thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১,  ১৩ জমাদিউল আউয়াল 1446

মীর মশাররফ হোসেন

২০১৩ নভেম্বর ১৩ ১৭:০৬:২৮
মীর মশাররফ হোসেন

দিরিপোর্ট২৪ ডেস্ক : ‘বিষাদ সিন্ধু’ খ্যাত লেখক মীর মশাররফ হোসেন ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। বাঙালী মুসলমানদের মধ্যে এমন লোক কম পাওয়া যাবে যিনি ‘বিষাদ সিন্ধু’ ও ‘মীর মশাররফ হোসেন’ এর নাম শোনেননি।

বিষাদ সিন্ধু বাঙালী মুসলমানদের সাহিত্য চর্চার পথিকৃত ও বাংলা জারি গানের বিকাশে এর ব্যাপক অবদান রয়েছে। এছাড়া তিনি বিশুদ্ধ বাংলা গদ্যরীতির জন্য সুনাম কুড়িয়েছেন নিজ সময়ে।

দৌলতন্নেছা ও মোয়াজ্জেম হোসেনের সন্তান মীর মশাররফ হোসেন কুষ্টিয়া শহর থেকে তিন মাইল পূর্বে লাহিনীপাড়া গ্রামে নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাড়িতে মুন্সির কাছে আরবি-ফার্সি এবং পাঠশালায় পণ্ডিতের কাছে বাংলা শেখেন। তার লেখাপড়া শুরু হয় প্রথমে কুষ্টিয়ায়, পরে বাবার বাড়ি ফরিদপুরের পদমদীতে ও কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে। সবশেষে তিনি কলকাতায় কালীঘাট স্কুলে ভর্তি হন। এক পর্যায়ে লেখাপড়া ছেড়ে নাহিনীপাড়ায় পারিবারিক সম্পত্তি দেখাশুনা করতে থাকেন।

তিনি টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার এস্টেটের ম্যানেজার হন ১৮৮৪ সালে। জমিদারদের সঙ্গে বিবাদের কারণে ১৮৯২ সালে ওই চাকরি ছেড়ে দেন। বিষাদ সিন্ধু দেলদুয়ারে থাকার সময় লেখা। জমিদারি এস্টেটে কাজ করতে গিয়ে তিনি জমিদারদের ক্ষুদ্রতা ও নানা রকম অনাচার দেখেছিলেন। সেসব নিয়ে লেখেন ‘গাজী মিঞার বস্তানী’ ও ‘উদাসীন পথিকের মনের কথা’।

এর আগে, ১৮৭২ সালে জমিদারদের অনাচার নিয়ে লেখেন আরেকটি বিখ্যাত নাটক 'জমিদার দর্পন'। কৃষক বিদ্রোহে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে বঙ্কিমচন্দ্র 'বঙ্গদর্শন' পত্রিকায় নাটকটির প্রকাশ ও প্রদর্শনী বন্ধের সুপারিশ করেছিলেন। এরপর কলকাতায় ছিলেন ১৯০৩ থেকে ১৯০৯ সাল পর্যন্ত।

মীর মশাররফ হোসেন লিখিত উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে রত্নবতী (১৮৭৩) ও কারবালার কাহিনি নিয়ে রচিত তিন খণ্ডের বিষাদ-সিন্ধু (১৮৮৫-৯১)। নাটকের মধ্যে রয়েছে- বসন্ত কুমারী (১৮৭৩), জমিদার দর্পণ (১৮৭২), এর উপায় কি (১৮৭৬) ও বেহুলা গীতাভিনয় (১৮৮৯)।

কবিতার বইয়ের মধ্যে আছে- বিবি খোদেজার বিবাহ (১৯০৫), গড়াই ব্রীজ বা গৌড়ী সেতু (১৮৭৩), হযরত ওমরের ধর্ম জীবন লাভ (১৯০৫), মদিনার গৌরব (১৯০৬), মোসেলেম বীরত্ব (১৯০৭), বাজীমাত (১৯০৮), হযরত আমীর হামজার ধর্ম জীবন লাভ (কাব্য ১৯০৫) ও খোতবা বা ঈদুল ফিতর (১৯০৮)।

এছাড়া তার রচিত প্রবন্ধ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- সঙ্গীত লহরী (১৮৮৭), গো-জীবন (১৮৮৯) ও গাজী মিয়ার বস্তানী (১৮৯৯)। ধর্মীয় বইয়ের মধ্যে রয়েছে- মৌলুদ শরীফ (১৯০০), মুসলমানের বাঙ্গালা শিক্ষা (১ম ভাগ ১৯০৩ ও দ্বিতীয় ভাগ ১৯০৮), হযরত বেলালের জীবনী (১৯০৫), এসলামের জয় (১৯০৮), হযরত ইউসোফ (১৯০৮) ও বিবি কুলসুম (১৯১০)। আত্মজীবনীতে রয়েছে- আমার জীবনী (১৯০৮-১০) ও উদাসীন পথিকের মনের কথা (জীবনী ১৮৯৯)। এছাড়া তার আরো বারোটি বই প্রকাশিত হয়েছে।

তিনি কিছুদিন সাংবাদিকতাও করেন। তিনি কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের সাপ্তাহিক গ্রামবার্তা প্রকাশিকা ও কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সংবাদ প্রভাকরে কাজ করেন। কাঙাল হরিনাথের সঙ্গে তার আমৃত্যু হৃদ্যতা ছিলো। বলা হয়ে থাকে, হরিনাথের সঙ্গে তিনি ফকির লালনের সঙ্গেও দেখা করেছেন।

নানা বাড়ি লাহিনীপাড়া থেকে প্রথম স্ত্রীর নামে 'আজিজন নেহার' নামক একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন ১৮৭৪ সালে। কয়েক মাস পর পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। ১৮৯০ সালে তিনি লাহিনীপাড়া থেকে 'হিতকরী' নামে আরেকটি পাক্ষিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। এ পত্রিকার কোথাও সম্পাদকের নাম ছিল না। 'হিতকরীর' কয়েকটি সংখ্যা টাঙ্গাইল থেকেও প্রকাশিত হয়েছিল।

এছাড়া গানের প্রতিও তার আকর্ষণ ছিলো। তিনি বাউল গান লিখে কাঙাল হরিনাথের 'ফিকিরচাঁদ ফকিরের' বাউল দলের সদস্য হন। 'মশা বাউল' ভণিতায় তিনি কয়েকটি বাউল গানও লিখেছিলেন।

তিনি দুবার বিয়ে করেছিলেন। প্রথম স্ত্রী আজিজুন্নেসার গর্ভে কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করেনি। দ্বিতীয় স্ত্রী কুলসুম বিবি পাঁচটি পুত্র ও ছয়টি কন্যার জন্ম দেন। জীবনের শেষ দিকে তিনি টাঙ্গাইল জেলার গজনবী এস্টেটের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর নিজ বাড়ি রাজবাড়ী জেলার পদমদী গ্রামে মারা গেলে স্ত্রী বিবি কুলসুমের পাশে তাকে কবর দেওয়া হয়।

(দিরিপোর্ট২৪/ডব্লিউএস/নভেম্বর ১৩, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

এই দিনে এর সর্বশেষ খবর

এই দিনে - এর সব খবর