thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১,  ৩ জমাদিউল আউয়াল 1446

চীনা প্রতিষ্ঠানের সাথে ডিএসইর চুক্তির পাঁচ বছরে সুফল কতটুকু?

২০২৪ জানুয়ারি ২৭ ১৫:১৫:৫৫
চীনা প্রতিষ্ঠানের সাথে ডিএসইর চুক্তির পাঁচ বছরে সুফল কতটুকু?

মাহি হাসান, দ্য রিপোর্ট: ঢাকা স্টক একচেঞ্জের সাথে চীনের সেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের চুক্তির পাঁচ বছর পার হয়েছে। কিন্তু এই পাঁচ বছরে ডিএসই উন্নয়নে তেমন কোন পদক্ষেপ চোখে পড়েনি বলে মনে করেন পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা।পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেনচীনের সাথে করা এই চুক্তির কোন ইতিবাচক প্রভাব দেশের পুঁজিবাজারে পড়েনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপকআবু আহমেদ মনে করেন, চীন দেশের পুঁজিবাজারে উন্নয়নে কাজ করবে এটা ভাবা পুরোপুরি ভুল। চায়না কৌশলগত সাপোর্ট দিয়ে উন্নতি করবে এটা ভাবাও ঠিক না। পুঁজিবাজারের একাধিক ব্রোকারেজ হাউজের প্রধান নির্বাহী দ্য রিপোর্টকে বলেন, চীনের সাথে চুক্তি পরবর্তীকালীন সময় তেমন কোন পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। এখন পর্যন্ত কোন সুফল না পেলেও এখনো চুক্তির সুফল পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন অনেকে। চীনা স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে ডিএসই কিছুই পাইনি এমনটা অভিযোগ করে ডিএসইর এক পরিচালক নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, চায়না থেকে বিনিয়োগ এসেছে শুধু। এর বাইরে কিছু হয়নি। নামমাত্র অংশগ্রহন বলতে মিটিংয়ে অংশ নেওয়া চায়না থেকে এতটুকুই পেয়েছি আমরা।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৪ মে চুক্তির মাধ্যমে ডিএসইর ৪৫ কোটি বা ২৫ শতাংশ শেয়ার ২২ টাকা দরে ৯৪৭ কোটি টাকায় কিনে নেয় চীনা কনসোর্টিয়াম। কিন্তু সেই বিনিয়োগের ফলাফল নিতে হতাশা প্রকাশ করেন ডিএসইর শেয়ারহোল্ডাররা। এজন্য ডিএসইকে শেয়ার বিক্রি বাবদ ৯৪৭ কোটি টাকা দেয় চীনা জোট।কৌশলগতবিনিয়োগকারী হিসেবে চীনা জোটের সাথে ডিএসইর চুক্তির অন্যতম প্রধান শর্ত ছিলো লেনদেনের জন্য ম্যাচিং ইঞ্জিন প্রদান করবে করবে চীনা জোটের দুই প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ডিএসইর আধুনিকায়নসহ নামমাত্র কারিগরি সহোযোগিতায় ভূমিকা রেখেছে চীনা কনসোর্টিয়াম। তবে বৈশ্বিক করোনা মহামারীর কারণে কারিগরি সহোযোগিতার কাজে ধীরগতি লক্ষ্য করা গিয়েছে বলে করছেন অনেকে। চুক্তির পরের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে বিদেশি বিনিয়োগ আনার লক্ষ্যে সিএনআই-ডিএসই সিলেক্ট ইনডেক্স (সিডিএসইটি) নামের একটি সূচক চালু করে ডিএসই। সেনজেন সিকিউরিটিজ ইনফরমেশন কোম্পানি লিমিটেড ও ডিএসই যৌথভাবে এ সূচকটির নকশা ও উন্নয়ন কাজ করে। তবে চালুর প্রায় চার বছর পার হলেও ঢাকার পুঁজিবাজারে সিডিএসইটি সূচকটির তেমন কোনো গুরুত্ব নেই। এটি নামমাত্র একটি সূচক হয়ে দাঁড়িয়েছে।চীনা কনসোর্টিয়ামের পক্ষ থেকে ডিএসইতে পরিচালক হিসেবে রয়েছেন জি ওয়েনহাই। ভার্চুয়াল মাধ্যমে তিনি ডিএসইর বোর্ড মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করলেও কৌশলগত কোনো সহযোগিতাই পাওয়া যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন বলেন, চীনের সাথে চুক্তির আরো বড় সুফল আসবে বলে আমার মতো সবারই ধারণা ছিলো। কিন্তু বাস্তবে তেমন কোন বড় সুফল আসেনি। তিনি মনে করেন সুফল আসা এখনো সম্ভব। ২০২০ সালের করোনা মহামারির ধাক্কা সবচেয়ে বড় কারণ বলে মনে করছেন তিনি। এছাড়া দেশের পুঁজিবাজারে স্টাবিলিটি নেই বলে উল্লেখ করেন পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ আলআমিন। অস্থিতিশীল পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগকারী আকৃষ্ট হবে না, যার জন্য পুঁজিবাজারে দরকার স্থিতিশীলতা। পাশাপাশি তিনি ডিএসইকে সাংগঠনিকভাবে আরো শক্তিশালী করার উপর জোর দেন। তিনি বলেন, যেকোন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম গতিশীল করতে দরকার প্রতিষ্ঠানের স্থিতিশীলতা। ডিএসইর এমডি পদত্যাগ, এমডি ছাড়া দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠান পরিচালনার মতো সমস্যা রয়েছে। এরূপ সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হওয়াও চুক্তির সুফল না আসার বড় কারণ বলে মনে করেন পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ আল আমিন।

এদিকেবিদায়ী সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সকল সূচকের পতনের সঙ্গে সঙ্গে বাজার মূলধন প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা কমেছে। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে লেনদেন। আলোচ্য সপ্তাহে (২১ জানুয়ারি – ২৫ জানুয়ারি) ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৩২ হাজার ৯৩৮ কোটি ৬০ লাখ ৮৭ হাজার ৭০১ টাকা। সপ্তাহ শেষে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৫৪ হাজার ৯৬৬ কোটি ১৭ লাখ ৬৫ হাজার ২১০ টাকায়। বিদায়ী সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সকল সূচকের পতনের সঙ্গে সঙ্গে বাজার মূলধন প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা কমেছে। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে লেনদেন।

অন্যদিকে, সম্প্রতি চলমান ভূরাজনৈতিক ও ভূঅর্থনৈতিক দ্বন্দ্বের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চীনা মুদ্রা ইউয়ানকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিটাল লেনদেনের অন্যতম প্লাটফরম রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্টের (আরটিজিএস) সঙ্গে যুক্ত করেছে। ফলে দেশের যেসব বাণিজ্যিক ব্যাংক আরটিজিএসের সঙ্গে যুক্ত ওইসব ব্যাংক এখন সরাসরি চীনা মুদ্রা ইউয়ান দিয়ে লেনদেন করতে পারবে। ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে এ লেনদেন চালু হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া, সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানেবাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিসিআই)সাধারণ সম্পাদক আল মামুন মৃধা বলেন,চীনা বিনিয়োগকারীরা এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। তিনি বলেন,সম্ভাব্য বিনিয়োগের খাতগুলো নিয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে আলোচনা করেছি। দেশের পুঁজিবাজারে চীনের বড় বিনিয়োগ আনতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে আলোচনায়। শিগগিরই চীনে একটি ইনভেস্টমেন্ট সামিট আয়োজন করা হবে বলে জানান আল মামুন মৃধা।

(দ্য রিপোর্ট/ টিআইএম/মাহা/ ২৭ জানুয়ারী/ দুইহাজার চব্বিশ)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর