thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউল আউয়াল 1446

‘নির্বাচনকালীন সরকার কেবল রুটিন কাজ করবে’

২০১৩ নভেম্বর ২০ ২০:২৪:০০
‘নির্বাচনকালীন সরকার কেবল রুটিন কাজ করবে’

দিরিপোর্ট প্রতিবেদক : নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে গঠিত নতুন মন্ত্রিসভা কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে না শুধু রুটিন কাজগুলো করবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘সর্বদলীয় সরকারের কোনো মন্ত্রী নির্বাচনে অংশ নিলে তিনি মন্ত্রীদের সুযোগ সুবিধা নিয়ে প্রচারণায় যেতে পারবেন না। তাকে প্রার্থী হিসেবে প্রচারণায় যেতে হবে।’

নবম জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনের শেষ কার্যদিবসে বুধবার সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্ধারিত বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ থাকায় আমি সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করি। আমি তাকে জানাই আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আপনি নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে নির্দেশ দিন। এ সময় রাষ্ট্রপতি আমাকে নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালনা অব্যাহত রাখতে বলেন। রাষ্ট্রপতির নির্দেশক্রমে আমরা সর্বদলীয় নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিই।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সর্বদলীয় সরকার গঠনের জন্য আমরা সব দলকে আমন্ত্রণ জানাই। আমি বিরোধী দলকে অনুরোধ করেছিলাম এবং বলেছিলাম নির্বাচন নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। নির্বাচনকালীন যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে সেখানে আপনারা কতটা মন্ত্রিত্ব চান, কোন কোন মন্ত্রণালয় চান; আমাদের বলুন। আমরা দেব। আসুন সবাই মিলে সরকার গঠন করে একটি নির্বাচন সম্পন্ন করি। নির্বাচন কমিশন যথেষ্ঠ শক্তিশালী। কমিশন চাইলে এখন নিজেরাই নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ব্যয় করতে পারে। নির্বাচনে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই তার প্রমাণ আমরা দিয়েছি। কিন্তু বিরোধী দল আমাদের সেই আমন্ত্রণে সাড়া দেয়নি। আমি জাতীয় পার্টিকে ধন্যবাদ জানাই, কারণ আমাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে তারা সর্বদলীয় সরকারে অংশ নিয়েছে। আমরা জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও সাম্যবাদী দল নিয়ে ইতোমধ্যে একটি মন্ত্রিসভা গঠন করেছি। যা আকারে ছোট। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) রাষ্ট্রপতির অনুমতিক্রমে তা গেজেট আকারে প্রকাশ হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিরোধী দল আবারও অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করে বাংলাদেশে অগণতান্ত্রিক শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে চায়। দেশে আরেকটি এক-এগারোর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। তত্ত্বাবধায়ক আসলে কী নির্বাচন হবে? তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে আসলে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলে কোনো না কোনো ঝামেলা হয়েছে। সংগ্রাম, আন্দোলন, রক্তপাত হয়েছে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি বা সাংবিধান মোতাবেক সরকার পরির্বতনের সুযোগ থেকে জনগণ বঞ্চিত হয়েছে। দেশের মাত্র একবার শান্তিপূর্ণভাবে সরকার পরিবর্তন হয়েছে তা ২০০১ সালে। এটা জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। আর এ সুযোগে দেশে বার বার অগণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতায় এসেছে। আমরা এ বিষয়টির অবসান চাই। অগণতান্ত্রিক কোনো শক্তি যাতে ক্ষমতা গ্রহণ করতে না পারে সেজন্য আমরা সংবিধান সংশোধন করেছি। আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা এমন একটি ব্যবস্থা রেখে যেতে চাই যাতে পাঁচ বছর পর পর বাংলাদেশের জনগণকে তাদের ভোটের অধিকারের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করতে না হয়। কোনো রক্তপাত না হয়। বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন করার একটি ব্যবস্থা রেখে যেতে চাই। ভোটের অধিকারের জন্য আমরা সারা জীবন রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি, গণতন্ত্র ও সংসদীয় গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য বিরোধী দলের কোনো সহযোগিতা পায়নি।’

বিরোধীদলীয় নেত্রীর সঙ্গে ফোনালাপ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আমি বিরোধী দলের নেত্রীকে ফোন করি। দুপুর ১টা পর্যন্ত আমি লাল ফোনের মাধ্যমে তাকে কল করি। ফোনটি রিসিভ করতেও তিনি দেরি করেন। বার বার রিং হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। ফোন যদি নষ্ট হতো তাহলে এনগেজ টোন হতো। তারপরও তার ব্যক্তিগত সহকারী এবং আমার ব্যক্তিগত সহকারী পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারপর বিরোধীদলীয় নেত্রীর সঙ্গে কথা বলি। কিন্তু শুরুতেই তিনি এমন সব কথা বলেছেন তখন আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে ফোন ভেঙে ফেলে দিত। আল্লাহর শুকরিয়া তিনি আমাকে অনেক ধৈর্য্য দিয়েছেন। তাই আমি তার সব কথা সহ্য করেছি।’

নবম জাতীয় সংসদে সর্বাধিক কার্যদিবস অধিবেশন চলার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে নবম জাতীয় সংসদে সর্বোচ্চ ৪১৮ কার্যদিবস অধিবেশন চলেছে এবং সর্বোচ্চ ২৭১টি আইন সংসদে পাস হয়েছে। যা অষ্টম জাতীয় সংসদের মোট ৩৭৩ কার্যদিবসে ১৮৫টি আইন পাস হয়। আর এ ৪১৮ কার্যদিবসে প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রী মাত্র ১০ দিন সংসদে উপস্থিত ছিলেন। অল্প কয়েক দিনের জন্য তিনি সংসদে উপস্থিত থাকলেও সাত ঘণ্টা ১১ মিনিট বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে মার্শাল-ল জারির মাধ্যমে অসাংবিধানিকভাবে অগণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং আইন প্রণয়ন করে। পরবর্তী মহামান্য হাইকোর্ট একটি রায়ের মাধ্যমে মার্শাল-ল এর মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ ও আইন প্রণয়নকে অবৈধ ঘোষণা করেন। কিন্তু মার্শাল-ল’র মাধ্যমে জারি করা বিভিন্ন অধ্যাদেশ ও প্রণীত আইন প্রচলিত হওয়ায় এর ধারাবাহিকতার প্রয়োজনে একটি কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে বেশ কয়েকটি আইনকে আমরা পাস করি। এসব আইন পাসের আগে একটি প্রটেকশন আইনও পাস করা হয়।’

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৮ সালে জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনে। আমরা ক্ষমতায় আসার পর সংবিধান সংশোধনের জন্য সব দলের জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করি। কিন্তু বিরোধী দল সে কমিটিতে যোগ দেয়নি। এ কমিটি দীর্ঘ ১১ মাস ২৭টি সভার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারে একটি সুপারিশ পেশ করে। সেই সুপারিশের আলোকেই সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী সংসদে পাস হয়।’

নবম সংসদের সমাপনী দিনে সংসদ নেতার বক্তব্যের শেষ ভাগে স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, সব সংসদ সদস্য এবং বিরোধীদলীয় নেত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ হয়তো নবম জাতীয় সংসদের শেষ দিন। শেষে যদি কোনো জরুরি অবস্থা বা যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি না হয় তাহলে আজই সংসদের শেষ দিন।’

(দিরিপোর্ট/আরএইচ/এইচআর/এনডিএস/এমডি/নভেম্বর ২০,২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর