thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১,  ২১ জমাদিউস সানি 1446

পুঁজিবাজারে মহাধসের তিন বছর

২০১৩ ডিসেম্বর ০৬ ১৭:০৩:৩৭
পুঁজিবাজারে মহাধসের তিন বছর

নূরুজ্জামান তানিম, দ্য রিপোর্ট: পুঁজিবাজারের মহাধসের তিন বছর ৬ ডিসেম্বর। পুঁজিবাজারের ইতিহাসের ‘কালো’ অধ্যায়। বিগত ২০০৮ ও ২০০৯ সালে পুঁজিবাজার সংঘটিত বিভিন্ন অস্বাভাবিক ঘটনায় সৃষ্টি হওয়া বুদবুদ, ২০১০ সালের এ দিনেই বিস্ফোরিত হয়েছিল। এদিন থেকেই সূচকের ধারাবাহিক পতন শুরু হয় এবং ডেকে আনে মহাধস। যার ক্ষত এখনো শুকায়নি। অদৃশ্য এ ক্ষত এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন দেশের লাখো বিনিয়োগকারী ও তাদের পরিবার। আবার এ ঘটনায় ছয়জন বিনিয়োগকারী আত্মাহুতি দিয়েছেন এবং তিনজন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

২০১০ সালের ৬ ও ৭ ডিসেম্বর চেক ও নিটিংয়ের বিষয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক তৎকালীন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) সদস্য মনসুর আলম দুটি নির্দেশনা জারি করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে ৮ ডিসেম্বর এক ঘণ্টা লেনদেনে ভয়াবহ পতন ঘটে। ওইদিন থেকেই শেয়ারবাজারে বড় ধরনের উত্থান-পতনের শুরু। পরবর্তীতে ১৯ ডিসেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ সূচক ৫৫১ পয়েন্ট হ্রাস পেয়ে রেকর্ড গড়ে। তবে ২০১০ সালের সূচক পতনের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায় ২০১১ সালের জানুয়ারিতে। ৯ জানুয়ারি ৬০০ পয়েন্ট ও ১০ জানুয়ারি ৬৩৫ পয়েন্টের পতন হয়, যা ডিএসইর ইতিহাসে সূচক পতনে সবচেয়ে বড় রেকর্ড। তবে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি ডিএসইর সাধারণ সূচক ১ হাজার ১২ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়, যা ডিএসইর ইতিহাসে রেকর্ড। এছাড়া ২০১১ সালের ২০ জানুয়ারি ডিএসইর সাধারণ মূল্য সূচক মাত্র পাঁচ মিনিটের মাথায় ৫৮৭ পয়েন্ট কমে যায় এবং লেনদেন হয় ৬৮ কোটি টাকা। এমন পরিস্থিতিতে দিনের বাকি সময় লেনদেন স্থগিত ঘোষণা করা হয়।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ৬ ডিসেম্বর বিও হিসাবের বিপরীতে চেক (ক্যাশ ও অ্যাকাউন্ট-পে) জমা দিয়েই শেয়ার ক্রয়ের সুযোগ বন্ধ করে নির্দেশনা জারি করে বিএসইসি। নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়, চেকের বিপরীতে টাকা বিও হিসাবে জমা হওয়ার পরই কেবল একজন বিনিয়োগকারী শেয়ার কিনতে পারবেন। পরের দিন ৭ ডিসেম্বর এর প্রভাবে বাজারে দরপতন ঘটে। এ দিনেও একটি নির্দেশনা জারি করে বিএসইসি। তাতে বলা হয়, কোনো বিনিয়োগকারী হাতে থাকা শেয়ার আগে বিক্রি না করে সমপরিমাণ টাকা দিয়ে অন্য কোনো শেয়ার কিনতে পারবে না। আগে এ নিয়ম বলবৎ থাকলেও নিয়মটি পরিপালনে কঠোর ছিল না নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

এ দুটি নির্দেশনার প্রভাবে পরের দিন ৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় মহাধস। এদিন ডিএসইতে সূচকের পতন শুরু হলে মাত্র এক ঘন্টার মাথায় এসইসি আগের দুটি নির্দেশনা প্রত্যাহার করে নেয়। এরপরের দুই ঘন্টায় ডিএসইর সূচক বৃদ্ধি পায়। কিন্তু দিন শেষে পতনেই রয়ে যায় সূচক। এ সময় বিনিয়োগকারীরা এই দরপতনের প্রতিবাদে রাজধানীর মতিঝিল বিক্ষোভ শুরু করেন। গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ধারাবাহিক দরপতনের কারণে পুলিশের সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের সংঘর্ষ নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়। বর্তমানে মতিঝিলের সংঘর্ষ বা বিক্ষোভ থেমে গেলেও বাজার এখনও স্থিতিশীল হয়নি।

তবে এ বাজার থেকে কেউ কেউ আবার আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন।কিন্তু ২০১০ সালের ভয়াবহ ধসে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকেই এখনও পুঁজি ফিরে পাননি। কেউ ঋণ পরিশোধ করে নিঃস্ব হয়েছেন। আবার কেউ ঋণ পরিশোধ করেও ঋণগ্রস্ত আছেন।

পরবর্তীতে ২০১০ সালের ডিসেম্বরের ভয়াবহ পতনের ঘটনা অনুসন্ধানে সাবেক কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সাবেক বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। ২৬ জানুয়ারি গঠিত এ কমিটি ৭ এপ্রিল একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় অর্থমন্ত্রীর কাছে। তদন্তে বেরিয়ে আসে অনেক রাঘব বোয়ালের নাম। ৩০ এপ্রিল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তদন্ত প্রতিবেদনটি জনসম্মুখে প্রকাশ করেন। তবে কারসাজির সঙ্গে জড়িত দু’একজনকে শাস্তির আওতায় আনা হলেও রাঘব বোয়ালদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনার কাজটি হয়নি।

মহাধসে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বিনিয়োগকারী কামরুজ্জামান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘২০১০ সালের সেপ্টেম্বর শেয়ারবাজারে ১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি। ওই বিনিয়োগের উদ্দেশ্য ছিল দীর্ঘ সময় পর্যন্ত রাখা। হঠাৎ ডিসেম্বর থেকেই বাজার পড়তে শুরু করে। পতনের মাত্রা এত প্রকট ছিল, যা মহাধসে পরিণত হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ১২ লাখ টাকার শেয়ার ৩ লাখ টাকায় পরিণত হয়। বাজার ওই ধাক্কা এখনও সামলে উঠতে পারেনি। এ বাজার যা দিয়েছে তার চেয়ে কেড়ে নিয়েছে অনেক।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সাবেক সভাপতি ফখর উদ্দিন আলী আহমেদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘২০১০ সালের এ দিনে শেয়ারবাজার বিস্ফোরিত হয়েছিল। এ মহাধসে দেশের লাখো বিনিয়োগকারী ও তাদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ক্ষতি অপূরণীয়। ওই সময় যে সকল বিনিয়োগকারী ঋণ নিয়েছিলেন তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেক তাজা প্রাণ চলে গেছে। ওই ঘটনা থেকে সকল স্টেকহোল্ডার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বিনিয়োগকারীদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।’

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/এস/এসবি/ডিসেম্বর ০৬, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর