thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ৬ মে 24, ২২ বৈশাখ ১৪৩১,  ২৭ শাওয়াল 1445

অনড় এরশাদ, ‘নাটক’ শেষে এমপিতে বশ নেতারা

২০১৩ ডিসেম্বর ১৫ ০০:২৬:৫৩
অনড় এরশাদ, ‘নাটক’ শেষে এমপিতে বশ নেতারা

নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে শেষ পর্যন্ত অনড়ই থাকলেন জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তবে শেষ সময়ে ‘এমপি পদ’ ও ‘অর্থের প্রলোভনে’ নির্বাচনে অংশ নিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতাদের একাংশ। এদের মধ্যে ১৮ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিতও হয়ে গেছেন।

এদিকে দিনভর নানা নাটকীয়তার পরও মুখ খুলেননি এরশাদের সহধর্মিনী রওশন এরশাদ। গণমাধ্যমের সামনে আসেননি মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার ও প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদের।

এরশাদের পক্ষে তারই বিশেষ উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজ শনিবার বলেন, ‘এরশাদ ও জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাচ্ছে না। জাপার নামে কেউ বিবৃতি বা বক্তব্য দিলে তা এরশাদ ও জাপার ভাষ্য বলে বিবেচিত হবে না।’

রওশন এরশাদের বাসায় শনিবার সকাল থেকেই বৈঠক করেছেন জাপার সরকার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমদু, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, তাজুল ইসলাম চৌধুরী। এছাড়া প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদকেও রওশন এরশাদের বাসভবন থেকে বের হতে দেখা গেছে।

শনিবার সকাল থেকে রওশন এরশাদের বাসভবনের সামনে অবস্থান করে দেখা গেছে, দুপুর ১২টার কিছু পরে বাসভবনে প্রবেশ করেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। এরপর প্রবেশ করেন কাজী ফিরোজ রশিদ ও তাজুল ইসলাম চৌধুরী। তখন বলা হয়, রওশন এরশাদ বিকেলে অবস্থান পরিষ্কার করবেন। দীর্ঘ বৈঠক শেষে বিকেল ৪টা পনের মিনিটে বাসা থেকে বের হন কাজী ফিরোজ রশিদ।

কাজী ফিরোজ রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

এর ৫ মিনিট পর বের হন ২০০৮ সালের নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করা জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য (দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত) তাজুল ইসলাম চৌধুরী।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেহেতু আমরা নির্বাচনে যাওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি ও প্রত্যাহার হয়নি। অতএব আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি।’

তাজুল ইসলাম চৌধুরী আরো বলেন, ‘আমরা বিদ্রোহী প্রার্থী না। আমরা এরশাদের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। এরশাদ সাহেব যেহেতু নির্বাচনে যাচ্ছেন না উনার বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নিবো।’

এরপরই বিকেল ৫টা ১২ মিনিটে এরশাদের বরাত দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন তার বিশেষ উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজ। তিনি বলেন, ‘আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য সংসদ নির্বাচনে এরশাদ অংশ নিবে না। জাতীয় পার্টিও যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমি নিজে এরশাদ স্যারের চিঠি নির্বাচন কমিশনে দিয়েছি যাতে, লাঙল প্রতীক প্রার্থীদের বরাদ্দ দেওয়া না হয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশন কেন তা আমলে নিলো না তা জানি না।’

গুলশান-২ এর ১১৩ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় জাপা রিসার্স অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি উইং এর কার্যালয়ে শনিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এরশাদ ও জাতীয় পার্টি নির্বাচন করবে না। আপাতত কেউ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হবেন না। পার্টি ও পার্টির চেয়ারম্যানের মুখপাত্রের দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে। দলের অন্য কারো বক্তব্য চেয়ারম্যানের ভাষ্য হবে না।’

জাপা সূত্রে জানা গেছে, ববির সংবাদ সম্মেলনের পর শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে জাপার একাংশের অনুরোধে রওশন এরশাদ তার বাসায় নির্বাচনের ব্যাপারে জাতীয় পার্টির অবস্থান পরিষ্কার করার কথা ছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কথা বলেননি রওশন।

তাজুল ইসলামসহ অন্যান্য নেতা যারা বলছেন জাপা নির্বাচনে যাবে তাদের ব্যাপারে ববি বলেন, ‘একমাত্র জিএম কাদের, মহাসচিব এবং আমি ছাড়া আর কারো ভাষ্য জাপা ও এরশাদের ভাষ্য বলে বিবেচিত হবে না।’

তিনি দাবি করেন, ‘‘অনেকে চাপের মুখে অনেকে কথা বলেন না। চাপ মানে ‘কাজের চাপ’ বলে তিনি চুপ হয়ে যান।’’

ববি হাজ্জাজের এ সংবাদ সম্মেলনটি বিকেল ৪টার দিকে হওয়ার কথা ছিলো। র‌্যাব-১ এর কিছু কর্মকর্তা ববিকে সাড়ে তিনটার দিকে তাদের কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখান থেকে তিনি ৫টার দিকে ফিরে আসেন।

এছাড়া সংবাদ সম্মেলনের পরপরই গুলশান থানার ওসি রফিকুল ইসলামকে ২০-২৫ জন পুলিশ নিয়ে ববির ভবনের পাশে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।

এদিকে দিনভর নির্বাচনের ব্যাপারে জাপা নেতারা নানা কথা বললেও নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, জাপা চেয়ারম্যান এরশাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশের পরও ৪৭টি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। এসব আসনের মধ্যে ১৮টিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিলে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হওয়ার সুযোগ পান জাপার ১৭ নেতা।

জাপার এরশাদপন্থী নেতাদেরই দাবি, প্রার্থীদের বেশির ভাগই সরকারের সঙ্গে গোপন ‘সমঝোতার’ মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচন হয়েছে এটা দেখানোর জন্য বাকি ৩০টি আসনে স্বতন্ত্র ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জাপা প্রার্থীরা।

জাপার একাধিক নেতার দাবি, অর্থ ও সহজে এমপি হওয়ার প্রলোভনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মধ্যে এরশাদের ছোটভাই জিএম কাদেরসহ একাংশ ছাড়া বেশিরভাগ প্রেসিডিয়াম সদস্যই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি।

এরশাদ, এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করলেও নির্বাচন কমিশন তা গ্রহণ করেনি। বাকিরা স্বেচ্ছায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি।

জাপা নেতাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদার দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ অনেক কথা বলার আছে। সবসময় সব কথা বলা যায় না, লেখা যায় না। তোমরা অপেক্ষা করো। একদিন সব বলবো।’

(দ্য রিপোর্ট/ সাআ/এইচএসএম/ডিসেম্বর ১৪, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ আয়োজন এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ আয়োজন - এর সব খবর