thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১,  ১৩ জমাদিউল আউয়াল 1446

চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান

২০১৩ অক্টোবর ১০ ১৬:২৬:১৬ ০০০০ 00 ০০ ০০:০০:০০
চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান
দিরিপোর্ট২৪ ডেস্ক : বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান। স্বতন্ত্র্যরীতিতে ফিগার, নিসর্গ এবং গ্রাম-বাংলাকে চিত্রায়িত করার জন্য তিনি বিখ্যাত। তিনি বাংলাদেশের অনেক চিত্রশিল্পীকে প্রভাবিত করেছেন। বিশ্ববরেণ্য আরেক চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসোর সঙ্গে একই প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছিল তাঁর ছবি।

সুলতান ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নাম রাখা হয় লাল মিয়া। বাবা মো. মেছের আলী, মা মোছা. মাজু বিবি। ছোটবেলা থেকে ছবির প্রতি ছিল লালমিয়ার ভীষণ টান৷ কোনকিছু ভাল লাগলেই চকখড়ি, কাঠকয়লা, হলুদ ও পুঁই ফলের রস দিয়ে ছবি আঁকতেন৷

স্থানীয় ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণী পাশ করার পর নাকানি এ. বি. এস. জুনিয়র মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন সুলতান৷ সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালে সৎ মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যান৷

কলকাতায় গিয়ে নড়াইলের জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায় বাহাদুরের বাড়িতে উঠেন৷ এন্টান্স পাশ না করেও তিনি জমিদারের পরামর্শে কলকাতা আর্ট কলেজের ভর্তি কমিটির সদস্য শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর সাহায্যে ভর্তি পরীক্ষা দেন। ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়ে ১৯৪১ সালে ভর্তি হলেন কলেজে৷ শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর বাড়িতে থেকেই কলেজে যেতেন সুলতান৷ সোহরাওয়ার্দীই লালমিয়ার নাম বদলে রাখেন শেখ মোহম্মদ সুলতান৷ বিভিন্ন পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা সত্ত্বেও আর্ট কলেজে তাঁর মন টেকেনি। পড়াশুনা বাদ দিয়ে ১৯৪৪ সালে তিনি ভারতবর্ষ ঘুরতে বেড়িয়ে যান।

১৯৪৫ সালে ভারতের সিমলাতে সুলতানের প্রথম প্রদর্শনী হয়৷ সেখানকার মহারাজা প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করেন৷ ১৯৪৮ সালে করাচিতে এবং ১৯৪৯ সালে লাহোর ও করাচিতে চিত্র প্রদর্শনী হয়৷ তারপর আরো কয়েক বছর কাশ্মীর ও ভারতে কাটান তিনি৷ ১৯৫১ সালে চিত্রশিল্পীদের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে যান৷ ১৯৪৬ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে তাঁর মোট বিশটি একক প্রদর্শনী হয়৷ ১৯৫৩ সালে ভবঘুরে জীবন ছেড়ে নড়াইল ফিরেন। কিছুদিন পর ঢাকায় আসেন। ১৯৫১ সালের পর পনের বছর কোন প্রদর্শনী করেননি। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৬ সালের সেপ্টেম্বরে শিল্পকলা একাডেমির গ্যালারিতে পঁচাত্তরটিরও বেশি চিত্রকর্ম নিয়ে হয় তার প্রদর্শনী। ১৯৮৪ সালে সরকার তাকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আবাসিক শিল্পী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়৷ ১৯৮৭ সালে এপ্রিল-মে মাসে গ্যেটে ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে জার্মান কালচারাল ইনস্টিটিউটে দ্বিতীয়বারের মতো একশটিওর বেশি ছবি নিয়ে প্রদর্শনী করেন৷ এর কিছুদিন পর তিনি আবার নড়াইলে ফিরে যান। ১৯৯৪ সালে ঢাকার গ্যালারি ‘টোনে’ স্কেচ প্রদর্শনী করেন। এটি তাঁর শেষ প্রদর্শনী৷ একই বছরের ১০ আগস্ট শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে নড়াইলে ৭০তম জন্মদিন পালন করা হয়৷

সুলতান ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'ম্যান অব দ্য ইয়ার', নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে 'ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট' এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে 'ম্যান অব এশিয়া' পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা, ১৯৮২ সালে একুশে পদক এবং ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। চিত্রা নদীর তীরে এস এম সুলতানের বাড়িতে প্রতিবছর জম্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী আড়ম্বরে পালন করা হয়।

তাকে নিয়ে ‘আদমসুরত’ নামে তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ।

(দিরিপোর্ট২৪/ডব্লিউএস/এমডি/অক্টোবর ১০, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

এই দিনে এর সর্বশেষ খবর

এই দিনে - এর সব খবর