thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ 25, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১,  ৪ রমজান 1446

খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা লিটার

২০২৫ মার্চ ০৪ ০১:০৩:৫৯
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা লিটার

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক:বাজারে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে ভোজ্যতেলের ৬-৭টি কোম্পানি। তিন মাস ধরে সরবরাহ কমিয়ে তারা তৈরি করেছে কৃত্রিম সংকট। পরিস্থিতি এমন দ্বিতীয় রোজায়ও খুচরা পর্যায়ে বোতলজাত সয়াবিন তেল নেই। খোলা তেল পাওয়া গেলেও প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। এতে রোজার মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি কিনতে ক্রেতাকে বাড়তি চাপ নিতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে কারসাজির তথ্যপ্রমাণ থাকলেও কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে না। কোম্পানিগুলোকে শোকজ দিয়ে দায় সারছেন। সোমবার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

সোমবার বেলা ১১টায় রাজধানীর জিনজিরা কাঁচাবাজারে ৬টি মুদি দোকান ঘুরে এক ও দুই লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যায়নি। সঙ্গে নেই পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলও। তবে খোলা সয়াবিন তেল সব দোকানে বিক্রি করতে দেখা গেছে। আর বোতলজাত না পেয়ে খোলা সয়াবিন তেল কিনতে ভিড় করেছেন ভোক্তা। বিক্রেতারা সুযোগ বুঝে লিটার ২০০ টাকায় বিক্রি করছেন। মুদি ব্যবসায়ী রোকন বলেন, ১০ দিন ধরে কোম্পানিগুলো বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ করছে না। যে কারণে কোনো দোকানেই বোতলজাত তেল নেই। ১০ দিন আগে ২০ কার্টন তেল চেয়ে ২ কার্টন পেয়েছিলাম, যা ওইদিন বিক্রি শেষ। তবে খোলা তেলের সরবরাহ করা হচ্ছে। লিটার ১৯০-১৯৫ টাকায় আমাদেরই কিনতে হচ্ছে। আর বিক্রি করতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ২০০ টাকায়।

এদিকে একই চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর নয়াবাজারে। বেলা ১টায় নয়াবাজারের ৮টি দোকান ঘুরে দুটিতে এক লিটারের ৬টি বোতলজাত সযাবিন তেল পাওয়া গেছে। বিক্রেতারা বিক্রি করেছে লিটার ১৯০ টাকা, যা সরকার নির্ধারিত মূল্য ১৭৫ টাকা। তবে প্রতিটি দোকানেই খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে। লিটারে বিক্রি হয় ১৯৫ টাকা, যা সরকার নির্ধারিত মূল্য ১৫৭ টাকা।

নয়াবাজারে সয়াবিন তেল কিনতে আসা মো. আলিম বলেন, সব শ্রেণির ব্যবসায়ী আমাদের বোকা বানিয়ে রেখেছে। পাড়া-মহল্লার দোকানে তেল নেই। বাজারে এলেও বোতলজাত তেল পাওয়া যাচ্ছে না। বিক্রেতারা জানান, কোম্পানিগুলো তেল দিচ্ছে না। এটা কোন ধরনের পরিস্থিতি? সরকারও বড় ব্যবসায়ীদের কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। যত দায় আমাদের ভোক্তাদের। একদিকে পকেট কাটা যাচ্ছে, আরেক দিকে পণ্যও পাচ্ছি না।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, সয়াবিন তেলের সংকটের কোনো কারণ নেই। চাহিদার তুলনায় আমদানি বেশি হয়েছে। কিন্তু কোম্পানিগুলো বাজারে কী কারণে তেল সরবরাহ করছে না, তা সরকার সংশ্লিষ্টরা ভালো বলতে পারবে। পাশাপাশি তাদারকি সংস্থার কাছেও কারসাজির প্রমাণ আছে, তারপরও কেন কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না সাধারণ মানুষ জানতে চায়।

কাওরান বাজারের একাধিক কোম্পানির ডিলারদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, কোম্পনিগুলো তেল না দেওয়ায় খুচরা দোকানে তেল দিতে পারছেন না। তবে কয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতি ঠিক হবে। কোম্পানিগুলো সরকারসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলছে।

এদিকে দুদিনের মধ্যে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। সোমবার দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে টাউন হল কাঁচাবাজার পরিদর্শন শেষে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন। সয়াবিন তেলের সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি নেই। সয়াবিন তেলের সরবরাহ কিছুটা কম আছে। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। আশা করছি, আজ (সোমবার) থেকেই সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হবে। দুইদিনের মধ্যে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।

সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, সয়াবিন তেল বেশি দামে যেমন বিক্রি হচ্ছে, তেমনই পাম অয়েল সরকার নির্ধারিত দাম থেকে ২৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। আমাদের মোট ভোজ্যতেলের ৬০ শতাংশ পাম অয়েল। বাজারে তেলের দাম একই সঙ্গে কমেছে এবং বেড়েছে। আশা করছি, সয়াবিন তেলের দামও কমে আসবে।

সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, আমরা রোজার আগে থেকেই সরবরাহ বাড়িয়েছি। অন্য কোম্পানি কী করছে জানি না। সিটি গ্রুপ আগের চেয়ে বেশি তেল বাজারে সরবরাহ করছে। বাজারে আমাদের কোম্পানির তেল পাওয়া যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত বছর নভেম্বরে অস্থিরতা শুরু হয় ভোজ্যতেলের বাজারে। বোতলজাত তেলের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা যায় খোলা তেল। প্রথম দফায় ১৭ অক্টোবর এবং দ্বিতীয় দফায় ১৯ নভেম্বর শুল্ককর কমিয়ে তা নামানো হয়েছে শুধু ৫ শতাংশে। এতে বাজারে সামান্য কমে ভোজ্যতেলের দাম। তবে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে এসে বাজার থেকে উধাও হতে শুরু হয় ১ ও ২ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন। ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী, ৯ ডিসেম্বর লিটারে ৮ টাকা বাড়ানো হয়। তবুও সরবরাহ সংকট কাটেনি। এরপর ১৬ ডিসেম্বর ভোজ্যতেলের দাম সহনীয় রাখতে নতুর বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত আমদানিতে শুল্ক, রেগুলেটরি ডিউটি ও অগ্রিম আয়কর শতভাগ অব্যাহতি দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। তারপরও অস্থিরতা কাটছে না।

ভোজ্যতেল, মসলা, আটা-ময়দায় ভ্যাট অব্যাহতি : রেপসিড অয়েল, কেনোলা অয়েল উৎপাদনে এবং রাইস ব্রান অয়েল ও সূর্যমুখীর তেল বিপণন (সরবরাহ) পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। একই সঙ্গে দেশে উৎপাদিত সব ধরনের ডাল; আদা, ধনিয়া, হলুদ, মরিচ গুঁড়া; আটা, ময়দা ও সুজি এবং লবণ সরবরাহে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এতে বাজারে এসব পণ্যের দাম কিছুটা হলেও কমতে পারে। রোববার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সংস্থাটি।

এদিকে এনবিআর সূত্র জানায়, ইতঃপূর্বে উৎপাদন পর্যায়ে যেসব পণ্যের ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া আছে, প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সেসব পণ্যে সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ফলে বাজারে এসব পণ্যের দাম কিছু হলেও কমবে। শুধু কৃষিকার্যে ব্যবহƒত হারবিসাইডস (একধরনের রাসায়নিক) সরবরাহে ভ্যাট অব্যাহতি নতুন করে দেওয়া হয়েছে।

যেসব পণ্যে নতুন করে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে রেপসিড অয়েল, কেনোলা অয়েল, কোলজা অয়েল; সরবরাহ পর্যায়ে দেশে উৎপাদিত সব ধরনের ডাল, সব ধরনের মসলার গুঁড়া, আটা, ময়দা, সুজি, সানফ্লাওয়ার অয়েল, রাইস ব্রান অয়েল, বিস্কুট, লবণ ও কৃষিকার্যে ব্যবহƒত হারবিসাইডস। প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাসে দ্রব্যমূল নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোজ্যতেল, চিনি, আলু, ডিম, পেঁয়াজ, চাল, খেজুর ও কীটনাশক আমদানিতে শুল্ক, সংরক্ষণমূলক শুল্ক, অগ্রিম আয়কর ও আগাম কর ছাড় দিয়েছে এনবিআর।

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

অর্থ ও বাণিজ্য এর সর্বশেষ খবর

অর্থ ও বাণিজ্য - এর সব খবর