thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১,  ১৩ জমাদিউল আউয়াল 1446

ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ সুলতান

২০১৩ ডিসেম্বর ২৪ ০১:৫৯:১৪
ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ সুলতান

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ভাষা সৈনিক ও রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ সুলতান ১৯২৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর তৎকালীন দিনাজপুর জেলার (বর্তমানে পঞ্চগড় জেলা) বোদা উপজেলার মাঝ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।

তার বাবা মোহাম্মদ শমসের আলী ছিলেন ব্রিটিশ পুলিশ বিভাগের ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ। সুলতান বাবা-মায়ের আট সন্তানের মধ্যে পঞ্চম। তিনি যশোর জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করেন। রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

সুলতান অল্প বয়সেই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতিতে আকৃষ্ট হন। ১৯৪৬ সালে পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনে সামিল হন। ১৯৪৮ সালে রাজশাহী ভাষা আন্দোলন ও ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫১ সালে তিনি যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন।

তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম কালো পতাকা উত্তোলনকারী ছাত্র। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর যে ১১ জন ছাত্রনেতা ফজলুল হক হলের পুকুর পাড়ের সিঁড়িতে বসে রাত্রি ১টায় ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মোহাম্মদ সুলতান ছিলেন তাদের অন্যতম। ১৯৫২ সালের শেষের দিকে ছাত্র ইউনিয়নের জন্ম হলে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন। একই সঙ্গে তিনি যুবলীগের যুগ্ম-সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন।

১৯৫৩ সালে মার্চ মাসে কবি হাসান হাফিজুর রহমানের সম্পাদনায় ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক সঙ্কলন ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ প্রকাশ করেন মোহাম্মদ সুলতান। প্রকাশনার কিছুদিনের মধ্যে মুসলিম লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার বইটি বাজেয়াপ্ত করে। ১৯৫৪ সালে ৯২(ক) ধারা প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সুলতানকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাকে বিনা বিচারে প্রায় এক বছর কারাগারে থাকতে হয়।

১৯৫৬ সালে যুবলীগ সম্পাদক ইমাদুল্লাহ মারা যান। এ সময় মোহাম্মদ সুলতানকে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ১৯৫৭ সালে ন্যাপের জন্মলগ্নেই ন্যাপ প্রাদেশিক কমিটির যুগ্ম-সম্পাদকের দায়িত্ব নেন তিনি। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি হলে মোহাম্মদ সুলতান আবারও গ্রেফতার হন। এ সময় তিনি বিনা বিচারে চার বছর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ছিলেন। ১৯৬৭ সালে ন্যাপ বিভক্তির পর তিনি মাওলানা ভাসানীর অংশের প্রাদেশিক কমিটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পাকিস্তান সরকার বিভিন্ন সময়ে তার নামে হুলিয়া জারি করে। তিনি আত্মগোপনে গিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অব্যহত রাখেন।

১৯৭০ সালে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে প্রকাশনা ব্যবসায় যুক্ত হন। তিনি প্রধানত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এম আর আখতার মুকুলের সঙ্গে পুস্তক প্রকাশনা এবং বিক্রয়কেন্দ্র ‘পুঁথিঘর’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্রকাশকদের সংগঠিত করে সৃজনশীল ও প্রগতিশীল সাহিত্য পুস্তক প্রকাশনার জন্য গঠনমূলক আন্দোলন গড়ে তোলেন। তিনি বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক সমিতির সহ-সভাপতি এবং বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য ছিলেন।

১৯৮৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে জুরাইন কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। ২০০৭ সালে তার স্মরণে ঢাকার ধানমন্ডি ৩ নম্বর সড়ক ভাষাসৈনিক মোহাম্মদ সুলতান সড়ক হিসেবে নামকরণ করা হয়।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/ডিসেম্বর ২৪, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

এই দিনে এর সর্বশেষ খবর

এই দিনে - এর সব খবর