thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউল আউয়াল 1446

‘গৃহপালিত’ বিরোধী দলের পথে জাপা!

২০১৩ নভেম্বর ১৮ ১৮:৩৪:২৭
‘গৃহপালিত’ বিরোধী দলের পথে জাপা!

সাগর আনোয়ার, দিরিপোর্ট : অবশেষে ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দলের পথেই হাঁটছে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি!

সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারে অংশ নিয়ে এরশাদ জাতীয় ‘বেঈমান’ ও ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দলের পথেই হাঁটছেন বলে মনে করছেন খোদ জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা।

জাতীয় পার্টির একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘স্যার আমাদের কথা দিয়েছিলেন তিনি মহাজোট ছেড়ে দিয়ে এককভাবে নির্বাচন করবেন। পাতানো কোন নির্বাচনে অংশ নেবেন না। সব দল অংশ না নিলে তিনি সংসদ নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করবেন না। কিন্তু ১২ ঘন্টার ব্যবধানে স্যারের এমন পরিবর্তন পার্টির ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করছে ।’

এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ বলেন, ‘জয়ী হওয়ার জন্য আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি। দুর্নীতিবাজ ও অত্যাচারি এই সরকারের হাত থেকে দেশকে বাঁচানোর একমাত্র পথ নির্বাচন। এজন্য আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি।’

প্রসঙ্গত, সোমবার সকালে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে মহাজোট ছাড়েন এরশাদ এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই জাতীয় পার্টি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. নুরুল আমীন বেপারি বলেন, ‘১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছিলো।তখন আওয়ামী লীগ ছিলো বিরোধী দলে।২০১৪ সালের নির্বাচনে মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগ হবে সরকারি দল আর জাতীয় পার্টি হবে গৃহপালিত বিরোধী দল।’

জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগরের একাংশের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘এদেশের জনগণ আমাদের আর বিশ্বাস করবে না। পার্টি হিসেবে জাতীয় পার্টির আর নিজস্ব সত্তা থাকলো না। আমরা জনগণের ঘৃণার পাত্রে পরিণত হলাম।’

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের নোয়াখালী অঞ্চলের একজন উপদেষ্টা জানান, ‘স্যারের কথা বিশ্বাস করে আমি এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু স্যারের এমন পরিবর্তন স্যারের প্রতি আমাদের অন্ধ বিশ্বাসে আঘাত করেছে। তাই লাঙ্গল নিয়ে আমি আর এলাকায় কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে আমি অন্য দলেও যোগ দিবো না।’

এরশাদের ঘনিষ্ঠ এ উপদেষ্টা জানান, ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। স্যার শেষ সময়ে নির্বাচন বর্জন করেন কি-না তাও নিশ্চিত নয়।’

বিরোধীতা করেও নির্বাচনকালীন সরকারে অংশ নেয়ায় জাতীয় পার্টির ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কি না জানতে চাইলে সোমবার এরশাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচন না হলে দেশ অচল হয়ে যাবে। ক্ষমতার পরিবর্তন হবে না। আমরা ক্ষমতার পরিবর্তন আনার জন্য নির্বাচনে যাচ্ছি।এবার নির্বাচনে অংশ না নিলে জনগণ আমাদের থুথু দিতো।’

সংসদে ও সংসদের বাইরে বর্তমান সরকারের সমালোচনা করেও নির্বাচনকালীন সরকারে অংশ নেয়া জাতীয় পার্টির এমপি মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘এটা পার্টির সিদ্ধান্ত। তাই শপথ নিয়েছি। পার্টি করলে তো পার্টির সিদ্ধান্ত মানতেই হবে।’

জাতীয় পার্টির এই নির্বাচনকালীন মন্ত্রীসভায় অংশগ্রহণ এবং এরশাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণায় বেশিরভাগ দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। এমনকি তারা দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদেরকে গুটিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন জাপার মুখপাত্র ও প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ।

এ ছাড়া জাপা নেতারা জানান, এরশাদের নির্বাচনকালীন সরকারে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যেসব নেতা তৎপর ছিলেন তাদের গ্রেফতার ও দল থেকে পদচ্যুতির ঘটনাও ঘটছে।

রবিবার রাতে ছাত্রসমাজ সভাপতি সৈয়দ মিজানুর রহমান হিমুকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। এ ছাড়া মহাজোটবিরোধী হওয়ায় শনিবার যুব সংহতির আহবায়কের পদ হারান আলমগীর শিকদার লোটন।

(দিরিপোর্ট/এসএ/এসবি/নভেম্বর ১৯, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর