thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউস সানি 1446

ফেসবুকে পুলিশ বিদ্রোহের প্রচারণা

২০১৩ ডিসেম্বর ১৩ ২২:৩৭:৪২
ফেসবুকে পুলিশ বিদ্রোহের প্রচারণা

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক অপপ্রচার চলছে। ‘পুলিশ বিদ্রোহ হতে পারে’ শিরোনাম উল্লেখ্য করে সংবাদ প্রকাশের আদলে এ প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

বাংলাদেশ পুলিশের ব্যানারে ফেসবুক পেজের ওয়ালে যুদ্ধাপরাধীর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার জানাজার তথ্য দেওয়া হয়েছে। এমনকি রয়েছে পুলিশের আইজপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের ছবি সম্বলিত ব্যঙ্গচিত্র। এমন উষ্কানিমূলক প্রচারণা ছাড়াও পুলিশ একটি দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে চলছে অপপ্রচার। বাংলাদেশ পুলিশের ব্যানারে তৈরি একাধিক ফেসবুক থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে পুলিশ সদর দফতরের কেউ জানেন না বাংলাদেশ পুলিশের লোগো ও নাম ব্যবহার করে পুলিশ এবং দেশের বিশেষ ব্যক্তিদের নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রচারণা চলছে। পুলিশের আইটি ও সাইবার ক্রাইম সংশ্লিষ্টরা এ পেজেগুলো নিয়ে কখনো কাজ করেননি। পুলিশের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে কখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অফিসার কামরুল আহসান দ্য রিপোর্টকে বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের কোনো ফেসবুক পেজ নেই। যদি কোনো পেজে পুলিশ নিয়ে মিথ্যা পোস্ট দেওয়া হয়- তা অবশ্যই পুলিশ সদর দফতরের তথ্য ও প্রযুক্তি শাখা থেকে খতিয়ে দেখা হবে। ‘BangladeshPoliceCrime নামক ফেসবুকের একটি পেজের ওয়ালে পোস্ট দেওয়া হয়েছে, ‘রাজশাহীতে শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার জানাজায় হাজারো জনতার ঢল। কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে বাতাস। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় মসজিদ চত্বরে বিপুলসংখ্যক তৌহিদী জনতার উপস্থিতিতে শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।’প্রতিমহূর্তেই ফেসবুকের এ পেজে নতুন নতুন পোস্ট দেওয়া হচ্ছে। পেজটি ফেসবুকপ্রেমী ৬৪ হাজার ২৩৭ জনের পছন্দের এবং ৪৬ হাজার ৭৭৫ জন পোস্ট দেখেন।

এ প্রতিবেদক তার ফেসবুকে পুলিশ সংক্রান্ত পোস্ট দেখার পর বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া যায়। এ প্রতিবেদক BangladeshPolice Facebook’ লিখে সার্চ দিতেই শতাধিক পেজের লিংক কম্পিউটারের স্কিনে ভেসে ওঠে। পুলিশের লোগো এবং নাম ব্যবহার করে এসব আইডি খুলে ফেসবুকে পুলিশেরই বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বেশি অপপ্রচার চালানো হচ্ছে- facebook.com/bangladeshpolicehq?filter=2, facebook.com/hatebdpolice,

facebook.com/bangladeshpolicehq?filter=1

https://www.facebook.com/BangladeshPoliceLigএই পেজ থেকে। এখানে ২৭ নভেম্বর ১০টা ৪১ মিনিটে একটি পোস্টের শিরোনাম ছিল- ‘পুলিশে বিদ্রোহ হতে পারে’। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের আদলে পোস্টিতে বলা হয়, ‘অস্বস্তিতে ভুগছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে পারছেন না রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের কারণে। সন্দেহ ও অবিশ্বাসের দোলাচলে সময় পার করছেন তারা। ঢাকা মহানগর পুলিশ হেড কোয়ার্টার ও গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্রমতে, রাজধানীর রাজনৈতিক সহিংসতা দমনের জন্য কঠোর অবস্থানে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এক্ষেত্রে সারা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমলে নিচ্ছেন না পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্তা-ব্যক্তিরা। বরং ঢাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতেই তারা ব্যস্ত। সেই মোতাবেক সরকারের তরফ থেকে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ে কঠোর নজরদারি শুরু হয়েছে। সরকারের স্পর্শকাতর বিভাগসমূহে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর সরকারের কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা নজরদারি শুরু করেছে। আরোপিত দায়িত্ব পালনে বিরত থাকার তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনারকে প্রত্যাহার করে খাগড়াছড়িতে পাঠানো হয়েছে। অনেক কর্মকর্তা রুটিন কাজ বাদ দিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, পেশাদারিত্ব বজায় রেখে দায়িত্ব পালন সত্ত্বেও একে অপরের প্রতি অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। এছাড়া অনেক কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। এরপর থেকেই পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা অস্বস্তির মধ্যে পড়েছেন।’

Bangladesh Police (বাংলাদেশ পুলিশ) এ গত ১১ ডিসেম্বর মোবাইলের মাধ্যমে একটি পোস্টে বলা হয়, ‘পুলিশকে গালি দিয়ে যাদের ঘুম ভাঙে, আবার রাতে ঘুমানোর আগে গালি দেন, তারা জেনে রাখুন, পুলিশ যদি একদিন কর্মবিরতি দেয়, ডিউটি না করে, তবে পরদিন পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক দেশটি আর খুঁজিয়া পাওয়া যাবে না।’এধরনের অনেক উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের লোগো ব্যবহৃত ফেসবুকের ওয়ালে রঙ বেরঙের পোস্ট দেখা যায়। পুলিশ ও দেশের বিশেষ ব্যক্তিদের ছবি সম্বলিত এমন কিছু তথ্য এবং কথা বলা হচ্ছে যা গণমাধ্যমে প্রকাশ করা রুচিসম্মত নয়।

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের এডিশন্যাল ডিআইজি গোলাম কিবরিয়া দ্য রিপোর্টকে বলেন, বাংলাদেশে পুলিশের নিজস্ব কোনো ফেসবুক নেই। যদি কেউ কোনো পেজে বাংলাদেশ পুলিশের ব্যানার ব্যবহার করে থাকে তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে। এ বিষয় আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের ব্যানারে শত শত ফেসবুক পেজ থাকার বিষয়টি জানা নেই।শনিবার অফিসে গিয়ে এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করা হবে। প্রয়োজনে প্রতিটি পেজ বন্ধ করা হবে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের লোগো ও ছবি সম্বলিত ফেসবুক পেজ ব্যবহার করা সাইবার ক্রাইম। দেশে সাইবার ক্রাইম দমনে সরকার কঠোর হলেও পুলিশ নিজেই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সাইবারক্রাইমের শিকার হচ্ছে। ২০০৬ সালে প্রণীত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে সাজার মেয়াদ ১০ বছর থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে এই আইনের অধীন কিছু কিছু অপরাধে জামিন অযোগ্য ও বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারের বিধান সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া আইনে সর্বনিম্ন শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে সাত বছর। অথচ সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে পুলিশ এখানো অন্ধকারে রয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/কেজেএন/এইচএসএম/ডিসেম্বর ১৩, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ আয়োজন এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ আয়োজন - এর সব খবর