thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১,  ২০ জমাদিউস সানি 1446

বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু

২০১৩ নভেম্বর ২৩ ১৬:১০:২৯
বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু

দিরিপোর্ট ডেস্ক : বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু ১৯৩৭ সালের ২৩ নভেম্বর ভারতের ঝাড়খণ্ডের গিরিডিতে পরলোক গমন করেন। অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতের এই বিজ্ঞানী পদার্থ ও উদ্ভিদবিজ্ঞানী হিসেবে বিশ্ব জুড়ে পরিচিত। সুন্দর গদ্য লেখায় তার সুখ্যাতি আছে। বাংলা ভাষায় প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখেন তিনি।

জগদীশ বসুর জন্ম বাংলাদেশের বিক্রমপুরে ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর। ১৮৬৯ সালে হেয়ার স্কুলে ভর্তি হন। পরে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়াশোনা করেন। ১৮৭৫ সালে এন্ট্রান্স পাস করেন। ১৮৭৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে ভর্তি হন ১৮৮০ সালে। অসুস্থতার কারণে বেশিদিন পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। এরপর কেমব্রিজের ক্রাইস্ট কলেজ থেকে ট্রাইপস পাশ করেন। প্রায় একই সাথে বিএসসি সম্পন্ন করেন।

দেশে ফিরে ১৮৮৫ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিজ্ঞানের অস্থায়ী অধ্যাপক পদে যোগ দেন। ভারতীয় হওয়ায় সেখানে তার বেতন নির্ধারণ করা হয় ইউরোপীয় অধ্যাপকদের বেতনের অর্ধেক। এই অন্যায়ের প্রতিবাদে দীর্ঘদিন তিনি কোনো বেতন না নিয়েই শিক্ষকতা করেন। অন্যদের চেয়ে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেন। এতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে তিন বছরের পাওনা বেতন পরিশোধ করে দেয়। তার চাকুরিটিও স্থায়ী হয়ে যায়। তখন থেকেই ইউরোপীয় ও ভারতীয় অধ্যাপকদের বেতনের বৈষম্য দূর হয়।

ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনার প্রথম আঠারো মাসে জগদীশ যে সকল গবেষণা করেছিলেন তা লন্ডনের রয়েল সোসাইটির জার্নালে প্রকাশিত হয়। এই গবেষণা পত্রগুলোর সূত্র ধরেই ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন ১৮৯৬ সালের মে মাসে তাকে ডিএসসি ডিগ্রি প্রদান করে। একই গবেষণার জন্য ইংল্যান্ডের লিভারপুলে বক্তৃতা দেয়ার জন্য ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। এই বক্তৃতার সাফল্যের পর তিনি বহু স্থান থেকে বক্তৃতার নিমন্ত্রণ পান। এর মধ্যে ছিল রয়েল ইন্সটিটিউশন, ফ্রান্স এবং জার্মানি।

তার আবিষ্কারের মধ্যে উদ্ভিদের বৃদ্ধিমাপক যন্ত্র ক্রেস্কোগ্রাফ, উদ্ভিদের দেহের উত্তেজনার বেগ নিরূপক সমতল তরুলিপি যন্ত্র রিজোনাস্ট রেকর্ডার অন্যতম। উপমহাদেশে পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানের ভিত্তি তার হাতেই সূচিত হয়। তিনি উপমহাদেশের একমাত্র ব্যক্তি যিনি আমেরিকান প্যাটেন্টের অধিকারী। তার আবিষ্কৃত বেতার তরঙ্গের ভিত্তিতে মার্কনি রেডিও আবিষ্কার করেন।

তার লেখা বইয়ের মধ্যে রয়েছে রেসপন্সেস ইন দ্য লিভিং অ্যান্ড নন-লিভিং (১৯০২), প্লান্ট রেসপন্সেস এজ এ মিনস অব ফিজিওলজিক্যাল ইনভেস্টিগেশনস (১৯০৬), কম্পারেটিভ ইলেকট্রপিজিওলজি (১৯০৭), নার্ভাস মেকানিজম অব প্লান্টস (১৯২৫), কালেক্টেট ফিজিক্যাল পেপার্স (১৯২৭), মটর মেকানিজম অব প্লান্টস (১৯২৮) ও গ্রোথ এন্ড ট্রপিক মুভমেন্ট ইন প্লান্টস (১৯২৯)। বাংলায় ছোটদের জন্য চমৎকার গদ্যে লিখেছেন ‘অব্যক্ত’ নামে একটা বই।

তিনি জীবদ্দশায় অনেকগুলো সম্মাননা লাভ করেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য নাইটহুড (১৯১৬) ও রয়েল সোসাইটির ফেলো (১৯২০)। তিনি লিগ অফ নেশন্‌স কমিটি ফর ইনটেলেকচুয়াল কো-অপারেশনের সদস্য। এছাড়া ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সাইন্সেস অফ ইন্ডিয়ার (বর্তমানে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সাইন্স একাডেমি) প্রতিষ্ঠাতা ফেলো।

তার কৃত্তিমান ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু, দেবেন্দ্রমোহন বসু, মেঘনাদ সাহা, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ ও জ্ঞান মুখোপাধ্যায়।

তাকে নিয়ে বাংলায় অনেক বই রচিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফরহাদ মজহারের ‘জগদীশ’।

(দিরিপোর্ট/ডব্লিউএস/এমডি/নভেম্বর ২৩, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

এই দিনে এর সর্বশেষ খবর

এই দিনে - এর সব খবর