thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ১৮ জমাদিউল আউয়াল 1446

আসছে সোনালী আঁশের সোনালী দিন?

২০১৩ ডিসেম্বর ০৫ ১৩:৪৬:২০

ঢাকার একটি দৈনিক সুখবর দিয়েছে। বিষয় পাট। শিরোনাম ‘সোনালী আঁশ ঘিরে কেবলই সুখবর’। তাতে বলা হয়েছে, বছর তিনেক আগে দেশীয় বিজ্ঞানীরা তোষা পাটের জেনম সিকোয়েন্স বা জন্মরহস্য আবিষ্কার করেন। এ বছর আগস্টে আবিষ্কার করেন দেশি পাটের। সম্প্রতি আবিষ্কার করেছেন পাটের প্রধান শত্রু ছত্রাকের জেনম সিকোয়েন্স।

বিজ্ঞানীরা এখন হাত দিয়েছেন রোগ প্রতিরোধী ও জলবায়ু সয়া নতুন জাতের পাট আবিষ্কারের কাজে। এটি দেশে তো বটেই, সারা বিশ্বেই পাট চাষে যুগান্তকারী সাফল্য আনবে। এই কাজ যারা করেছেন সেই বিজ্ঞানীরা বলেছেন, তারা এখন কাঙ্ক্ষিত পাট বীজ উদ্ভাবনে হাত দিয়েছেন। পাট ও ছত্রাকের জেনমকে কাজে লাগিয়ে গবেষণা করছেন কিভাবে জলবায়ু সহিষ্ণু রোগ প্রতিরোধী উচ্চ ফলনশীল পাটের জাত উদ্ভাবন করা যায়। এই কাজে পাটের মৌলিক ও ফলিত গবেষণা চলছে। তাদের আশা গবেষণার সাফল্যে পাটের হারিয়ে যাওয়া গৌরব ফিরিয়ে আনা যাবে। বিশ্বে আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে পাটশিল্প। ইতোমধ্যে পাট ও ছত্রাকের জেনম থেকে পাওয়া তথ্য পেটেন্টের জন্য ৫টি আবেদন পাঠানো হয়েছে। বিজ্ঞানীদের গবেষণায় সাফল্য পেতে বছর পাঁচেক সময় লাগবে। সাফল্যের পরে কৃষকরা কম খরচে পাট চাষ করতে পারবে। উপরন্তু নতুন জাতের পাট হবে উন্নত মানের দ্রুত উৎপাদনশীল ও অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন আগাছা দমন এবং প্রতিকূল পরিবেশ যেমন- বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি প্রভৃতি মোকাবেলার যোগ্যতাসম্পন্ন।

পাটের উৎপাদন বর্তমানে হেক্টর প্রতি দুই টনের স্থানে দাঁড়াবে ৩ টনে। এছাড়া আগাম চাষ, লবণ পানিতে পাট চাষের গবেষণাও চলছে।

নতুন পাটবীজ, পাটচাষ ও এই শিল্প বিকাশে এক অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে এমনটি আশা করছেন গবেষণা কাজে জড়িতরা।

পুরো বিষয়টি রয়েছে সম্ভাবনার পর্যায়ে। সাফল্যের জন্য এখন অপেক্ষা। বিজ্ঞানীরা সফল হবেন এটাই আমাদের বিশ্বাস।

গবেষকদের প্রাপ্ত সাফল্যে পুরো দেশবাসীর সঙ্গে আমরাও গর্বিত ও আশাবাদী। কিন্তু আমাদের দ্বিধা-প্রাপ্ত এবং আগত সাফল্যে পাটশিল্পে বৈপ্লবিক কোনো পরিবর্তন আসবে কিনা তা নিয়ে। এজন্যই বলছি, বিজ্ঞানীদের বর্তমান আবিষ্কার ও আগামীর কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের বহু পূর্বে আমাদের পাটশিল্পের স্বর্ণযুগ ছিল। যা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। সেটা নিশ্চয়ই পাটবীজ বা ক্ষতিকর ছত্রাকের কারণে নয়।

পাটের সোনালী যুগ ফিরিয়ে আনতে হলে যে যে কারণগুলো আমাদের পাটশিল্পকে ধ্বংস করে দিয়েছে সেগুলোকে আগে দূর করতে হবে। শুধুমাত্র উন্নত বীজ উদ্ভাবন করলেই পাটের সোনালী দিন ফিরে আসবে না। মূলত পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য গবেষণার পাশাপাশি পাটশিল্পের প্রতিকূল আবহাওয়া দূর করতে হবে।

পাটের প্রচলিত ব্যবহারের সঙ্গে যাতে পাটের আঁশ তুলা বা কৃত্রিম তন্তুর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়, সেই গবেষণায় রাষ্ট্র এবং গবেষকদের উৎসাহিত হতে হবে। বস্ত্রখাতে পাট ব্যবহার করা গেলে পাটই আমাদের সমৃদ্ধির দরজা খুলে দিতে পারে।

এ প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার, যেকারণে পাট স্বর্ণসূত্র বা সোনালী আঁশ তা হলো বন্যার স্বচ্ছ পানিতে পাট জাগ দেওয়া। বন্যা নিয়ন্ত্রণে আমরা আমাদের প্রকৃতিবান্ধব স্বাভাবিক বন্যাকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছি। যেকারণে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে পাট চাষীরা পড়ছে বিপাকে। ফলে পাটের কাঙ্ক্ষিত সোনালী রং বিকৃত হচ্ছে। প্রাকৃতিক দূষণ ঘটছে। মৎস্য সম্পদসহ জলজ অনেক জীববৈচিত্র নষ্ট হচ্ছে। পাটের স্বর্ণ যুগ ফিরিয়ে আনতে হলে এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা দরকার। সবকিছু মিলিয়ে আগে দরকার পাট নিয়ে জাতীয় নীতি গ্রহণ । এটা না হলে কোনো আবিষ্কারই কাঙ্ক্ষিত ফল বয়ে আনবে না।

পাঠকের মতামত:

SMS Alert