thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৮ জমাদিউল আউয়াল 1446

বড়দিন উদযাপনে প্রস্তুত চট্টগ্রাম

২০১৩ ডিসেম্বর ২২ ১৯:৪০:৫৬
বড়দিন উদযাপনে প্রস্তুত চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম সংবাদদাতা : দেশে চলমান সহিংসতা সত্ত্বেও প্রতি বছরের মতো এবারও বড়দিন উপলক্ষে সাজ সাজ রব পড়েছে চট্টগ্রামের গীর্জা ও খ্রিস্টান অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে। ইতোমধ্যে আলোকসজ্জা করা হয়েছে প্রায় সকল গীর্জায়। রাত জেগে চলছে সাজানোর কাজ। কাগজ কেটে কিংবা বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ বরাবরই করে থাকেন যুবকেরা।ক্রিসমাস ট্রি তো অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে রয়েছেই।

বড়দিন উপলক্ষে পুরো ডিসেম্বর মাস জুড়েই চলতে থাকে নানা কার্যক্রম। গীর্জাভেদে ভিন্নতা থাকে এ সব অনুষ্ঠানে। প্রায় সকল গীর্জা ও খ্রিস্টান সংগঠনগুলো প্রাক-বড়দিন উৎসবের আয়োজন করে থাকে। এ সব অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ হিসেবে থাকে উপহার বিনিময়, কেককাটা কিংবা ইনডোর খেলাধুলা। বাইবেল থেকে শিক্ষাদান, প্রশংসা-আরাধনা, বড়দিনের কীর্তন থেকে শুরু করে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান পথশিশু কিংবা বস্তির শিশুদের নিয়েও আয়োজন করে থাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের। এ সব অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য থাকে যীশু খ্রিস্টের বাণী সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়া।

শহর ছাড়িয়ে এখন গ্রামগুলোতেও চলছে বড়দিনের আমেজ। জৌলুস কম থাকলেও শহরের তুলনায় আনুষ্ঠানিকতায় পিছিয়ে নেই গ্রামের খ্রিস্টান পল্লীগুলো। বাংলাদেশে বড়দিনকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানের সংখ্যায় সবচেয়ে এগিয়ে চকরিয়ার মালুমঘাট। এখানকার অধিকাংশ ঘর-বাড়ি মাটির হওয়ায় ডিসেম্বরের শুরুতেই আরম্ভ হয় লেপা-মোছার কাজ। পাকা বাড়িগুলোতেও ঝাঁড়পোছ-সাজগোজের কাজ চলতে থাকে। প্রায় সব বাড়িতেই ‘তারা’ উত্তোলন করা হয়। পাঁচ কোনা আকৃতির তারার কাঠামোতে রঙিন কাগজ মুড়িয়ে আলোকসজ্জা করা হয় কিংবা শুধু বাতির মাধ্যমে কাঠামো সাজানো হয়। আর এই কাঠামো স্থাপন করা হয় বাড়ির আঙিনার কোনো খুঁটিতে বা উঁচু কোনো স্থানে। শহর কিংবা গ্রামের প্রায় সকল খ্রিস্টান বাড়িতে এটি উত্তোলিত হয়।

বাইবেল মতে, যীশু খ্রিস্টের জন্মের রাতে আকাশে সাধারণ সময়ের চেয়ে বড় আকৃতির ‘তারা’ দেখা যায়। যা যীশু খ্রিস্টের জন্মস্থান খুঁজে বের করতে পূর্বদেশের পণ্ডিতদের সাহায্য করেছিল। সেই ঘটনা স্মরণ করে ‘তারা’ উত্তোলন করা হয়। কোনো কোনো এলাকায় স্থানীয় সকল বয়সি শিল্পীদের অংশগ্রহণে আয়োজিত হয় সপ্তাহব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্থানীয়দের নির্দেশনা আর অভিনয়ে উপস্থাপিত হয় নাটক। সে সবের প্রস্তুতিও চলছে তোড়জোড়ে।

বাড়ি বাড়ি গিয়ে নেচে-গেয়ে বড়দিনের কীর্তন করা বাংলাদেশি খ্রিস্টান সমাজের রীতিতে পরিণত হয়েছে। কিছুদিন আগেও ঢোল, হারমোনিয়াম, করতাল কীর্তনের প্রধান অনুষঙ্গ ছিল। এখন অবশ্য গিটার ব্যবহার করতে দেখা যায়। গ্রামে কীর্তনের প্রচলন খুব বেশি, তবে শহরেও কীর্তন করা হয়। বাড়ি বাড়ি গিয়ে কীর্তন করতে চার-পাঁচ দিন লেগে যায়। সাধারণত, রাতের বেলা এই কীর্তন অনুষ্ঠিত হয়। তবে এবার দেশের পরিস্থিতির কথা বিবেচনায়শহরের অধিকাংশ গীর্জাই কীর্তন বাতিল করেছে।

চট্টগ্রাম ঐশিপ্রেম ব্যাপ্টিস্ট চার্চের পালক রেভারেন্ড থিওফিল এইচ চক্রবর্তী এ বিষয়ে জানান, নিরাপত্তাজনিত কারণে এ বছর কীর্তন করা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তা করা হচ্ছে না।

চট্টগ্রাম ধর্ম প্রদেশের সচিন মানিক ডি কস্তা জানান, বড়দিন উপলক্ষে প্রতি বছর বিভিন্ন সমাবেশের আয়োজন করা হলেও এ বছর তা করা সম্ভব হচ্ছে না।

দেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে উৎকণ্ঠা থাকলেও থেমে নেই উৎসবের আনন্দ। কিছু অনুষ্ঠানের সময় পরিবর্তন কিংবা হরতাল-অবরোধের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দিনক্ষণ ঠিক করতে হিমশিম খেলেও কারো আগ্রহে কমতি নেই।

ক্রিসমাস কার্ড বিনিময় শুরু হয়েছে আগেই। এখন বাড়ি ফেরা আর পুরনো বন্ধু, পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গে বড়দিনের আনন্দ ভাগাভাগি করতে মুখিয়ে আছেন অনেকেই।

(দ্য রিপোর্ট/এসপিপি/ডব্লিউএস/এসকে/ডিসেম্বর ২২, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর