thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ২০ জানুয়ারি 25, ৭ মাঘ ১৪৩১,  ২০ রজব 1446

রংপুরে আলু চাষিদের মুখে হাসির ঝিলিক

২০১৩ ডিসেম্বর ২৬ ০৫:০০:৩৯
রংপুরে আলু চাষিদের মুখে হাসির ঝিলিক

এস এম জাকির হুসাইন, রংপুর : রংপুরের ৮ জেলাসহ উত্তরাঞ্চলের মাঠে মাঠে এখন প্রায় আড়াই লাখ হেক্টর জমিতে সবুজ আলু গাছের নাচন। মৌসুমের শুরু থেকেই আবহাওয়া আলু আবাদের উপযোগী থাকায় কৃষাণ-কৃষাণীর মুখে হাসির ঝিলিক দেখা যাচ্ছে। কৃষি বিশেষজ্ঞ ও কৃষকরা বলছেন, এই আবহাওয়া অব্যাহত থাকলে এবার আলুতে লেট ব্রাইটসহ অন্য কোনো রোগবালাই হওয়ার আশঙ্কা নেই। এবারো সারাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ জমিতে আলু চাষ হচ্ছে রংপুর জেলায়। বিগত দুই বছরে সফলতার ধারবাহিকতায় এবারো উত্তরাঞ্চলের চাষিরা আলু আবাদে ঝুঁকে পড়েছেন ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে।

আঞ্চলিক কৃষি অফিস রংপুর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রংপুর বিভাগে ১ লাখ ২৪ হাজার ৩২৫ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের ৮ জেলায় আলুর আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। এবারো সর্বোচ্চ পরিমাণ আলু আবাদ করেছেন রংপুর জেলার চাষিরা। এই জেলায় এবার ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ৫৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে। এবার উত্তরের ৮ জেলায় ২৬ লাখ ২৫ হাজার টন আলু উৎপাদন হওয়ার কথা রয়েছে। আলু তোলার মৌসুমেই ১৫ টাকা কেজি নিশ্চিত করা গেলে যার বাজার মূল্য ২৫ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার উপরে হবে বলে এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে।

রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে এখন বাড়ন্ত আলু গাছের সবুজ ডগার নাচন। আলু গাছের বয়স ২৫ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে বিরাজ করছে। মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, আলু নিয়ে এবার বেশ উচ্ছ্বসিত ভাব কৃষকদের মধ্যে। পরিচর্চা নিয়ে ব্যস্ত কৃষাণ-কৃষাণীরা। তাদের মুখে হাসির ঝিলিক।

রংপুরের পীরগাছার কল্যাণী ইউনিয়নের নব্দীগঞ্জ এলাকার শহিদার রহমান জানান, এবার সোয়া ৮ একর জমিতে আলুর চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার আলুতে রোগবালাই নেই। আমরা স্বাভাবিক স্প্রে ও পরিচর্যা করছি। আল্লাহ সহায় থাকলে সামনের দিনগুলোতে যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তবে এবার আলুর ফলন অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। তবে এবার আলুর দাম নিয়ে আমরা বরাবরের মতোই শঙ্কিত। কারণ দাম এই ভালো, আবার মন্দা।

রংপুর সদর উপজেলার রাজেন্দ্রপুর ইউনিয়নের কাইন্নদেবপুর গ্রামের আলু চাষি মজিবার, হরিদেবপুর ইউনিয়নের হাজিরহাট এলাকার বিনয়, রতিরামপুর গ্রামের আকমল হোসেন, গোকলপুর গ্রামের আবুল হোসেন জানান, আলুতে এখন পর্যন্ত রোগবালাই নেই। আমরা আলু নিয়ে এবার খুব আশাবাদী। এখন শুধু দামটা ঠিকঠাক থাকলেই হয়। মিঠাপুকুর উপজেলার লতিবপুর ইউনিয়নের মঞ্জু রহমান জানিয়েছেন, এবার তার ইউনিয়নে বিগত দিনের চেয়ে বেশি আলু আবাদ হয়েছে। আলুর অবস্থা এখন পর্যন্ত ভালো। তাই চাষিরা বেজায় খুশি।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের পূর্ব বৈদনাথ ইউনিয়নের আলু চাষি হাফিয়ার রহমান তিন বিঘা জমিতে আলু আবাদ করেছেন। আগের বছর আলুপাতা মোড়া, আর্লি ব্রাইটসহ বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই হয়েছিল। শেষদিকে দাম না থাকায় স্টোর থেকে আলু উত্তোলন করতে পারেননি। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত এমন রোগবালাই নেই। তবে সার ও কীটনাশক নিয়ে বিপাকে আছেন বলে তিনি জানান।

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার গাড়াগ্রাম, বাহাগিলী ইউনিয়নের কয়েকজন কৃষক জানান, তাদের ইউনিয়নে আলু চাষের ধুম পড়ে গেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এখন পর্যন্ত কোনো রোগবালাই নেই। চাষিরা আলু আবাদ করে এবার দাম ঠিকঠাক পেলে অনেক বেশি লাভবান হবেন।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য : রংপুরের বুড়িরহাট কৃষি গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা দ্য রিপোর্টকে জানান, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করলে আলু চাষের জন্য ভালো। আলু আবাদের শুরুতেই শীত বেশি থাকলে তাপমাত্রা কমে যায় এবং এই অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত থাকায় এখন পর্যন্ত আলু আবাদের অবস্থা খুবই ভালো। তিনি বলেন, এই আবহাওয়া গোটা জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির মাঝামঝি পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে আশা করা যায় ষোলআনা ফলন ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা।

আশঙ্কার কথা : ওই কৃষি বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, যদি জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে, দিনে গরম এবং রাতে ঠাণ্ডা অনুভব হয়, পশ্চিমা বা পুবাল হাওয়া বেশি বইতে থাকে তবে আলুতে পচন বা লেট ব্রাইট রোগ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। আর সেটা হলে বিপর্যয় আসা স্বাভাবিক।

কৃষকদের করণীয় : তিনি আরও জানান, এখন যেসব আলু গাছের বয়স ৩০ দিনের নিচে। সেসব জমিতে বেশি শীত হলে ছত্রাকনাশক ব্যবহার করলেই উপকার পাওয়া যাবে। আর যেসব আলু গাছের বয়স ৩০ দিনের উপরে সেসব জমিতে ৭৫ দিন পর্যন্ত আবহাওয়ার তারতম্য ঘটলে পচন দেখা দেয়ার আশঙ্কা বেশি। সেগুলোতে ম্যাটাসিক্সটকস জাতীয় পচন রোধক ব্যবহার করলে পচন রোধ করা সম্ভব হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ রংপুর আঞ্চলিক অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক সাখাওয়াত হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, এবার এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আর্লিব্রাইটসহ অন্যকোনো রোগ আলুর জমিতে দেখা দেয়নি। লেট ব্রাইট হওয়ার তো কোনো প্রশ্নই আসে না। তবুও কৃষি বিভাগের লোকজনকে আলুর ব্যাপারে নিবিড় তত্ত্বাবধায়ন করার নির্দেশ দিয়েছি। কৃষকরা স্বাভাবিকভাবে ওষুধ স্প্রেসহ পরিচর্যা করছেন। তিনি জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার এই অঞ্চলে আলুর বাম্পার ফলন হবে।

রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ফিরোজ আহমেদ জানান, আলুর বীজ, সার ও কীটনাশক পর্যাপ্ত রয়েছে। সার বিতরণে ডিলারদের নজরে রাখা হয়েছে। কোথাও কোনো অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলে যাচাই সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হরতাল-অবরোধের কারণে কৃষকদের সার, কীটনাশক ও আলুবীজ আনা-নেওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে তা কোনো প্রভাব ফেলবে না।

(দ্য রিপোর্ট/এসএমজে /এএস/লতিফ/ডিসেম্বর ২৬, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর