thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ মে 24, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,  ৯ জিলকদ  1445

বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু

২০১৩ ডিসেম্বর ০৩ ০৩:৩৫:৫৩
বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ক্ষুদিরাম বসু ১৮৮৯ সালের ৩ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের মেদিনীপুর জেলা শহরে্র কাছাকাছি হাবিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের শুরুর দিকের সবচেয়ে কম বয়সী বিপ্লবী তিনি। ফাঁসিতে মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ১৮ বছর ৭ মাস ১১ দিন। তাকে নিয়ে রচিত হয়েছিল বিখ্যাত গান ‘একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি’। লতা মুঙ্গেশকরের গাওয়া গানটি এক সময় মানুষের মুখে মুখে ফিরত।

তিনি ত্রৈলকানাথ বসু ও লক্ষীপ্রিয় দেবীর চতুর্থ সন্তান। এই দম্পতির আগের দুই ছেলে মারা যাওয়ায় তখনকার প্রথানুযায়ী বড় মেয়ের অপরূপার কাছে তিন মুঠি খুদের (শস্যের খুদ) বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। একই কারণে তার নাম রাখা হয় ক্ষুদিরাম। তিনি বড় বোনের কাছেই বড় হন।

ক্ষুদিরাম ডানপিটে ও বাউণ্ডুলে স্বভাবের ছিলেন। ১৯০৪ সালে তিনি ভগ্নিপতি অম্রিতার সাথে তামলুক শহর থেকে মেদিনীপুরে এসে মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। তার শিক্ষক সত্যেন্দ্রনাথ বোসের অনুপ্রেরণা এবং শ্রীমদ্ভগবদগীতা পড়ে ব্রিটিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে বিপ্লব করতে অনুপ্রাণিত হন। কাছাকাছি সময়ে মেদিনীপুরে এসেছিলেন বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ ও সিস্টার নিবেদিতা। তারা জনসম্মুখে বিপ্লবের বাণী প্রচার করেন। ক্ষুদিরাম বিপ্লবী রাজনৈতিক দল যুগান্তরে যোগ দেন। অল্প দিনের মধ্যেই তিনি দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠেন।

১৯০৮ সালের এপ্রিল মাসে ১৬ বছর বয়সী ক্ষুদিরামকে বিহারের বড়লাট কিংসফোর্ডকে হত্যার জন্য মোজাফফরপুরের মতিঝিলে পাঠানো হয়। ‘হরেন সরকার’ ছদ্মনাম নিয়ে এক ধর্মশালায় কয়েকদিন থেকে ইংরেজদের গতিবিধি লক্ষ্য করেন।৩০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টায় ইউরোপীয়ান ক্লাবের গেটের কাছ থেকে বড়লাটের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করেন তিনি। কিন্তু ওই গাড়িতে কিংসফোর্ড ছিলেন না। ছিলেন মোজাফ্ফরপুর আদালতের আইনজীবী ব্যারিস্টার প্রিংলে কেনেডির স্ত্রী ও কন্যা। তারা বোমার আঘাতে নিহত হন।

হত্যাকাণ্ডের পর শহর এড়িয়ে প্রায় ২৫ মাইল হেঁটে তিনি ‘ওহানী’ স্টেশনে পৌঁছেন। সেখানে ট্রেনের জন্য অপেক্ষারত ক্লান্ত ক্ষুদিরাম একটি চায়ের দোকানে এক গ্লাস পানি চান। ওই সময় উপস্থিত দুই পুলিশ বিধ্বস্ত ক্ষুদিরামকে সন্দেহবশত জেরা শুরু করে। তাকে তল্লাশি করে পুলিশ ৩৭ রাউন্ড গুলি, ৩০ টাকা এবং রেলের সময়সূচীসহ রেলের একটি ম্যাপ পায়। ১ মে তাকে মোজাফফরপুরের উদ্দেশ্যে ট্রেনের প্রথম শ্রেণীর কামরায় উঠানো হলে স্টেশনে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করে। এই সময় তারা স্বাধীনতা চেয়ে শ্লোগান দেয়।

নন্দলাল ব্যানার্জী নামে এক বাঙালী সাব ইন্সপেক্টরের জেরায় ক্ষুদিরাম সব কথা স্বীকার করেন। এরপর মোজাফফরপুর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট উডম্যানের কাছে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। যদিও আইনজীবীদের পরামর্শে তিনি তাঁর জবানবন্দী পরিবর্তনে রাজি হন। কিন্তু পরে তিনি মিথ্যা বলতে অস্বীকার করেন। ২৩ মে আদালতে তিনি উচ্চকণ্ঠে বলেন, আমি আমার জন্মভূমির স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছি। বিচারক মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিলে হেসে বলেন, আমাকে কিছু সময় দিলে তোমাকে বোমা মেরে খুন করতাম। তাকে উচ্চ আদালতে আপিল করার জন্য ৭ দিন সময় দেয়া হয়। ক্ষুদিরাম প্রথমে আপিল করতে রাজি না হলেও পরে শুভাকাঙ্খীদের অনুরোধে সম্মতি দেন। ৮ জুলাই ক্ষুদিরামের পক্ষে নরেন্দ্র কুমার বসু হাইকোর্টে আপিল করেন। কিন্তু হাইকোর্টের দুই ইংরেজ বিচারক ১৩ জুলাই আগের দণ্ড বহাল রাখেন।

১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট ভোর ৫টায় কলকাতা কারাগারে ক্ষুদিরামের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়। সে সময় তিনি স্বাভাবিক এবং হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন। তার মরদেহ বাঙালীরা ফুল দিয়ে বরণ করে।

১২ আগস্ট কলকাতার ‘দৈনিক অমৃতবাজার’ পত্রিকায় লেখা হয়েছিল- মোজাফফরপুর ১১ই আগষ্ট অদ্য ভোর ছয় ঘটিকার সময় ক্ষুদিরামের ফাঁসি হইয়া গিয়াছে। ক্ষুদিরাম দৃঢ় পদক্ষেপে প্রফুল্লচিত্তে ফাঁসির মঞ্চের দিকে অগ্রসর হয়। এমনকি যখন তাহার মাথার উপর টুপিটা টানিয়া দেওয়া হইল, তখনো সে হাসিতেছিল।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/ডিসেম্বর ০৩, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

এই দিনে এর সর্বশেষ খবর

এই দিনে - এর সব খবর