিধান রয়েছে সেগুলো হলো:

১. মনোনয়ন ও পারিতোষিক কমিটি, ২. রেগুলেটরি এফেয়ার্স কমিটি, ৩.নিরীক্ষা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটি, ৪. আপিল কমিটি ও ৫. বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটি।

ডিএসই’র ওয়েব সাইটে এই পাঁচটি কমিটির সদস্যের নাম ও কার কোন দায়িত্ব সে তথ্য দেওয়া হয়েছে। তবে বেআইনি তিনটি উপকিমিটির কোনো তথ্য ওয়েবসাইটে নেই। বেআইনি ভাবে যে উপ-কমিটি তিনটি হলো: ১ .আইপিও রিভিউ কমিটি ২.আইটি এডভাইজরি কমিটি ও ৩. ডিএসই টাওয়ার বিল্ডিং কমিটি।

নাম স্বর্বস্ব এই তিন উপ-কমিটি মাসে তিন থেকে চারবার সভা করে উপিস্থিতির ফি বাবদ মোটা অংকের টাকা আয় করছে। যা ডিএসই’র খরচের বোঝা বাড়িয়েই চলেছে। জানা গেছে, এই তিনটি কমিটির মোট সদস্য ১২ জন । প্রতি সভায় তারা ১০,০০০/-(দশ হাজার ) টাকা করে ফি পেয়ে থাকেন। তাতে প্রতি মাসেই এই উপ-কমিটির ফি ও আপ্যায়ন বাবদ এক লাখ বা তারও বেশি টাকা ব্যয় হয়। ডিএসই’র একজন ঊর্ধ্বতন নির্বাহী কর্মকর্তা দ্য রিপোর্ট ২৪ ডটকমকে আক্ষেপ করে জানান, বছরের পর বছর ধরে বেআইনি এই উপ-কমিটির জন্য ব্যয় বহন করতে হচ্ছে। এ নিয়ে পরিচালনা পরিষদের সদস্যসহ সাধারণ ব্রোকার বা ট্রেক হোল্ডারদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তুষ্টি। ওই কর্মকর্তা জানান, এসব উপ-কমিটির কোনো কাজ নেই। তাদের মিটিংয়ের কোনো কার্যকরিতা প্রমাণিত হয় না। মাসে মাসে ঘন ঘন মিটিং করে মোটা অংকের ফি নিচ্ছে। তারা মূলত ‘চ্যারিটি মিটিং’ করতে আসেন।

এ বিষয়ে ডিএসইর সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন দ্য রিপোর্ট২৪ ডটকমকে বলেন , তিনটি উপ-কমিটির কী কাজ বুঝি না। সম্পূর্ণ বেআইনি এই মাথা ভারি উপ-কমিটি মাসের পর মাস মিটিং করে শুধু পারিতোষিক গ্রহণ করছে। ডিএসই’র ম্যানেজমেন্ট কমিটির প্রধান ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ টিএম তারিকুজ্জানের কাছে তিন উপ-কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ডিমিউচুলাইজড আইন ২০১৩ এর মধ্যে এই উপ-কমিটির কথা বলা নেই। এর বাইরে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

দ্য রিপোর্ট/ টিআইএম/২৫ জানুয়ারী/ দুইহাজার চব্বিশ)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর