thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১,  ১৩ জমাদিউল আউয়াল 1446

দেওয়ান হাসন রাজা

২০১৩ ডিসেম্বর ২১ ০১:১৬:২৩
দেওয়ান হাসন রাজা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : দেওয়ান হাসন রাজার নাম বলার আগে আমাদের মনের মন্দিরায় বেজে ওঠে- ‘লোকে বলে বলে রে, ঘর বাড়ি ভালা নাই আমার, কি ঘর বানাইলাম আমি শূন্যেরই মাঝার’ ইত্যাদি গানের কলি। বাংলা গানের এই কিংবদন্তী রাজা ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সিলেট জেলার সুনামগঞ্জ শহরের লক্ষণশ্রী পরগণার তেঘরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

তার প্রকৃত নাম দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরী। হাসন রাজা জমিদার পরিবারের সন্তান ছিলেন। তার পিতা দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী ছিলেন প্রতাপশালী জমিদার। বাবার মৃত্যুকালে তার বয়স ছিলো ১৫ বছর। সেই বয়সে তার ওপর এসে পড়ে জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব। ফলে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা লাভ করতে পারেননি। তবে তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত। সিলেটে তখন আরবি-ফার্সি ভাষার চর্চা ছিল প্রবল। আরবি-ফার্সির পাশাপাশি বংশের রেওয়াজ অনুসারে প্রথমে সৈয়দপুর নিবাসী এক মৌলভি সাহেবের কাছে আরবি ভাষায় লিখিত কোরআন-উল-করিম ও কায়দায়ে বোগদাদি পাঠ শিক্ষা নেন। এছাড়াও হাসন রাজা একজন হিন্দু পণ্ডিতের কাছে বাংলা ভাষা শিক্ষা নিয়েছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তেমন না পেলেও স্বাভাবিক প্রতিভার বদৌলতে তিনি হিন্দি ও উর্দু ভাষাও কিছুটা আয়ত্ব করেছিলেন।

উত্তরাধিকার সূত্রে হাসন রাজা বিশাল ভূ-সম্পত্তির মালিক ছিলেন। প্রথম যৌবনে তিনি ছিলেন ভোগবিলাসী ও সৌখিন। প্রতি বছর বিশেষ করে বর্ষাকালে নৃত্য-গীতের ব্যবস্থাসহ তিনি নৌকায় চলে যেতেন ও বেশ কিছুকাল ভোগ-বিলাসের মধ্যে নিজেকে নিমজ্জিত করে দিতেন। এর মধ্যেই বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে তিনি প্রচুর গান রচনা করেছেন। নৃত্য ও বাদ্যযন্ত্রসহ এসব গান গাওয়া হতো। কিন্তু একটি আধ্যাত্মিক স্বপ্ন হাসন রাজার জীবন আমূল পরিবর্তন করে দিল। তার চরিত্রে এলো সৌম্যভাব। বিলাসপ্রিয় জীবন ত্যাগ করলেন। মগ্ন হলেন আল্লাহ্‌র প্রেমে। তার সকল ধ্যান-ধারণা গান হয়ে প্রকাশ পেতে লাগলো।

মরমী সাধনায় দর্শন চেতনার সঙ্গে সঙ্গীতের এক অসামান্য সংযোগ ঘটিয়েছেন তিনি। হাসন রাজা কতটি গান রচনা করেছেন তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি। 'হাছন উদাস' গ্রন্থে তার ২০৬টি গান সংকলিত হয়েছে। এর বাইরে আরো কিছু গান 'হাসন রাজার তিনপুরুষ' ও 'আল ইসলাহ্‌'সহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। অনুমান করা চলে, তার অনেক গান এখনো সিলেট-সুনামগঞ্জের লোকের মুখে মুখে আছে, কালের নিয়মে বেশ কিছু গান অবশ্য বিলুপ্তও হয়ে গেছে।

পদ্যছন্দে রচিত হাসনের আরেকটি গ্রন্থ হলো 'সৌখিন বাহার'। গ্রন্থটির আলোচ্য বিষয় স্ত্রীলোক, ঘোড়া ও কুড়া পাখির আকৃতি দেখে প্রকৃতি বিচার। 'হাছন বাহার' নামে তার আরো একটি গ্রন্থ কিছুকাল পূর্বে আবিষ্কৃত হয়েছে। হাসন রাজার কিছু হিন্দী গানেরও সন্ধান পাওয়া যায়। এছাড়া বাজারে হাসন রাজা সমগ্র পাওয়া যায়। তার কিছু গান ইংরেজিতেও অনুদিত হয়েছে।

এই মরমী গায়ক সুনামগঞ্জের লক্ষণশ্রীতে ১৯২২ সালের ৬ই ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। সেখানে তার মায়ের কবরের পাশেই তাকে কবর দেওয়া হয়। কবরটি তিনি মৃত্যুর পুর্বে নিজেই প্রস্তুত করে গিয়েছিলেন।

হাসন রাজার জীবনকে কেন্দ্র করে বরেণ্য পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম নির্মাণ করেছেন ‘হাসন রাজা’ নামের চলচ্চিত্র।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচও/এসকে/ডব্লিউএস/ডিসেম্বর ২১, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

এই দিনে এর সর্বশেষ খবর

এই দিনে - এর সব খবর