আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টি ৬১ আসনে রফা!

আমানউল্লাহ আমান, দ্য রিপোর্ট : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ঘোষণা দিয়েছিলেন যে তার দল নির্বাচনে অংশ নেবে না। এরশাদের এমন ঘোষণার পর রাজনীতিতে অনেকটা নাটকীয় পরিবর্তন আসলেও ৬১টি আসনের বিনিময়েই জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে আনতে রফা হয়েছে আওয়ামী লীগের।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারী বাস ভবন গণভবনে বুধবার রাতে আসন বণ্টন সংক্রান্ত বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই রফা হয়েছে বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা দ্য রিপোর্টকে নিশ্চিত করেছেন।

গত ৫ ডিসেম্বর মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ার শেষ দিনে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর ঘোষণা দেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। এরপর থেকে জাতীয় পার্টির নির্বাচনে অংশ নেয়া না নেয়ার বিষয়ে শুরু হয় নানা জ্বলপনা-কল্পনা। তবে এরশাদ প্রতিদিন সাংবাদিকদের নিজের অবস্থানে অনড় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দেওয়া মন্ত্রীদের পদত্যাগ ও একই সঙ্গে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেন পার্টির চেয়ারম্যান।

জাতীয় পার্টির প্রবীন নেতা কাজী জাফর আহমদ অভিযোগ করে বলেন, এরশাদ পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব রওশন এরশাদকে দিয়ে চিকিৎসার নামে দেশ ছেড়ে চলে যাবেন। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে। কাজী জাফর আহমদের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এরশাদ বলেছিলেন, বিভ্রান্তি ছড়িয়ে লাভ নেই নিজের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছি।

জানা গেছে, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভীসহ শীর্ষনেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী।

এরপর রাত ৮টার দিকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, কার্যকরী সভাপতি মাঈনুদ্দিন খান বাদল, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন উপস্থিত হন। এর ১০ মিনিট পরেই নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুও উপস্থিত হন। তবে রাশেদ খান মেনন বৈঠক চলাকালেই গণভবন ত্যাগ করেন বলে জানা যায়।

জাতীয় পার্টির ৬১টি আসনের মধ্যে যে গুলো রয়েছে: ঠাকুরগাওঁ ৩- হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, নীলফামারী ৩-কাজী ফারুক কাদের, নীলফামারী ৪-আলহাজ্ব শওকত চৌধুরী, লালমনিরহাট ৩-গোলাম মোহাম্মদ কাদের, রংপুর ১- মশিউর রহমান রাঙ্গা, রংপুর ২-মো: আসাদুজ্জামান চৌধুরী, রংপুর ৩-হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, কুড়িগ্রাম ১-এ.কে.এম মোস্তাফিজুর রহমান, কুড়িগ্রাম ২-মোঃ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, কুড়িগ্রাম ৩-এ.কে.এম মাইদুল ইসলাম, গাইবান্ধা ২-আব্দুর রশিদ সরকার, গাইবান্ধা ৩-ব্যারিষ্টার দিলারা খন্দকার, জয়পুরহাট ১-আ.স.ম মোক্তাদির তিতাস মোস্তফা, বগুড়া ২-শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, বগুড়া ৩-এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম তালুকদার, বগুড়া ৪-মোঃ নূরুল আমিন বাচ্চু, বগুড়া ৬-মোঃ নূরুল ইসলাম ওমর, খুলনা ১-সুনীল শুভরায়, সাতক্ষীরা ২-এম.এ. জব্বার, সাতক্ষীরা ৪-আব্দুস সাত্তার মোড়ল, বরিশাল ৩-গোলাম কিবরিয়া টিপু, বরিশাল ৪- নাসির উদ্দিন সাথী, টাঙ্গাইল ৫-মোঃ আব্দুস সালাম চাকলাদার, জামালপুর ৪-ইঞ্জিনিয়ার মামুনুর রশীদ, ময়মনসিংহ ৪-বেগম রওশন এরশাদ, ময়মনসিংহ ৫-সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি, ময়মনসিংহ ৭-এম. এ. হান্নান, ময়মনসিংহ ৮-ফখরুল ইমাম, কিশোরগঞ্জ ৩-মোঃ মজিবুল হক চুন্নু, ঢাকা ১-এ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, ঢাকা ৪-সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ঢাকা ৬-কাজী ফিরোজ রশীদ, নারায়নগঞ্জ ৩-লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়নগঞ্জ ৫-নাসিম ওসমান, সুনামগঞ্জ ৪-পীর ফজলুর রহমান এ্যাডভোকেট, সিলেট ২-মোঃ ইয়াহইয়া চৌধুরী, সিলেট ৫-সাব্বির আহমেদ, মৌলভীবাজার ২- নবাব আব্বাস আলী খান, হবিগঞ্জ ১-মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম চৌধুরী (বাবু), ব্রাহ্মনবাড়িয়া ২-এ্যাড. জিয়াউল হক মৃধা এম.পি, ব্রাহ্মনবাড়িয়া ৩-এ্যাড. মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, ফেনী ৩-রিন্টু আনোয়ার।

গণভবন সূত্রে জানা যায়, জাতীয় পার্টি এবং জেপি (মঞ্জু) ছাড়া মহাজোটের অন্য শরীকরা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়বেন। তবে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মত এবারের নির্বাচনেও উন্মুক্ত থাকছে কিছু আসন।

(দ্য রিপোর্ট/এইউএ/এআইএম/ডিসেম্বর ১২, ২০১৩)