thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২১ জুন 25, ৭ আষাঢ় ১৪৩২,  ২৪ জিলহজ 1446

তাসকিনের পিঠে ব্যাট ভেঙেছিলেন তার বাবা (ভিডিওসহ)

২০১৪ জুন ২৫ ১৮:৪৫:৪৭
তাসকিনের পিঠে ব্যাট ভেঙেছিলেন তার বাবা (ভিডিওসহ)

রবিউল ইসলাম, দ্য রিপোর্ট : ব্যাট আর বলের ওপর একটু বেশিই প্রেম তাসকিনের। এমনকি নিজের প্রেমিকার চাইতেও। ছোটবেলায় এই ক্রিকেট প্রেমের কারণেই তাসকিনের পিঠে ব্যাট ভেঙ্গেছিলেন তার বাবা আব্দুর রশিদ। গত ১৭ জুন ব্যাট বলের ওপর তাসকিনের সেই প্রেমের পরিণতি অবাক-বিস্ময়ে দেখেছে বিশ্ববাসী। বাংলাদেশ-ভারত ওয়ানডে ম্যাচে ওইদিন ২৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে রেকর্ডবুকে নাম লিখিয়েছেন তাসকিন আহমেদ তাজিম।

২০০৪ সালের কথা। ছেলের আবদার রাখতে বাবা আব্দুর রশিদ ছেলেকে নিয়ে বাণিজ্য মেলায় গিয়েছেন। কিন্তু অন্য বাচ্চারা যখন নানা খেলনার খোঁজে হন্যে, সে সময় তাসকিন বাবার কাছে আবদার করেছিল ক্রিকেট ব্যাট-বলের জন্য। বাবা অবশ্য তার আবদার রেখেছিলেন।

এক শুক্রবার ব্যবসায়িক কাজ সেরে বাসায় এসে ছেলেকে না পেয়ে মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল আব্দুর রশিদের। মাঠে গিয়ে ছেলে পেয়ে কোনো কিছু না বলেই পেটাতে পেটাতে বাসায় নিয়ে এসেছিলেন। স্মৃতি রোমন্থন করে প্রতিবেদককে এমন তথ্য দিয়েছেন বাবা-ছেলে দু’জনই। এই বিষয়ে তাসকিনের বাবা মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘সন্তান যখন পৃথিবীতে আসে, তখন প্রতিটা বাবা-মা স্বপ্ন দেখে তার ছেলে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হবে। আমার ইচ্ছা ছিল ছেলেকে সেনাবাহিনীতে দেব। কিন্তু তা হয়নি। অবশ্য ও এখন যা হয়েছে, আমি তাতেই বেজায় খুশি।’

ছোটবেলা থেকেই তাসকিন অনেক দুষ্ট প্রকৃতির। তবে মুখচোরা। সারাদিনই মাঠে ক্রিকেট নিয়ে মেতে থেকেছে। খেতে-বসতে ওই ক্রিকেট ব্যাট-বল তো আছেই। এ ছাড়া সে কিছুই বুঝত না। আব্দুর রশিদ বলেছেন, ‘২০০৪ সালে বাণিজ্য মেলায় গিয়ে তাসকিনকে আমি ক্রিকেট ব্যাট কিনে দিই। আর এই ব্যাট দিয়েই তাকে আমি পিটিয়েছি।’ অবশ্য তাতে আক্ষেপ নেই তাসকিনের বাবার। তিনি বলেছেন, ‘ছোটবেলায় অনেক কিছুই বোঝা যায় না। এখন অবশ্য পরিস্থিতি পাল্টেছে। আমি এখন ক্রিকেটার তাসকিনের ভক্ত। তার সব ম্যাচই মাঠে গিয়ে উপভোগ করার চেষ্টা করি।’

বাবার হাতের মার খেয়েই ক্রিকেটার হওয়ার চ্যালেঞ্জ, এমন প্রশ্নের উত্তরে জাতীয় দলের এই নতুন পেসার বলেছেন, ‘আসলে তখন চিন্তা করতাম কিভাবে মারের হাত থেকে বাঁচা যায়। পরে আমি শুধুই চিন্তা করতাম, কিভাবে জাতীয় দলে সুযোগ পাব। এখন স্বপ্ন কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। এখন আমি স্বপ্ন দেখি কিভাবে বিশ্বমানের পেসার হব।’

মার খাওয়ায় বর্ণনায় তাসকিন বলেছেন, ‘একদিন শুক্রবার দুপুর বেলা খেলতে যাই। এরপর বাবা এসে দেখে আমি বাসায় নেই। আমাকে খুঁজে পেয়ে বাণিজ্য মেলা থেকে কিনে দেওয়া ব্যাট দিয়ে আমাকে মারতে মারতে বাড়িতে নিয়ে আসেন। আসলে বাবা পড়াশুনার ব্যাপারে অনেক সচেতন। এছাড়া আছরের আজানের আগে বাসা থেকে বের হওয়া যাবে না, মাগরিবের আজানের আগে বাসায় ফিরতে হবে- এমন কঠিন অবস্থার মধ্যে থাকতে হত আমাকে।’

তাসকিনকে ব্যাট দিয়ে মারার ব্যাখাও দিয়েছেন তাসকিনের বাবা। তিনি বলেছেন, ‘ওর চাওয়া-পাওয়ার ভেতরে ব্যাট বলই ছিল। সেদিন ছিল শুক্রবার ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে এসে দেখি সে বাসায় নেই। ভর দুপুর বেলা মাঠে খেলছে ওই ব্যাট-বল দিয়ে। আমার মাথা গরম হয়ে গেল। ওকে সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট করত আমার আম্মা (তাসকিনের দাদি)। ওই ব্যাট দিয়ে ওকে পিটাতে পিটাতে এনেছি, ব্যাটই ভেঙ্গে গেছে। ওর দাদি অঝরে কেঁদেছে। এরপরও ব্যাট-বলকে ছাড়েনি তাসকিন। পড়তে-খেতে বসলেও তাসকিন বল হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করত।’

অন্য সবার মত নয় তাসকিনের ক্রিকেট শুরুর গল্পটা। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এই অবস্থায় এসেছেন তাসকিন। পরিবার-বন্ধু-ভক্ত সবার সহযোগিতায় তিনি এখন জাতীয় প্রতিশ্রুতিশীল পেসার।

২০০৭ সালে আবাহনী মাঠে ক্রিকেট অনুশীলনে প্রথম নাম লেখালেন তাসকিন। তিনি বলেছেন, ‘আমি আমার এক বন্ধু কাইয়ুমের কাছ থেকে ক্রিকেটে ঢোকার প্রথম ধাপটা পেরুনোর সহযোগিতা পাই। আমি সারাজীবন ওই বন্ধুর কথা মনে রাখব। ২০০৭ সালের জানুয়ারির ১০ তারিখে কাইয়ুম আমার জীবনে খুব বড় একটা সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছিল। ও (কাইয়ুম) আমাকে জানিয়েছিল, আবাহনী মাঠে অনূর্ধ্ব-১২ দলের বাছাই চলছে, তুই চলে আয়। কিন্তু আমি আমার বন্ধু কাইয়ুমকে জানাই, ৩ দিন আগে ক্রিকেট খেলার কারণে আমি বাবার হাতে মার খেয়েছি। নারে দোস্ত এখন সম্ভবই না। তারপর ও আমাকে বলে, তোর বোলিং অ্যাকশনটা ভাল কোচ পছন্দ করতেও পারে।’

এমন পরিস্থিতিতে তাসকিন কি করবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না। বাবার যখন মুড ভাল তখন রীতি অনুযায়ী আবদার করে বসলেন। কিভাবে বাবাকে ম্যানেজ করলেন এমন প্রশ্নে তাসকিন বলেছেন, ‘বাবার কাছে আমি তখনই আবদার করি, যখন দেখি তার মুড খুব ভাল। বাবা টিভি দেখছেন। আমি গলা জড়িয়ে ধরে বলি, বাবা বাবা আবাহনী মাঠে একজন কোচ খেলোয়াড় খুঁজছে, আমাকে আমার একজন বন্ধু বলেছে যাওয়ার জন্য। আমি যাই। পরে দেখলাম মুখটা একটু কাল হলেও বলল, ঠিক আছে যাও, কিন্তু তাড়াতাড়ি ফিরবে।’

এই বিষয়ে আরও মজার বক্তব্য পাওয়া গেল তাসকিনের বাবা আব্দুর রশিদের মুখ থেকে। তিনি বলেন, ‘তাসকিন আমাকে বলল, আবাহনী মাঠে একজন কোচ খেলোয়াড় খুঁজছে। তখন আমি তাকে অনুমতি দিই। একদিন একাডেমির এক ম্যাচে ওদের দল অল্প রানেই অলআউট হয়ে গেল। তখন ওর কোচ সাজু আমাকে বলল, যাক সমস্যা নেই আমার অস্ত্র আছে। আমি জানতে চাইলাম কে। সে বলল সময় হলে দেখবেন। ওই ম্যাচে তাসকিনের বল হাতে ম্যাচ জিতিয়েছে।’

আবাহনী মাঠে ভর্তি হওয়ার পর যেখানে ২ দিন অনুশীলন করার শিডিউল ছিল তাসকিনের সেখানে ৫ দিনই অনুশীলন করেছেন। ঝর-বৃষ্টি মাথায় নিয়েও অনুশীলনে যেতেন তিনি। এমন কয়েকদিন যাওয়ার পর ছেলের ওপর নজর রাখা শুরু করেছিলেন তাসকিনের বাবা। তাসকিনের কথায়, ‘২-৩ দিন যাওয়ার পর বাবা জানতে চায় আসলে ছেলে কই যায়। বাবা নিজেও একদিন আবাহনীর মাঠে গিয়ে অনুশীলন দেখেন। আমার কোচ বাবাকে ডেকে বলেন, আপনার ছেলেকে একটু উৎসাহ দেবেন। দেখে মনে হয় ও ভাল কিছু করতে পারবে। ডে বাই ডে বাবাও মাঠে যাওয়া শুরু করেন।’

ক্রিকেটে বেজায় মত্ত বাবা আব্দুর রশিদ ওরফে মনু। ছেলে তাসকিন তাই মনে করেন। তিনি বলেছেন, ‘আমার বাবা আমার খেলা প্রায় ৯০ ভাগ ম্যাচই মাঠে উপস্থিত থেকে উপভোগ করেন। যে খেলাই হোক না কেনো খেলা শেষে বাবার সাথে বসে বসে গল্প করতাম। বাবা কেমন হয়েছে। আমি বাবার সাথে ফ্রেন্ডলি শুধু ক্রিকেট নয়, সব ব্যাপারেই। আম্মু দেখা যেত আগে ক্রিকেট কম বুঝত, এখন পুরোপুরি বোঝে। বিশেষ করে আমি খেলা শুরু করার পর। আম্মু শুধু চায় আমি উইকেট নেই।’

ছেলেকে কোথায় দেখতে চান এমন প্রশ্নে তাসকিনের মা সাবিনা ইয়াসমিন রূপা বলেছেন, ‘আমি চাইব আমার ছেলে অনেক বড় হবে। অনেক নাম করবে। বিশ্বকাপ খেলবে। সেই খেলায় বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হবে।’ বাবা আব্দুর রশিদের স্বপ্নও তাই। তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘প্রতিটি বাবারই স্বপ্ন থাকে ছেলেকে বড় জায়গায় দেখার। আমি ছেলেকে বলেছি তোমার স্বপ্ন পূরণ করার দায়িত্ব তোমার। তুমি যেহেতু স্বপ্ন দেখ, পূরণও করতে হবে তোমাকেই।’

অনুর্ধ্ব-১২ দলে খেলার পর পর্যায়ক্রমে সুযোগ আসে বয়সভিত্তিক দলে খেলার। একে একে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে বিশ্বকাপও খেলা খেলেছেন তাসকিন আহমেদ তাজিম। তবে অনূর্ধ্ব-১৫ দলের হয়ে মজার স্মৃতিও রয়েছে তাসকিনের। এ বিষয়ে তাসকিন আহমেদ বলেছেন, ‘আমি যখন দলে ডাক পাই আমি ব্যাটসম্যান কাম বোলার হিসেবে সুযোগ পাই। কেননা নির্বাচকরা দেখেছিলেন আমি শেষ ২ ম্যাচ ব্যাটিং করে ম্যাচ জিতিয়েছি। কিন্তু ব্যাট হাতে আমি কিছুই পারছিলাম না। তখন কোচ বলেছেন, ও ব্যাটিংটা কি করল। এর পরের ঘটনাই ভিন্ন। আমাকে বল দেওয়ার পর স্যার দেখলেন সবার চেয়ে জোরে বল আমিই করছি। ব্যাটসম্যানরা আতঙ্কে। বোলাররা আমার দিকে বড় বড় চোখ করে থাকাচ্ছে। সবাই বলছিল এত জোরে কেমনে বল করিস।’

২০১০ সালের ঘটনা। বিকেএসপিতে পেস বোলিং ক্যাম্প শুরু হবে। সেই ক্যাম্পে সুযোগ পেয়েছিলেন তাসকিন আহমেদ। ৭০০ জন থেকে ২০ ওঠে আসাটা সহজ ব্যাপার নয়। কিন্তু সেটাই করে দেখিয়েছেন তাসকিন। তিনি বলেছেন, ‘বিকেএসপির ২ নাম্বার মাঠে পেস বোলিং ক্যাম্পে ট্রায়ালে গেলাম। ৭০০ জনের মধ্য থেকে নেবে মাত্র ২০ জন। দেখে খুব ভয় পেয়ে গেলাম। কারণ ওখানে প্রিমিয়ার লিগ খেলা অনেক বড় ভাইও ছিল। মজার ঘটনা হল ট্রায়াল শেষে স্যাররা সবাইকে ডেকে বলেছে, তোমরা সবাই চলে যাও এক সপ্তাহ পরে জানিয়ে দেওয়া হবে। এক সপ্তাহ পরে আমি পেপার খুঁজলাম। প্রথমবার দেখি আমার নাম নেই, আবার পড়লাম আমার নাম নেই। তৃতীয় বার খুঁজে দেখি আমার নামটা আছে। আমি খুব উচ্ছ্বসিত ছিলাম পেস বোলিং ফাউন্ডেশনে সুযোগ পেয়ে। ২১ দিনের ওই ক্যাম্প হওয়ার পর ১০ জনের একটা স্কোয়াড ঘোষণা হল। সেখানেও আমি সুযোগ পেলাম। প্রথম ২দিন পর যে রানিং সেশনটা হল এরকম রানিং সেশন আমি জীবনেও পার করিনি।’

২০১১ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ দলে সুযোগ পান তাসকিন। সিএবির বিপক্ষে ম্যাচে জোরে বল করে অনেককেই আহত করেছিলেন তিনি। এ বিষয়ে তাসকিন বলেছেন, ‘সিএবি ছেলেরা ভয়ে আমাকে বলত, দাদা আস্তে বল কইরেন।’ পরে আমি ওখান থেকেই ওল্ড ডিওএইচেএসের হয়ে প্রিমিয়ার লিগে সুযোগ পাই।

প্রিমিয়ার লিগ ভাল খেলার পুরস্কার হিসেবে তৎক্ষণাৎ সুযোগ পান অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। তখনই তার বাম পায়ের টেনডনে (বাটির উপরে) ব্যথা শুরু হয়। এ বিষয়ে তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘আমি এই ব্যথা নিয়েই খেলতে থাকি। আস্তে আস্তে বাড়ে ব্যথাটা। পড়ে নিজেকে গুটিয়ে নিলাম। অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের আগে ক্যাম্প শুরু হয়। ব্যথাটার মাত্রা প্রচণ্ড বেড়ে যাওয়ার কারণে আমি খেলতে পারিনি এশিয়া কাপ। ৩ মাস রিহ্যাব করার পর এশিয়া কাপের এক সপ্তাহ আগে আমার অবস্থা কিছুটা ভাল হয়। আমি ফিল করি আমি খেলতে পারব। আমি খুব উচ্ছসিত থাকি খেলার জন্য। কারণ এটা আমার জীবনের প্রথম ট্যুর হবে। কিন্তু যাওয়া হয়নি আমার। শেষে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ভাল খেলি। ৬ ম্যাচে ১১ উইকেট নেই। সব দলের সঙ্গেই ভাল খেলি। বিশ্বকাপে সেরা দশের মধ্যেই থাকি।’

বিপিএলে প্রথম লাইমলাইটে আসেন তাসকিন। এটা তার বাবা মোহাম্মদ আব্দুর রশিদও স্বীকার করেছেন। তিনি মনে করেন, বিপিএল তাসকিনের অসাধারণ পারফর্ম্যান্স তাকে জাতীয় দলে সুযোগ পেতে সহায়তা করেছে। বিপিএল নিয়ে তাসকিন আহমেদ দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘বিপিএল শুরুর পর চিন্তায় পড়লাম কোন দল নেবে আমাকে। শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রাম কিংস আমাকে নেয়। ১১ নাম্বার ভ্যালুলেস ম্যাচটায় সুযোগ পেলাম। ৪ ওভারে ৩০ রান দিয়ে ১ উইকেট পাই। ভালই খেলি। তার পরের দিন সেমিফাইনাল, আমি আশা করিনি আমি খেলব। আমি সুযোগ পাই এবং সুযোগের প্রতিদানও দেই। খুবই উচ্ছসিত ছিলাম। খুব দারুণ একটা সিজন কাটে আমার জন্য।’

টোয়েন্টি২০ বিশ্বকাপে তার দলে সুযোগটা অনেকটা কাকতালীয় ব্যাপার ছিল। হঠাৎ মাশরাফির ইনজুরিতে দলে বদলি হিসেবে ডাক পেয়েছেন তাসকিন। এই সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘টোয়েন্টি২০ বিশ্বকাপে ঘোষণা হল, দেখলাম আমি দলে নেই। স্ট্যান্ড-বাই রাখা হয়েছিল আমাকে। একটু খারাপ লাগছিল। মনকে বুঝিয়েছি থাক অসুবিধা নেই। সুযোগতো আসবেই। পরে দেখলাম রুবেল ভাই ইনজুরিতে পড়লে জিয়া ভাই সুযোগ পেলেন। শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার সাথে খেলা। মাশরাফি ভাই ইনজুরিতে পড়েন। তখন আমাকে নেয়। মাশরাফি ভাই ইনজুরিতে পড়লে আমার খুব খারাপ লাগে। কেন জানি আমি জানি না। ফাইনালে তার জায়গাতেই আমাকে খেলতে হল। আমি মনে মনে একটু আফসেট ছিলাম।’

রেকর্ডবুকে ঢুকেছেন এটা প্রথম কখন জানলেন এমন প্রশ্নে তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘হোটেলের রুমে গিয়ে ফেসবুকে দেখি প্রথমে। পরের দিন বাংলাদেশের সব পত্রিকায় আমার ডানা মেলা ছবি, রেকর্ডবুকে তাসকিন। ম্যাচটা হারাতে ৫ উইকেট পাওয়ার শান্তিটা অনুভব করতে পারিনি। যদি ম্যাচটা জিততাম, আমি ম্যাচ সেরা হতাম। সবাই বলত তাসকিনের অসাধারণ বোলিংয়ে জয় এসেছে।’

তারকা খ্যাতির আগে এবং তারকা খ্যাতির পর তাসকিন কেমন? এমন প্রশ্নে প্রথমে হেসেছেন তিনি। তার পর বলেছেন, ‘ভাল লাগে। তারপরও রাস্তায় গেলে মানুষ-জন চিনে। তাকায় ছবি তোলে। অটোগ্রাফ নেয়। আমি চাই যে আগের মত থাকতে। চাইলেও অনেক সময় অনেক কিছু পারা যায় না। দলের বড় ভাইদের দেখি। তারা অনেক কিছু চাইলেও পারেন না। তারা অনেক জায়গায় গিয়ে শান্তি মত খেতেও পারেন না। আগে খালি দেখতাম। এখন দেখি আমার সাথেও মানুষজন ছবি তোলে।’

তারকাদের সব সময় বিতর্কিত হতে হয়। আপনি কিভাবে নিজেকে দূরে রাখবেন এই বির্তক থেকে। এমন প্রশ্নে তিনি বলেছেন, ‘অনেক সময় এক্সাইটম্যান্টের কারণে আমরা ভুল করে ফেলি। যেহেতু আমরা সবাই মানুষ। সাকিব ভাই-রিয়াদ-মাশরাফি ভাই বলেন কিংবা শচিন বলেন- সবাই আমরা মানুষ। সবার ভুল হবে, তাই স্বাভাবিক। অনেকে আবার জিনিসটাকে হাইলাইট করে ওভাবে। জিনিসটা যতটুক না খারাপ তার চেয়ে অনেক বেশি খারাপ হয়ে যায় মিডিয়ার কাছে। কয়দিন আগে ওনার (সাকিবের) স্ত্রীকে নিয়ে যে ঝামেলাটা হল সবাই বলেছে সাকিব ভাই এ কাজটা কেন করল, ড্রেসিং রুম ছেড়ে কেন গেল?’

তিনি আরও বলেছেন, ‘যদি ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন তাহলে অবশ্যই তার যাওয়ার রাইট আছে।’ আমরা যেহেতু দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছি আমাদের দায়িত্বই থাকবে যে অনেক কিছু ছাড় দেওয়া। কারণ আমাদের দিকে সবাই তাকিয়ে আছে। আমাদের উচিত কমিয়ে ফেলা আমাদের খারাপ দিকগুলো। পাবলিক প্লেস বলেন কিংবা মিডিয়ার সামনে একটু বিনয়ী থাকাটা আমাদের উচিত।’

তাসকিনকে মাশরাফির উত্তরসূরি বলা হয়। মাশরাফিও তা স্বীকার করেন। মাশরাফি বলেছিলেন তাসকিনের মধ্যে ওই ক্ষমতা আছে। তবে ওর সময় লাগবে। ড্রেসিংরুমে মাশরাফি ভাইয়ের কাছ থেকে কতটুকু সহযোগিতা পেয়েছেন? এমন প্রশ্নে তাসকিন দ্য রিপোর্টকে বলেছন, ‘মাশরাফি ভাই হচ্ছেন বেস্ট। মাশরাফি ভাই আমাকে খুব পছন্দ করেন। আমিও মাশরাফি ভাইয়ের অন্ধ ভক্ত। ড্রেসিংরুমে মাশরাফি ভাই আমাকে অনেক কিছুতেই উৎসাহ দিয়েছেন। বলেছেন, তুমি পারবে, আমার বিশ্বাস তুমি পারবা। তোমার ভিতরে আল্লাহ সেই যোগ্যতা দিয়েছে। তুমি চাইলে বাংলাদেশের টেস্ট ম্যাচও জিতিয়ে দিতে পারবে। চেষ্টা করব মাশরাফি ভাইয়ের সব কিছু পরিপূর্ণ করতে।’

মাশরাফি ভাইয়ের সঙ্গে এক সাথে বল করার ইচ্ছা ছিল সেই কবে থেকে। তবে তার ইচ্ছা পূর্ণ হয়েছে এমনই জানিয়েছেন তাসকিন। তিনি বলেছেন, ‘আমার ইচ্ছা ছিল আমি জাতীয় দলে যখন খেলব তখন একপাশ থেকে মাশরাফি ভাই আরেক পাশ থেকে আমি বল করব। এই ইচ্ছাটা আমার ভারত সিরিজে পূরণ হয়েছে।’

ড্রেসিং রুমের কন্ডিশন কেমন? আমাদের ড্রেসিংরুমে ৩ ভাগে ভাগ হয়ে ক্রিকেটাররা থাকে বিষয়টি বাইরে প্রচলিত আছে। এ বিষয়ে আপনি কতটুকু দেখেছেন? এমন প্রশ্নে তাসকিন আহমেদ তাজিম দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘বিশ্বাস করেন মিথ্যাও বলছি না। আমার মনে হচ্ছে আমি অনেকদিন ধরে দলে খেলছি। ওরা কেউই আমাকে বুঝতে দেয়নি আমি দলে নতুন ঢুকেছি। সবাই আমার সাথে দুষ্টামি করছেন। ড্রেসিংরুমে অনেক রকম ফাজলামি করেছে। ভাল পারমর্শ দিয়েছেন। সাকিব ভাই-মুশফিক ভাই-তামিম ভাই বলেন রাজ্জাক-মাশরাফি ভাই সবাই আমাকে ওভাবেই আমাকে সহযোগিতা করেছেন। মাশরাফি ভাই মিডঅফ-মিডঅনে দাঁড়াত। আমাকে সাপোর্ট করত জায়গায় বল কর, টাইট বল কর। আমরা আসলে একটা পরিবার। হয়তো আমাদের একটা খারাপ সময় যাচ্ছে। আশা করছি তা অচিরেই কেটে যাবে; খুব ভাল একটা কিছু আসবে।’

২০১৫ বিশ্বকাপে কঠিন প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতে হবে বাংলাদেশকে। ভিন্ন উইকেট, ভিন্ন কন্ডিশনে খেলা। এক্ষেত্রে প্রস্তুতি কেমন হওয়া উচিত। তিনি বলেছেন, ‘বেশির ভাগ সময়ে আমরা ফ্লাট উইকেটে খেলি যেখানে পেসাররা হেল্প একদমই পায় না। সেখানে ব্যাটসম্যানদের ফেভার থাকে বেশি। বাঁ হাতি স্পিনাররা ভূমিকা পায়। হঠাৎ করে ভাল উইকেটে খেলায় ব্যাটসম্যানদের একটু সমস্যা হয়ে গেছে। আমাদের ঘরোয়া খেলাগুলো কিংবা অনুশীলনের উইকেটগুলো এমন হলে আমাদের ব্যাটসম্যানদের জন্য অনেক হেল্প হবে। ভবিষ্যতে বাইরের দেশেও গেলে অনেক সাহায্য পাব। ভাল উইকেটে খেললে সুযোগ বেশি থাকে।’

বিশ্বকাপ নিয়ে নিজের প্রস্তুতি সম্পর্কে তাসকিন আহমেদ বলেছেন, ‘আমার পরিকল্পনা উইকেট যেমনই হোক, ভাল জায়গায় বল করা। এজন্য আমার পরিশ্রম আরও বাড়িয়ে দিতে হবে। যেহেতু আমার ইনজুরি নিয়ে একটু সমস্যা আছে। তাই আমাকে একটু বেশি কষ্ট করতে হবে।’

নিজেকে অনেক বড় পেসার হিসেবে দেখতে চান তাসকিন। পৃথিবীতে যত বড় বড় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আছে সেখানে খেলতে চান তিনি। এ সম্পর্কে দ্য রিপোর্ট তিনি বলেছেন, ‘স্বপ্ন হচ্ছে বড় মাপের ফাস্ট বোলার হওয়া। বড় বড় ইভেন্টে খেলা। আইপিএল, বিগব্যাশ এই সবে আমি খেলতে চাই। ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট যতকিছু আছে সবকিছুতে আমি অংশগ্রহণ করতে চাই। এ ছাড়া আমার আদর্শ পেস বোলার মরনে মরকেল, ডেল স্টেইন। এদের খেলা আমার ভাল লাগে। আর দেশের মধ্যে মাশরাফি ভাইয়ের খেলা আমার ভাল লাগে। মাশরাফি ভাইয়ের বোলিং ভাল লাগে সেই সাথে মানুষ হিসেবে তিনি অসাধারণ। ৭ বার সার্জারি করার পরও সে খেলে যাচ্ছেন। এটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। বার বার ব্রেক করা। তিনি পারছেন মানসিক জোরের কারণে।’

বোলিং স্টাইল কিছুটা ইংল্যান্ডের বোলারদের মত, কিভাবে সম্ভব হল? এমন প্রশ্নে তিনি বলেছেন, ‘এটা গড গিফটেড, ন্যাচারাল। বোলিং অ্যাকশনটা, বোলিংয়ে পেস। ন্যাচারালি আল্লাহ দিয়ে দেয়। জাস্ট এটাকে বের করতে হয় আপনাকে কষ্ট করে। জিম করে প্রপার ট্রেনিং করে। অ্যাকশনটা ন্যাচারালি থাকে। আল্লাহর কাছে লাখ শুকরিয়া আল্লাহ আমাকে ভাল অ্যাকশন দিয়েছেন, ভাল পেস দিয়েছেন। আমি চাই জিনিসটা ধরে রাখতে। ডে বাই ডে উন্নতি করতে।’

জাতীয় দলের বোলিং কোচ ছুটিতে যাওয়ার আগে তাসকিনকে পরামর্শ দিয়ে গেছেন। সেসব বিষয় নিয়ে তাসকিন বলেছেন, ‘হিথ ম্যাচ দেখে অনেক সন্তুষ্ট। সে ট্যাকনিক্যালি কোনো সমস্যা পাননি আমার বোলিংয়ে। সে শুধু বলেছে, তোমার সিম পজিশনটা নিয়ে কাজ করব। বলটা যতটা সিমে হিট করতে ব্যাটসম্যানদের জন্য ততটা ভয়ঙ্কর হিসেবে আসবে।’

সবার জীবনে পছন্দের কেউ না কেউ থাকে। তারকারদের জীবনে আরও বেশি থাকে। তাসকিন জীবনে কেউ আছেন কিনা সেটা স্বীকার করেননি তিনি। কিংবা তার বাবা মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ। তাসকিন উল্টো বলেছেন, ‘আমার প্রধান পছন্দের জিনিসটাই হল ক্রিকেট বল। জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে তো সব আল্লাহর কাছে। আগে মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। বাংলাদেশকে কিছু দিতে চাই। তারপর ওই সব চিন্তা। পছন্দের কেউতো ....। ভাল বন্ধুতো থাকতেই পারে। তবে এখনও সিদ্ধান্ত নেইনি। এখন আমার কাছে ক্রিকেটই সব। প্রেমিকার চাইতে আমি ক্রিকেট নিয়েই বেশি চিন্তা করি। যেহেতু আমাকে বড় খেলোয়াড় হতে হবে, এটাই আমার প্রধান লক্ষ্য। এই সব পরে দেখা যাবে।’

এই বিষয়ে তাসকিনের বাবা আব্দুর রশিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি হেসে বিষয়টি উড়িয়ে দেন। তিনি বলেছেন, ‘কি বলেন। আমার ছেলেকে ৩৫ বছরের আগে বিয়েই দিব না। আর কোনো পছন্দ থাকার কথাও না।’

(দ্য রিপোর্ট/আরআই/এনআই/এএস/জুন ২৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর